অর্থনৈতিকভাবে আমরা মোটামুটি ভালো অবস্থায় আছি: প্রধানমন্ত্রী

করোনায় অনেক মানুষকে হারিনোর কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, করোনার কারণে শুধু বাংলাদেশ নয়, সারাবিশ্বে জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেকে ধারণা করছিলেন আমাদের রেমিট্যান্স কমে যাবে। রেমিট্যান্স কিন্তু কমেনি। আমরা দুই শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি, যার কারণে বেড়েছে। অনেকেই ভাবতেই পারনি রেমিট্যান্স এত বাড়বে। আমাদের রিজার্ভ ৩৯ দশমিক ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। রিজার্ভও ভালো অবস্থানে। অর্থনৈতিকভাবে মোটামুটি ভালো অবস্থায় আমরা আছি।

বুধবার সকাল ১০টার দিকে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের সভাপতিমণ্ডলীর বৈঠকের শুরুতে এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন দলের সভাপতি শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির মধ্যে দলের সংসদীয় বোর্ডের সভার পর এই প্রথম দলের নীতিনির্ধারণী সর্বোচ্চ ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সভা গণভবনে অনুষ্ঠিত হলো। সভায় সভাপতিমণ্ডলীর অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। 

অন্যান্য রাজনৈতিক দল আশ্বাস দিয়েও করোনায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়নি। তবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি এগিয়ে গেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে অন্যদের দেখেছি কেবল লিফ সার্ভিস দিতে, মুখে মুখে কথা বলেছে। কিন্তু প্রকৃত অসহায় মানুষের কাছে গিয়ে সাহায্যে করার বিষয়টিতে অন্য দলগুলো বা এনজিওসহ কোনও সংস্থার উপস্থিতি সেইভাবে দেখা যায়নি। কিন্তু আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

রাজনৈতিক দল হিসেবে একমাত্র আওয়ামী লীগেরই ইকোনমিক পলিসি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেটাকে মাথায় রেখেই কিন্তু আমরা কাজ করে যাই। এখন আমরা সরকারে আছি এজন্য আমাদের দায়িত্ব হলো শুধু বর্তমান নয়, আগামী দিনে নতুন প্রজন্মের জন্য দেশটা কীভাবে এগিয়ে যাবে, দেশ কীভাবে চলবে, এখন থেকে সেই প্রস্তুতি আমরা নিয়ে রাখবো। নির্দেশনা দিয়ে দেবো। এখন আমরা যেটা করছি সময়ের বিবর্তনে হয়তো তা সংশোধন করতে হবে। পরিবর্তন করতে হবে। পরিশোধন করতে হবে। এটা করতেই হবে। এটা নিয়ম।

তিনি আরও বলেন, পরিবর্তন করতে হবে তা আমরা জানি। কিন্তু তারপরও একটা ফ্রেমওয়ার্ক, একটা ধারণাপত্র অথবা একটা দিকনির্দেশনা; সেটা যদি সামনে থাকে তাহলে যেকোনও কাজ খুব সহজে হয়। যারাই আসুক ভবিষ্যতে তারাই করতে পারবে। কারণ আমাদের তো বয়স হয়ে গেছে। আমার তো ৭৪ বছর বয়স। কাজেই সেটাও মাথায় রাখতে হবে। আর কতদিন! কাজেই তারপরে যারা আসবে তারা যেন দিকহারা না হয়ে যায়। তারা যেন একটা দিকনির্দেশনা থাকে, একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে। সেজন্য আমরা প্রথম প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করলাম। এরপর দ্বিতীয় প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে দিলাম। ২০৪১ সাল পর্যন্ত কী হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালে সরকার গঠন করে ২০১০ সালে আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা নিয়েছিলাম ২০১০ থেকে ২০২০। সেখানে এখন আমরা ২০২১ থেকে ২০৪১ সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও প্রণয়ন করেছি। বাংলাদেশ হচ্ছে একটা ডেল্টা। আমাদের বদ্বীপ।

তিনি বলেন, ‘আমাদের নদীগুলোর ভাঙন হচ্ছে, নদীগুলোর ক্ষতি হচ্ছে। নদীগুলোকে বাঁচানোর জন্য এটা দরকার। আমরা ডেল্টা প্ল্যান যেটা করেছি। ডেল্টা প্ল্যানের লক্ষ্য, আমাদের যতগুলি বড় নদী এবং যা আছে, আমরা নদী ড্রেজিং করে নদীর নাব্য বজায় রেখে এই বদ্বীপটা রক্ষা করা এবং সুরক্ষিত করা। আমাদের দেশের মানুষকে কীভাবে সুন্দরভাবে একটা জীবন দেওয়া যায়, অর্থনৈতিক উন্নয়নটা ত্বরান্বিত করা যায় সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন করেছি, বাস্তবায়ন করছি।

