যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টা

‘মার্কিন ব্র্যান্ড এখন টয়লেটে চলে গেছে’

ভারতের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের উচ্চ শুল্ক আরোপের তীব্র সমালোচনা করেছেন হোয়াইট হাউসের সাবেক এক কর্মকর্তা। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপে ‌‌‘‘আমেরিকান ব্র্যান্ডের’’ সুনাম নষ্ট হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এই অভিযোগ করে বলেছেন, এসব শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রকে অবিশ্বস্ত করে তুলছে এবং চীনকে তুলনামূলক ‘‘আরও দায়িত্বশীল’’ হিসেবে হাজির করছে।

মার্কিন রাজনৈতিক ভাষ্যকার টিম মিলারের দ্য বালওয়ার্ক পডকাস্টে সুলিভান বলেছেন, বর্তমানে বহু দেশে জনপ্রিয়তার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িয়ে গেছে চীন। এক বছর আগেও এরকম ছিল না। এখন দেশগুলো বলছে, আমেরিকার ব্র্যান্ড এখন টয়লেটে চলে গেছে এবং চীনকে অনেক বেশি দায়িত্বশীল খেলোয়াড়ের মতো মনে হচ্ছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করেছেন ট্রাম্প। নয়াদিল্লি অন্যায্য বাণিজ্যনীতি অনুসরণ এবং রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি বন্ধ করছে না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

তবে আসল উদ্দেশ্য বাণিজ্যিক ভারসাম্য রক্ষা নয়, বরং পাকিস্তানের সঙ্গে সাম্প্রতিক সংঘাতে মধ্যস্থতা করা নিয়ে ট্রাম্পের দাবি ভারত অস্বীকার করায় দেশটিকে সাজা দেওয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনে নীতি বিষয়ক পরিচালক হিসেবে কাজ করা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, এ ধরনের শুল্কে ভারত আরও ঘনিষ্ঠভাবে চীনের দিকে ঝুঁকতে পারে।

তিনি বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে আরও গভীর ও টেকসই সম্পর্ক গড়ে তুলতে কাজ করছিলাম, যেখানে চীনের চ্যালেঞ্জ বড় হয়ে উঠছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক বাণিজ্যিক আক্রমণ চালিয়েছেন। আর ভারতীয়রা বলছে, হয়তো আমাদের বেইজিংয়ে গিয়ে চীনাদের সঙ্গে বসতে হবে। কারণ আমেরিকার বিরুদ্ধে বিকল্প দরকার।

তার মতে, ট্রাম্পের এসব পদক্ষেপের ফলে এখন মার্কিন মিত্ররা ওয়াশিংটনকে ‘‘বড় ধরনের ব্যাঘাত সৃষ্টিকারী’’ হিসেবে দেখছে, যাকে ভরসা করা যায় না। বৈশ্বিক নেতারা এখন মার্কিন ঝুঁকি কমানোর প্রয়োজন বোধ করছেন। উদাহরণ হিসেবে তিনি ভারতের ইঙ্গিত করে বলেছেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উষ্ণ করেছে ভারত। গালওয়ান সংঘর্ষের (২০২০ সালের) পর এই প্রথম নয়াদিল্লি-বেইজিং সম্পর্কে অগ্রগতি এসেছে, আর এর পেছনে ট্রাম্পের শুল্কই বড় ভূমিকা রাখছে।

শুধু সুলিভান নন, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সাবেক অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ট্রাম্পের শুল্কনীতির কড়া সমালোচনা করেছেন। দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি (বারাক ওবামার আমলে দায়িত্ব পালন করেছেন) গত সপ্তাহে বলেছেন, বড় দেশগুলো সবসময় মানুষকে একের পর এক আল্টিমেটাম দিয়ে নয়; বরং প্রকৃত কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাদের মহত্ত্ব প্রদর্শন করে।

ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা জন বোল্টনও চলতি মাসের শুরুর দিকে অভিযোগ করে বলেন, ট্রাম্প কয়েক দশকের সেই মার্কিন কৌশলকে ঝুঁকিতে ফেলেছেন, যার লক্ষ্য ছিল ভারতকে রাশিয়া ও চীনের কাছ থেকে দূরে রাখা। সিএনএনকে তিনি বলেন, রাশিয়াকে দুর্বল করার জন্য যে ২৫ শতাংশ অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, সেটি উল্টোভাবে ভারতকে রাশিয়া ও চীনের দিকে ঠেলে দিতে পারে এবং হয়তো তারা একসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে দরকষাকষি করবে।

মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টোফার পাডিলা সতর্ক করেছেন, এই শুল্ক আমেরিকার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারে। খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ জেফ্রি স্যাচস মন্তব্য করেছেন, ভারতের বিরুদ্ধে এ ধরনের শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ ‘‘মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে নির্বোধ কৌশলগত পদক্ষেপ।’’
সূত্র: এনডিটিভি।

পিএ/টিকে 

Share this news on:

সর্বশেষ

দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে ৫১ রানে হার ভারতের Dec 12, 2025
img
বংশপরম্পরায় কাক প্রায় ১৭ বছর ধরে রাগ পুষে রাখতে পারে Dec 12, 2025
img
আ.লীগের ভোট পাওয়ার জন্য একটি দল তাদের বিরুদ্ধে কথা বলছে না : সালাহউদ্দিন Dec 12, 2025
img
নির্বাচনি তফসিলে অনেকে ভারাক্রান্ত হলেও স্বাগত জানাতে বাধ্য হয়েছে: সালাহউদ্দিন Dec 12, 2025
img
ভারতের হার না মানা সৈনিক যুবরাজ সিং! Dec 12, 2025
img
ঢাকা-১০ আসনে নির্বাচন করবেন আসিফ মাহমুদ Dec 12, 2025
img
শুধু সংসদ সদস্য নয়, আমি গণভোটেরও প্রার্থী : আসিফ মাহমুদ Dec 12, 2025
img
গুরু যুবরাজকে ‘ভয়’ পান অভিষেক শর্মা Dec 12, 2025
img
মধ্যপ্রাচ্যে নিষিদ্ধ রণবীর সিং অভিনীত ‘ধুরন্ধর’ Dec 12, 2025
img
দেশের স্বার্থে এই মুহূর্তে নেতৃত্ব দেওয়ার সক্ষমতা কার আছে, প্রশ্ন জিল্লুর রহমানের Dec 12, 2025
img
বিচ্ছেদের গুঞ্জনে আরাধ্যর ওপর প্রভাব, অভিষেকের স্পষ্ট বার্তা Dec 12, 2025
img
রিজার্ভ ছাড়াল ৩২ বিলিয়ন ডলার Dec 12, 2025
img
সম্মানজনক বিদায়ে সন্তুষ্ট শামসুর, নেই কোনো আক্ষেপ Dec 12, 2025
img
দেশের মানুষের কাছে আর ধর্মের বড়ি বিক্রি করা যাবে না: সালাহউদ্দিন আহমদ Dec 12, 2025
img
বাস কনডাক্টর থেকে দক্ষিণী ছবির ‘থালাইভা’ রজনীকান্তের বিস্ময়কর পথচলা! Dec 12, 2025
img
নোয়াখালীতে ইলিয়াসের কুশপুত্তলিকা আগুন Dec 12, 2025
img
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিকৃত করা যাবে না সালমানের নাচ কিংবা সংলাপ, নির্দেশ আদালতের Dec 12, 2025
img
ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশে কুয়াশার কারণে বাস খাদে পড়ে নিহত ৯ Dec 12, 2025
img
ফিফা আরব কাপে সেমিফাইনালে মরক্কোর প্রতিপক্ষ সৌদি আরব Dec 12, 2025
img
ঢাকার বাজারে আবারও মাছের চড়া দাম Dec 12, 2025