বেলের গুণের শেষ নেই

গরমে ঠাণ্ডা এক গ্লাস বেলের শরবত নিমেষেই প্রাণ জুড়িয়ে দেয়। পাশাপাশি নানা রোগের উপশম ঘটাতে বেলের জুড়ি নেই। এই ফলের রয়েছে বহু ওষধি গুণ। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, ভিটামিন-এ, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও পটাশিয়াম।

বাংলাদেশ ও ভারতের পল্লী অঞ্চলে সর্বত্র বেল পাওয়া যায়। এর ইংরেজি নাম বেঙ্গল কুইন্স (Bengal Quince)। বৈজ্ঞানিক নাম ঈগল মারমেলস (Aegle Marmelos)।

পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, প্রতি ১০০ গ্রাম আহার উপযোগী বেলে খাদ্যশক্তি আছে ৮৭ কিলোক্যালরি, জলীয় অংশ ৭৭ দশমিক ৫ গ্রাম, শর্করা ১৮ দশমিক ৮ গ্রাম, আমিষ ২ দশমিক ছয় গ্রাম, চর্বি শূন্য দশমিক ২ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৮ মিলিগ্রাম, লোহা শূন্য দশমিক ৬ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-১ শূন্য দশমিক শূন্য ৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ শূন্য দশমিক শূন্য ২ মিলিগ্রাম ও ভিটামিন সি ৯ মিলিগ্রাম।

বেলের রয়েছে নানা ভেষজগুণ
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বেল বমি, রক্তবমি, অধিক রক্তক্ষরণ, বাচ্চাদের বিছানায় প্রসাব করা, ডায়াবেটিস, ব্রংকাইটস, অ্যাজমা, পানিবসন্ত ও মাড়ি প্রদাহের ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

হোমিওপ্যাথিতে বেলের পাতা ও ফল থেকে দু'টি মূল্যবান ওষুধ তৈরি হয়। পাতা থেকে তৈরি ওষুধটির নাম ঈগল ফোলিয়া (Aegle folia)। ঈগল ফোলিয়া আন্ত্রিক সমস্যায়, বিশেষভাবে আমাশয়, পাইলস, কোষ্ঠবদ্ধতায় বেশ কার্যকর। বেলফল থেকে তৈরি ওষুধটির নাম ঈগল মারমেলস (Aegle marmelos)। আমাশয়, কোষ্ঠবদ্ধতা, ঠাণ্ডা প্রবণতা, কোমরে ব্যথা, স্বপ্নদোষ, চক্ষুপ্রদাহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে বেশ উপকারী।

চলুন জেনে নিই নিয়মিত বেল খাওয়ার উপকারিতা এবং এর মাধ্যমে যেসব রোগ এড়ানো যায়-

  • পাকস্থলীর আলসার, পাইলস রোগে উপকারী। এটি শক্তিবর্ধক হিসেবে কাজ করে।
  • অন্ত্রের কৃমিসহ অন্যান্য জীবাণু ধ্বংস করে ডায়রিয়া এবং আমাশয় রোগে খুব কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
  • ত্বককে সূর্যরশ্মির ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে বেলের শাঁস এবং ত্বকের স্বাভাবিক রং বজায় রাখে।
  • বেল থেকে পাওয়া বেটাক্যারোটিন রঞ্জক মানবদেহের টিউমার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে। বিশেষ করে নারীরা নিয়মিত বেল বা বেলের শরবত খেলে ব্রেস্ট ক্যান্সার ও জরায়ু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমে।
  • প্রস্টোজেন হরমোন লেভেল বাড়িয়ে নারীদের ইনফার্টিলিটির ঝুঁকি কমায়। তাছাড়া প্রসব-পরবর্তী ডিপ্রেশন কমাতেও খুবই কার্যকরী।

  • বেলের ভিটামিন-সি স্কার্ভি প্রতিরোধ করে। ভিটামিন-সি হলো শক্তিশালী প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা মানবদেহের বিভিন্ন সংক্রমণ রোধ করে।
  • পাকা বেল গোলমরিচের সঙ্গে শরবত করে খেলে জন্ডিসের সমস্যা থেকে উপকার পাওয়া যায়।
  • বেল বেটাক্যারোটিনের ভালো উৎস, যা থেকে ভিটামিন-এ তৈরি হয়। ভিটামিন-এ চোখের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে পুষ্টি যোগায়। যারা নিয়মিত বেল খায়, তাদের চোখের বিভিন্ন অসুখ হওয়ার প্রবণতা থাকে তুলনামূলকভাবে কম।

সতর্কতা: নিয়মিত পাকা বেল খাওয়া উচিত নয়। প্রতিদিন পাকা বেল খেলে স্বাভাবিক স্থিতিস্থাপকতা কমে যায় এবং পেট ফাঁপার সমস্যা হতে পারে। পাকা বেল একবারে বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: