ওসিকে বাঁচাতে ফেনীর এসপির চিঠি

পুলিশ সদর দপ্তরে পাঠানো এক চিঠিতে ফেনী জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) জাহাঙ্গীর আলম মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের পরিবারকে দোষারোপ করেছেন। এসপির অভিযোগ, নুসরাতকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় মামলা করতে পরিবার ‘কালক্ষেপণ’ করেছে।

এর আগে সোনাগাজী থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেনও নুসরাত পরিবারকে দোষারোপ করেছিল।

নুসরাতের পরিবার বলছে, ওসিকে রক্ষায় এমন চিঠি দেয়া হয়েছে। পুড়িয়ে মারার ঘটনাকে প্রথম থেকেই পুলিশ ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করছে। এমনকি মামলার এজাহার নিয়েও পুলিশ কূটচাল চেলেছে।

এদিকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় পুলিশের দায়দায়িত্ব খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে পুলিশ সদর দপ্তর।

বুধবার এই কমিটির প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা। তবে কমিটি কবে প্রতিবেদন জমা দেবে, সে তারিখ এখনো ঠিক হয়নি।

কমিটির প্রধান ও পুলিশ সদর দপ্তরের উপমহাপরিদর্শক (মিডিয়া) রুহুল আমিন বলেন, পুলিশের যা যা করার কথা ছিল, সেটা ঠিকমতো করেছে কি না, সেটা দেখাই কমিটির উদ্দেশ্য। ফেনীর এসপির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সেটা খতিয়ে দেখা হবে। পুলিশ ও নুসরাতের পরিবার দুই পক্ষের সঙ্গেই কথা বলবে কমিটি।

পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার ঘটনা নিয়ে ফেনীর এসপি জাহাঙ্গীর আলম ১১ এপ্রিল একটি প্রতিবেদন দেন। প্রতিবেদনটি পুলিশ সদর দপ্তর, বিশেষ শাখা ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজির দপ্তরে পাঠানো হয়।

পুলিশ সুপারের চিঠিতে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন নুসরাত মাদ্রাসায় যান। এরপর তার বসার স্থানে ফাইলপত্র রেখে সাইক্লোন শেল্টারের ছাদের ওপরে বাথরুমের কাছে যান। কিছুক্ষণ পর গায়ে আগুন লাগা অবস্থায় সিঁড়ি দিয়ে চিৎকার করতে করতে নেমে আসেন। তখন কেন্দ্রে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্য ও মাদ্রাসার কর্মচারীরা আগুন নিভিয়ে ফেলেন। ঘটনার পর পুলিশের পক্ষ থেকে পরিবারকে বারবার অনুরোধ করা হলেও তারা মামলা করতে কালক্ষেপণ করে। পুলিশ নুসরাতের চাচাকে বাদী করে মামলা করতে গেলে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান আপত্তি জানান। তিনি দু’বার এজাহার বদল করেন।

নুসরাতের পরিবারের সদস্যরা জানান, ঘটনাটি এমনভাবে বলা হয়েছে যাতে মনে হচ্ছে, নুসরাত নিজের ইচ্ছাতেই ভবনের ওপরে যান। অথচ তাকে পরিকল্পনা করে ডেকে নেয়া হয়। এরপর হাত–পা বেঁধে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার কোনো কথাই উল্লেখ করা হয়নি।

মূলত ওসিকে রক্ষায় এসপি চিঠি দিয়েছেন উল্লেখ করে নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান বলেন, ২৭ মার্চ মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করার পর থেকে ওসি বলে আসছেন, শ্লীলতাহানির অভিযোগ সাজানো। এমনকি ৬ এপ্রিল তার বোনকে হত্যাচেষ্টার ঘণ্টা দেড়েক আগেও মাদ্রাসার ইংরেজির প্রভাষক আফছারউদ্দীন মামলা তুলে নিতে চাপ দেন। হত্যাচেষ্টার ৩০ ঘণ্টা পর ওসি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে বলেছেন, এটা হত্যাচেষ্টা না আত্মহত্যার চেষ্টা, তা তদন্ত করে দেখতে হবে। সর্বশেষ ৮ এপ্রিল তিনি যে মামলা সাজিয়ে পাঠিয়েছেন, সেখানেও পুলিশ তথ্য গোপনের চেষ্টা করেছে। পরিবারের দাবির মুখে শেষ পর্যন্ত মামলার এজাহার বদলানো হয়েছে।

