সরেজমিনে ঢাকা-১৭: অভিজাত আসনে ‘হেভিওয়েট’রা কৌশলী

বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রধান কার্যালয় রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে অবস্থিত। আর ওই এলাকায় অবস্থান ঢাকা-১৭ আসন। কিন্তু বিএনপির চেয়ারপারসন কারাগারে থাকায় ওই এলাকায় দলীয় কর্যালয়ে নেমেছে নিরবতা। এমনকি ওই আসনে বিএনপি নিজের প্রার্থী না দিয়ে ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থকে মনোনয়ন দিয়েছে।

এছাড়াও ওই আওয়ামী লীগ-জাপার পক্ষ থেকেও ওই আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী দেয়া হয়েছে। তবে অভিজাত ওই আসনে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে প্রার্থীরা তাদের প্রচারণা চালাচ্ছেন। ওই আসনের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

জানা গেছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৫, ১৮, ১৯ ও ২০ নং ওয়ার্ড এবং সেনানিবাস এলাকা নিয়ে ঢাকা-১৭ আসন।

অভিজাত ও কূটনীতিক এলাকা গুলশান, বনানীও এই আসনের মধ্যেই রয়েছে। ওই আসনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুককে, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ লাঙ্গল প্রতীকে, ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষে বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, সিংহ প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হুদা, বাসদের এসএম আহসান হাবিব, জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আমিনুল হক তালুকদার, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের আলী হায়দার ও বিকল্প ধারার এ কে এম সাইফুর রশিদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে ওই আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ওই সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনকে ২৩ হাজার ৭৩ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন তিনি। পরে খালেদা ছেড়ে দিলে উপ-নির্বাচনে জয়ী হন বিএনপির কামরুল ইসলাম।

পরবর্তীতে ১৯৯৬ সালের ধানের শীষের প্রতীক নিয়ে কামরুল ওই আসনে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে ওই নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে এম রহমতউল্লাহ ২৩ হাজার ভোটের ব্যবধানে জয় লাভ করেন।

কিন্তু ২০০১ সালে আবার রহমতউল্লাহকে ৫৪ হাজার ভোটে হারিয়ে পুনরায় ওই আসনটি উদ্ধার করেন বিএনপি প্রার্থী কামরুল। তবে ২০০৮ সালে বিএনপির প্রার্থী হন আ স ম হান্নান শাহ্ এ সময় তিনি মহাজোটের এরশাদের কাছে হেরে যান।

২০১৪ সালে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে এরশাদের মনোনয়নপত্রও প্রত্যাহার হওয়ায় এক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যকে হারিয়ে বিজয়ী হন বিএনএফের আজাদ।

সরেজমিনে ওই আসন ঘুরে ও সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে প্রচারণায় এগিয়ে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী অভিনেতা আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। তিনি প্রতিটি এলাকায় নৌকা মার্কার অস্থায়ী কার্যালয় করেছেন। এছাড়াও ট্রাক ও মিনি ট্রাক দিয়ে মাইকিং করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি প্রতিদিন দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। শুধু তাই নয়, মিডিয়া ব্যক্তিত্ব হওয়াতে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

তবে ওই আসনে প্রচারণায় অনেকটা পিছিয়ে রয়েছেন বিএনপির প্রার্থী আন্দালিব রহমান পার্থ। সরেজমিনে গুলশানের পুলিশ প্লাজা, গুলশান ১, গুলশান ২, বনানী এলাকা ঘুরে ধানের শীষের কোনো পোস্টার দেখা যায়নি। এমনকি বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে গিয়েও  ধানের শীষের কোনো পোস্টার দেখা যায়নি। বরং খালেদার কার্যালয়ের আশপাশে এরশাদের লাঙ্গল প্রতীকের পোস্টার সাটানো রয়েছে।

এছাড়াও বিএনপির ওই কার্যালয় থেকে প্রায় ১০০ গজ দূরে নৌকা প্রতীকের নির্বাচনী একটি অস্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। সেই কার্যালয়ে নৌকা সমর্থনের নেতাকর্মীদের নির্বাচনী কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দেখা গেছে।