তিনি আরও বলেন, জাতিসংঘ ঘোষণা দিয়েছে-এসডিজি-২০৩০। সাসটেইনবেল ডেভলপমেন্ট গোল। অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নটা একটা স্থিতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। সেখানে যে ধারাগুলো আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য সেগুলি আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি। আমরা এমডিজি বাস্তবায়নে সাফল্য অর্জন করেছিলাম। এসডিজি বাস্তবায়নেও আমাদের সাফল্য আসবে, এইজন্য আমরা ঠিক আমাদের দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ধারাগুলো সেগুলো নিয়ে আমরা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।

তিনি জানান, ‘২০২০ সাল জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করছি। ২০২১ সাল স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করবো। ২০২০ থেকে ২০২১ এটাই আমরা মুজিববর্ষ ঘোষণা দিয়েছি। কাজেই ২০২১ সালের মধ্যে আমাদের লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার আমরা কমিয়ে ১৬-১৭’র মধ্যে নামিয়ে নিয়ে আসবো। ইতোমধ্যে ২০ ভাগ নামিয়ে এনেছি, যেখানে ৪০ ভাগ ছিল। সেটা আমরা ২০ দশমিক ৫ ভাগে নামিয়ে এনেছিলাম।

সরকার প্রধান বলেন, করোনার কারণে আমাদের এসব কাজ একটু শ্লথ হয়ে গেছে এটা ঠিক। কিন্তু আমরা মনে করি যে, এই দারিদ্র্য যেন আবার মানুষকে গ্রাস করতে না পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিচ্ছি। পাশাপাশি একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত আর্থিকভাবে মানুষ চলতে পারে তার ব্যবস্থাও আমরা করে দিচ্ছি। এই কারণে কোনোভাবে সাধারণ মানুষের যেন কষ্ট না হয়।

বিভিন্ন প্রণোদনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার মনে হয়, একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল বলে এইভাবে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করেছে এবং মানুষকে সহযোগিতা করেছে। অন্য কোনও দল হলে এটা মোটেই করতো না। বরং তারা দেখতো যে, কীভাবে এখান থেকে ফায়দা লুটতে পারে। কিন্তু আমরা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। এটা আমাদের নীতি, এটা আমাদের লক্ষ্য। এটা জাতির পিতা আমাদের শিখিয়েছেন। আমরা সেইভাবেই কাজ করে যাচ্ছি।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
‘মৃত্যুর আগপর্যন্ত ভালোবেসে যাব’ বিচ্ছেদের পর সংগীতশিল্পী সালমা Dec 31, 2025
img
ভারতের এক কূটনীতিকের সঙ্গে গোপনে বৈঠক হয় ডা. শফিকুর রহমানের Dec 31, 2025
img
‘ক্ষমতার বাইরে থেকেও মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নেওয়ার প্রমাণ এই জনসমুদ্র’ Dec 31, 2025
img
হাসপাতালে ভর্তি ব্রাজিলের কিংবদন্তি ডিফেন্ডার Dec 31, 2025
img
রুমিন ফারহানার নামে ধানমন্ডিতে ৫ ফ্ল্যাট ও ৫ কাঠা জমি, হাতে নগদ ৩২ লাখ টাকা Dec 31, 2025
img
গম্ভীরকে নিয়ে মুখ খুলল বিসিসিআই Dec 31, 2025
img
দ্বিতীয় সংসার ভেঙে যাওয়া নিয়ে মুখ খুললেন সালমা Dec 31, 2025
img
তারেক-শফিকুর-নাহিদের চেয়ে আয় বেশি নুরের Dec 31, 2025
img
২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট পেতে রেকর্ড সংখ্যক আবেদন Dec 31, 2025
img
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের স্পিকারের সাক্ষাৎ Dec 31, 2025
বেগম জিয়াকে নিয়ে স্মৃতিচারণে লাখো জনতার ভালোবাসায় বিদায়ী সমাবেশ Dec 31, 2025
দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় জমায়েত Dec 31, 2025
হারিয়ে যাওয়ার কথা মনে করালেন অভিনেতা আরশ খান Dec 31, 2025
img
রাহার জন্য বড় সিদ্ধান্ত, বলিউড থেকে দূরত্ব বাড়াচ্ছেন আলিয়া ভাট Dec 31, 2025
img
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আর নেই Dec 31, 2025
img
নতুন বছরে স্বর্ণের দামের সুখবর দিল বাজুস Dec 31, 2025
img
একযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ১৭ কমিশনারকে বদলি Dec 31, 2025
img
চট্টগ্রামের দর্শকদের জন্য মিঠুর দুঃখ প্রকাশ Dec 31, 2025
img
কারাগারে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আ. লীগ নেতার মৃত্যু Dec 31, 2025
img
খালেদা জিয়ার জানাজা আন্তর্জাতিক সংবাদ শিরোনামে Dec 31, 2025