মাহমুদুল হাসান বলেন, ৬ এপ্রিল রাতে সোনাগাজীর পুলিশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন নুসরাতের সাক্ষাৎকার নিয়ে পরিবারকে পড়ে শোনান। কিন্তু এজাহারে দেখা যায় ঘটনাস্থল লেখা হয়েছে ভুলভাবে। মেয়েটিকে হাত-পা বেঁধে আগুন লাগিয়ে দেয়ার প্রসঙ্গ আসেনি। কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ আসামির নামও বাদ দেয়া হয়।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে এসপি এস এম জাহাঙ্গীর আলম কোনো কথা বলতে রাজি হননি।

সোনাগাজীর সাবেক ওসির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি গোলাম ফারুক বলেন, দায়িত্বশীল চেয়ারে থেকে এমনটি করার সুযোগ নেই।

সোনাগাজীর ফাজিল মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাতকে ৬ এপ্রিল হাত–পা বেঁধে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। চার দিন জীবনের সঙ্গে লড়ে ১০ এপ্রিল রাতে তিনি ঢাকা মেডিকেলে মারা যান। এ ঘটনায় করা মামলায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত আসামি আছেন সাতজন। এজাহারভুক্ত এক আসামি এখনো পলাতক। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করছে।

 

 

টাইমস/এসআই

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বাংলাদেশি আখ্যা দিয়ে ১৪ ভারতীয় নাগরিককে পুশব্যাক Dec 27, 2025
img
আকাশপথে যাত্রীদের নামাজের সুবিধা দেবে এমিরেটস Dec 27, 2025
img
এনআইডির জন্য আবেদন করেছেন তারেক রহমান Dec 27, 2025
img
সেন্ট মার্টিনগামী জাহাজে আগুন: ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন Dec 27, 2025
img
কী ঘটেছিল জেমসের কনসার্টে? মুখ খুললেন উপস্থাপক Dec 27, 2025
img
সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই এনআইডি পাবেন তারেক রহমান: হুমায়ুন কবীর Dec 27, 2025
img
ছোট টেস্ট ‘ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর’ : টড গ্রিনবার্গ Dec 27, 2025
img
প্রয়াত বাবার স্মরণে চঞ্চল চৌধুরীর আবেগঘন বার্তা Dec 27, 2025
img
আমি জানি না আমি আরও কতদিন ইউটিউবিং করবো : পিনাকী Dec 27, 2025
img
হাদির কবর জিয়ারত করে ইসির পথে তারেক রহমান Dec 27, 2025
img
মাহমুদ উল্লাহর উপস্থিতিতে আত্মবিশ্বাসী রংপুর রাইডার্স Dec 27, 2025
img
৩০ দিনে মক্কা ও মদিনায় ৬ কোটি ৯০ লাখ মুসল্লির আগমন Dec 27, 2025
img
নব্বইয়ের দশক থেকে বর্তমান: সময়ের চেয়ে বড় এক নাম সালমান খান Dec 27, 2025
img
অবসরে গেলেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ Dec 27, 2025
img
চোট নিয়ে মাঠ ছাড়লেন অ্যাটকিনসন, শঙ্কায় ইংল্যান্ড Dec 27, 2025
img
ছোটপর্দায় প্রথম অ্যাকশন দৃশ্যে স্বস্তিকা দত্ত! Dec 27, 2025
img
সিলেটকে হারিয়ে বোনাস পেলেন শান্ত-মুশফিকরা Dec 27, 2025
img
হাদির কবর জিয়ারত করলেন তারেক রহমান Dec 27, 2025
img
হাদির কবর জিয়ারতের সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়েছেন তারেক রহমান: মির্জা ফখরুল Dec 27, 2025
img
দঙ্গল, জাওয়ান, পাঠানের পাশে নতুন সদস্য ‘ধুরন্ধর’ Dec 27, 2025