তবে নিরবে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে দলীয় নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বিএনপি সমর্থক জানান, হামলা, মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে ধানের শীষের সমর্থকরা কৌশলে প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সন্ধ্যার পর নির্বাচনী এলাকায় ভোটারদের কাছে তাদের প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। তবে যে এলাকায় ভোট প্রার্থনা করেন সেই এলাকায় বেশিক্ষণ তারা অবস্থান করেন না। ভোট প্রার্থনা শেষেই তারা কৌশলে ওই এলাকা ত্যাগ করেন।

এদিকে পার্থ গোপনে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে গিলেও জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল হুদা প্রকাশ্যে তাদের প্রচারণা চালিয়ে যেতে দেখা গেছে। পুরো নির্বাচনী এলাকায় তাদের পোস্টারের ছড়াছড়ি দেখা গেছে। অলিতে-গলিতে পোস্টার সাটানো রয়েছে।

এছাড়াও ট্রাক ও রিকশাযোগে মাইকিং করে তারা নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবে বাসদের এসএম আহসান হাবিব, জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আমিনুল হক তালুকদার, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দলের আলী হায়দার ও বিকল্প ধারার এ কে এম সাইফুর রশিদের কোনো ধরনের প্রচারণা দেখা যায়নি। শুধু মাত্র আহসান হাবিবের কয়েকটি ব্যানার গুলশানের বিভিন্ন এলাকায় লাগানো রয়েছে। বাকিদের কোনো ব্যানার বা পোস্টার চোখে পড়েনি।

 

টাইমস/কেআরএস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের জন্য আমরা প্রস্তুত: প্রেস সচিব Oct 17, 2025
img
২৩ ইউনিটের চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রামের আগুন, তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি Oct 17, 2025
img
বিন সালমানের ওয়াশিংটন সফরের দিকে তাকিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন Oct 17, 2025
img
ওয়াশিংটনে জেলেনস্কির আবেদন, ট্রাম্পের ঠান্ডা জবাব Oct 17, 2025
ঘুমানোর যে সুন্নত আপনাকে সুস্থ রাখে | ইসলামিক টিপস Oct 17, 2025
আমলে সালেহ কি? | প্রশ্নোত্তর Oct 17, 2025
আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় নেয়ামত যেটা | ইসলামিক জ্ঞান Oct 17, 2025
ঘুমানোর যে সুন্নত আপনাকে সুস্থ রাখে | ইসলামিক টিপস Oct 17, 2025
সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ নির্বাচনে রাবি প্রশাসনকে ধন্যবাদ দিলেন শিবির সেক্রেটারি Oct 17, 2025
কোন দলীয় পরিচয়ে কাজ করবে না রাকসুর নবনির্বাচিতরা-রাকসু জিএস Oct 17, 2025
রাকসু নির্বাচনে বিজয় পরবর্তী যা বললেন নবনির্বাচিত ভিপি Oct 17, 2025
তরুণীকে পোশাক নিয়ে হেনস্তা, ভিডিও ভাইরালের পরে গ্রপ্তার Oct 17, 2025
img
বিয়ের পর চেহারা দেখলেই বোঝা যায় মেয়েরা কতটা সুখী : মেহজাবীন Oct 17, 2025
img
ক্রিকেটারদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিয়ে প্রধান কোচের বার্তা Oct 17, 2025
img
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান নিয়ে যা বললেন রাশেদ খান Oct 17, 2025
img
ফের ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল ফিলিপাইন Oct 17, 2025
img
ভারতে মানবপাচার কেলেঙ্কারি: গ্রেপ্তার বাংলাদেশি ‘গুরু মা’ Oct 17, 2025
img
হামজাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আনতে চান ক্রীড়া সম্পাদক নার্গিস Oct 17, 2025
img
শিবিরকে হারাইতে হলে মেধাবী হইতে হবে : মির্জা গালিব Oct 17, 2025
img
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মারুফার না থাকার কারণ জানালেন কোচ ও অধিনায়ক Oct 17, 2025