জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দশম দিনে ছয়জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এ নিয়ে এই মামলায় মোট ৩৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ হবে মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর)।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেল এ দিন ধার্য করেন।
এদিন বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। মাঝে কিছুক্ষণ বিরতি দেওয়া হয়। ট্রাইব্যুনালে আজ জবানবন্দি দেওয়া সাক্ষীরা হলেন- সিলেটের স্থানীয় সাংবাদিক মো. মোহিদ হোসেন, সাংবাদিক হুমায়ুন কবির লিটন, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সহকারী পরিচালক ডা. হাসানাৎ আল মতিন, ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের ট্রমা ম্যানেজমেন্ট সেন্টারে কর্মরত ওয়ারেন্ট অফিসার তারেক নাসরুল্লাহ, জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসনের (নিটোর) সহকারী পরিচালক ডা. মো. রশিদুল আলম ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র স্টোর অফিসার ডা. রাহাদ বিন কাশেম।
জবানবন্দি শেষে তাদের জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, মঈনুল করিম, তারেক আবদুল্লাহসহ অন্যরা।
এর আগে, ২৬ আগস্ট নবম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। ওই দিন এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন পাঁচজন। তারা হলেন- স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মফিজুর রহমান, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মনিরুল ইসলাম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. মোস্তাক আহমেদ, ফেনীর ব্যবসায়ী আহত নাসির উদ্দিন ও শহীদ শাহরিয়ার খান আনাসের নানা মো. সাঈদুর রহমান। এখন পর্যন্ত মোট জবানবন্দি দিয়েছেন ২৯ জন সাক্ষী।
জবানবন্দি শেষে তাদের জেরা করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, প্রসিকিউটর মঈনুল করিম, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যান্যরা।
গত ২৫ আগস্ট অষ্টম দিনেও পাঁচজনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল। তারা হলেন- জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী, একই হাসপাতালের রেটিনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাকিয়া সুলতানা নীলা, শহীদ মারুফ হোসেনের বাবা মোহাম্মদ ইদ্রিস, লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আমেনা আক্তার ও শহীদ আব্দুর রাজ্জাক রুবেলের মা হোসনে আরা বেগম।
২৪ আগস্ট সপ্তম দিনে সাক্ষ্য দেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের অফিস সহকারী মো. গিয়াস উদ্দিন, একই প্রতিষ্ঠানের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজিবুল ইসলাম ও কুষ্টিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক শরিফুল ইসলাম। ২০ আগস্ট ষষ্ঠ দিনে জবানবন্দি দেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান, একই হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স শাহনাজ পারভীন, ইবনে সিনা হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসানুল বান্না এবং শহীদ শেখ মেহেদী হাসান জুনায়েদের মা সোনিয়া জামাল।
১৮ আগস্ট পঞ্চম দিনের সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন শহীদ আস-সাবুরের বাবা মো. এনাব নাজেজ জাকি, শহীদ ইমাম হাসান তাইমের ভাই রবিউল আউয়াল ও রাজশাহীর প্রত্যক্ষদর্শী জসিম উদ্দিন। ১৭ আগস্ট চারজনের সাক্ষ্যগ্রহণ রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল। তারা হলেন- সবজি বিক্রেতা আবদুস সামাদ, মিজান মিয়া, শিক্ষার্থী নাঈম শিকদার ও শহীদ সাজ্জাদ হোসেন সজলের মা শাহীনা বেগম।
৬ আগস্ট প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে জবানবন্দি দেন রিনা মুর্মু ও সাংবাদিক একেএম মঈনুল হক। ৪ আগস্ট পঙ্গু হওয়া শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল ইমরান ও দিনমজুর চোখ হারানো পারভীনও সাক্ষ্য দিয়েছেন। ৩ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার সূচনা বক্তব্যের পর প্রথম সাক্ষী হিসেবে নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া বীভৎস বর্ণনা তুলে ধরেন আন্দোলনে আহত খোকন চন্দ্র বর্মণ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও আসামি হিসেবে রয়েছেন। তবে নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন তিনি। কাঠগড়ায় তার উপস্থিতিতেই জবানবন্দি দিচ্ছেন সাক্ষীরা।
এর আগে, ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার। এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার এবং শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার রয়েছে। সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন ৮১ জন। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এই অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা।
এসএন