দেহের পরিপাকতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ লিভার (যকৃত)। লিভারকে বলা হয় দেহ থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণের প্রাথমিক উৎস। সহনীয় মাত্রায় অ্যালকোহল, চর্বিযুক্ত ও শর্করা জাতীয় খাবার খেলে লিভার তা সহজেই সমাধান করতে পারে। বিষাক্ত উপাদানকে বর্জ্য উপাদানে রূপান্তর, রক্ত পরিষ্কার রাখা এবং পুষ্টিকর খাবার কিংবা ওষুধের বিপাক ইত্যাদি কাজকে উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে লিভার।
কিন্তু লিভারকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম না দিলে কিংবা লিভারের যত্ন না নিলে এর কার্যক্ষমতা হ্রাস পেতে পারে, যা বিভিন্ন ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে। কারণ বাজারে এমন কিছু দ্রব্য রয়েছে, যা ব্যবহারের ফলে আমাদের লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তবে প্রকৃতিতে এমন কিছু খাদ্য উপাদান রয়েছে, যা খেলে প্রাকৃতিকভাবেই লিভার পরিষ্কার হয়। এগুলো হল-
কফি ও চা
কফি লিভারকে রোগব্যাধি থেকে সুরক্ষা দেয়। লিভারের ক্যান্সার, সিরোসিস ও প্রদাহজনিত ঝুঁকি হ্রাস করে কফি। কারণ গবেষকদের মতে কফি লিভারের রোগের জন্য দায়ী চর্বিযুক্ত কোষ তৈরি প্রতিরোধ করে। তাই প্রতিদিন অন্তত তিন কাপ কফি লিভারের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়াও লিভারের সুস্বাস্থ্যের জন্য সবুজ চা খুবই উপকারী। এজন্য প্রতিদিন ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০ কাপ পর্যন্ত সবুজ চা খেতে পারেন।
জাম্বুরা
জাম্বুরাতে নেরিনজিন ও নেরিনজেনিন নামে দুটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা যকৃতে প্রদাহ হ্রাস করে এবং কোষগুলোকে সুরক্ষা দেয়। এটা লিভারে জমে থাকা অতিরিক্ত চর্বি দূর করতেও ভূমিকা রাখে। এছাড়া জাম্বুরায় থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট অ্যালকোহল জাতীয় খাবারের নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া থেকেও লিভারকে সুরক্ষা দেয়।
ব্লুবেরি
ব্লুবেরি ও ক্র্যানবেরি ফলে অ্যানথোসিয়ানিন নামক এক প্রকার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা লিভারের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। তিন থেকে চার সপ্তাহ নিয়মিত ব্লুবেরি বা ক্র্যানবেরি ফল খেলে লিভারের ক্ষত, ফিব্রোসিস, ক্যান্সার ও লিভারের কোষের ক্ষয় ইত্যাদি জটিলতা থেকে সুরক্ষা দেবে।
আঙ্গুর
আঙ্গুর ফলে, বিশেষ করে রঙ্গিন আঙ্গুরে বিভিন্ন ধরণের উপকারী উপাদান রয়েছে। বিশেষ করে এতে থাকা রিসবারেট্রল উপাদান অনেকটা রেড ওয়াইনের মত কাজ করে। যা প্রদাহ জনিত ঝুঁকি হ্রাস করে এবং ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালের হাত থেকে লিভারকে সুরক্ষা দেয়। তাই লিভারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করতে নিয়মিত আঙ্গুর ফল বা আঙ্গুর ফলের নির্যাস খেতে পারেন।
বিটরুটের জুস
বিটরুটের বিভিন্ন স্বাদ আছে। অনেকেই এর নির্যাস একেবারেই পছন্দ করে না। আবার যারা এর প্রেমে পড়ে গেছে তারা এটা ছাড়তে পারে না। তবে এতে বিটালেইন নামে এক ধরণের অ্যান্টিওক্সিডেন্ট রয়েছে, যা লিভারের অক্সিডেটিভ ক্ষয় ও প্রদাহ জনিত ঝুঁকি হ্রাস করে এবং বিষাক্ত পদার্থ অপসারণকারী হরমোন বৃদ্ধি করে।
যাদের খাদ্যাভাস স্বাস্থ্যকর নয়, তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রতিরোধ করতে লিভারের সুস্বাস্থ্যের কোনো বিকল্প নেই। কারণ অধিক পরিমাণে অ্যালকোহল, চিনি ও চর্বি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার ফলে লিভারের বিপাক ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং লিভারে চর্বি জমে যায়। ফলে লিভারে মারাত্মক জটিলতা দেখা দেয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি। তাই লিভারকে সুস্থ রাখতে উল্লেখিত খাবারগুলো খাদ্যতালিকায় যোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
টাইমস/এএইচ/জিএস