কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিনড্রাইভে পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব:) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদের সহযোগী শিপ্রা দেবনাথকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সম্প্রতি শিপ্রার কয়েকটি ভিডিও ও বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। শিপ্রার পক্ষে-বিপক্ষে নানা ধরণের মন্তব্য এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরছে।
জার্মানিভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে বাংলায় দেয়া সাক্ষাতকারে দেয়া শিপ্রা’র কয়েকটি বক্তব্যকে ঘিরেই প্রথম বিতর্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেকেই শিপ্রার কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ডয়চে ভেলের প্রতিবেদন প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকেই দাবি করেছেন, মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের বিচার নয়, বরং মেজর সিনহার ইউটিউব চ্যানেলটি দখলে নিতেই মরিয়া হয়ে উঠেছে শিপ্রা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এমন মন্তব্যও আসছে যে, শিপ্রার বর্তমান কর্মকান্ড সন্দেহজনক। মেজর সিনহার হত্যাকান্ডকে শিপ্রা দেবনাথ কৌশলে সাধারণ মৃত্যু হিসেবে প্রচার করছে। যা মিডিয়ায় দেয়া তার বক্তব্যের মধ্যে ফুটে উঠেছে।
গণমাধ্যমে শিপ্রা দেবনাথের সাক্ষাতকার প্রকাশ হওয়ার পর এ নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. আসিফ নজরুল তার ফেসবুক পেইজে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের পর শিপ্রা দেবনাথের একটি ভিডিও দেখে হতভম্ব হয়ে গেছি। ভিডিও দেখে মনে হয়েছে, মেজর সিনহা হত্যার বিচার নয়, শিপ্রার আসল চিন্তা এখন ইউটিউব চ্যানেলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে। মেয়েটি সাক্ষাতকারে যেভাবে বলল, সিনহা মারা গেছে! মনে হলো যেন, তাকে (মেজর সিনহা) কেউ হত্যা করেনি, বরং পাহাড়-টাহার থেকে দুর্ঘটনাবশত পড়ে মেজর সিনহার মৃত্যু হয়েছে!
ড. আসিফ নজরুল আরও লিখেছেন, মেজর সিনহার সঙ্গে শিপ্রার যতো অন্তরঙ্গ সম্পর্কই থাকুক না কেন, পাবলিকলি সে (শিপ্রা) যেভাবে সিনহা, সিনহা বলে সম্বোধন করেছে, তা অত্যন্ত অরুচিকর। মেজর সিনহার হত্যাকান্ডের পর থেকেই শিপ্রার আচার-আচরণ তো সন্দেহজনক! পুরো ভিডিওটা দেখে আমি এমন বিরক্ত হয়েছি যে তা বলার মতো না। মেজর সিনহার কি দুর্ভাগ্য, যে তিনি এমন একটা আজব সহকর্মী রেখে গেছেন তার সম্পর্কে কথা বলার জন্য।
এদিকে এ নিয়ে সাবেক এক সেনা কর্মকর্তা তার ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ঘটনার দিন তিনি (শিপ্রা) কেন সিনহার সাথে যাননি? তাকে না যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছিল? কেন তিনি মিডিয়াতে সিনহা হত্যার বিচার চাইছেন না, বরং নিজেকে তারকা হিসেবে প্রচার করার চেষ্টা চালাচ্ছেন? মেজর সিনহা ছাড়া শিপ্রা দেবনাথ কে? কি? আসলেই শিপ্রা কে?
শিপ্রাকে উদ্দেশ্য করে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর লিখেছেন, তোমাদেরকে সেলিব্রেটি বানানোর জন্য আমরা রাজপথে নামিনি। বরগুনায় আমার ভাই-বোনেরা ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতদের উত্তরসূরীদের লাঠিপেটা খায়নি, একজন এসআই চড় খাননি। আমরা রাজপথে নেমেছিলাম সত্য উদঘাটনে। আমাদের মতো প্রতিবাদী মানুষগুলো রাজপথে না নামলে মামলার আসামি হয়ে তোমাদের কারাগারে থাকা লাগতো মাস, বছর, তার ওপর হয়রানি।
ভিপি নুর বলেন, ভেবেছিলাম তোমরা মুক্ত হলে সত্য উদঘাটনে আমাদের সংগ্রামে আরও সহজ হবে। কিন্তু তোমাদের ভূমিকা শুধু আমাকে, আমাদেরকে নয়, পুরো জাতিকেই হতাশ করেছে। তোমাদের পাশে পুরো জাতি ছিল, তোমরা বুঝলে না! তোমরা চাইলে জাতির কাছে সৎ-সাহসী, অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপসহীন বীর হিসেবে টিকে থাকতে পারতে। কিন্তু তোমরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গিয়েছো। আজ যাদের ভয়ে ও আশ্বাস তোমরা সত্য লুকিয়ে যাচ্ছো, একদিন তারাই তোমাদের জন্য বিপদের কারণ হবে।
এদিকে শিপ্রার এমন বক্তব্য দেয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিপ্রার ব্যক্তিগত জীবনের বেশকিছু ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এসব ছবির ক্যাপশন ও কমেন্ট সেকশনে শিপ্রাকে নিয়ে নানা মন্তব্য করেছেন সাধারণ মানুষ।
শিপ্রার সিগারেট খাওয়ার ছবির নিচে অনেকেই লিখেছেন, সে কি আপনার টাকায় সিগারেট খাচ্ছে? সে তার টাকায় সিগারেট খাচ্ছে। এ নিয়ে আপনাদের এত মাথা ব্যথা কেন।
কেউ কেউ লিখেছেন- শিপ্রা স্বাধীন, সে যেকোন পোশাক পরতেই পারে। সিগারেট, মদ, গাঞ্জা যা ইচ্ছে করে, শিপ্রা সেটাই খেতে পারে। এ নিয়ে মানুষের কথা বলার অধিকার নেই।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ বাহারছড়া চেকপোস্টে তল্লাশির নামে মেজর সিনহাকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে টেকনাফ থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে মেজর সিনহা ও তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করে।
এছাড়া চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় ৫ আগস্ট নিহত মেজর সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। মামলায় টেকনাফের সদ্য সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ. এসআই লিয়াকতসহ ৯ পুলিশ সদস্যের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
টাইমস/এসএন