স্বাদ আর পুষ্টিগুণে অনন্য ড্রাগন ফল

ড্রাগন মানে তো রূপকথার সেই ভয়াবহ প্রাণী, যার মুখ দিয়ে আগুন বের হয়। কিন্তু এমন ভয়াবহ প্রাণীটির নামে যে ‘ড্রাগন ফ্রুট’ বা ড্রাগন ফল রয়েছে তা কিন্তু সত্যিই সুস্বাদু ও লোভনীয়। এতকাল ফলটি আমাদের কাছে ভিনদেশি হয়েই ছিল, যা বর্তমানে আমাদের দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ২০০৭ সালে থাইল্যান্ড, ফ্লোরিডা ও ভিয়েতনাম থেকে এই ফলের বিভিন্ন জাত আনা হয়। ড্রাগন ফলের গাছ এক ধরনের ক্যাকটাস জাতীয় গাছ। এই গাছের কোন পাতা নেই। ড্রাগন ফলের গাছ সাধারণত ১.৫ থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে।

বর্তমানে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বারি) কর্তৃক উদ্ভাবিত ড্রাগন ফলের নতুন জাতটি হলো বারি ড্রাগন ফল-১ যা দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়াতে জনপ্রিয় ফল। এ ফলের আকার বড়, পাকলে খোসার রং লাল হয়ে যায় ,শাঁস গাঢ় গোলাপী রঙের, লাল ও সাদা এবং রসালো প্রকৃতির । ফলের বীজগুলো ছোট ছোট কালো ও নরম । একটি ফলের ওজন ১৫০ গ্রাম থেকে ৬০০ গ্রাম পর্যন্ত হয়ে থাকে।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, ড্রাগন ফল ভিটামিন-সি, মিনারেল এবং উচ্চ ফাইবারযুক্ত। ফলে ফিবার, ফ্যাট, ক্যারোটিণ, প্রচুর ফসফরাস, এসকরবিক এসিড, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন রয়েছে।

প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য ড্রাগন ফলে রয়েছে- পানি- ৮০-৯০ গ্রাম, শর্করা- ৯-১০ গ্রাম, প্রোটিন- ০.১৫-০.৫ গ্রাম, আঁশ- ০.৩৩-০.৯০ গ্রাম, খাদ্যশক্তি- ৩৫-৫০ কিলোক্যালরি, চর্বি- ০.১০-০.৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম- ৬-১০ মি গ্রাম, আয়রন- ০.৩-০.৭ মি.গ্রাম, ফসফরাস- ১৬-৩৫ গ্রাম, ক্যারোটিন- (ভিটামিন-এ) থায়ামিন, রিবোফ্লাভিন সামান্য এবং ভিটামিন- বি-৩ ০.২ – ০.৪ মি গ্রাম।

চলুন জেনে নিই ড্রাগন ফলের অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা-

বয়সের ছাপ দূর করা
ড্রাগন ফলে থাকা ভিটামিন-বি৩ রক্তের কোলেস্টেরল কমায় এবং ত্বক মসৃণ রাখে। যা মানুষের বয়সের ছাপ দূর করতে সাহায্য করে থাকে। এছাড়া ত্বককে দৃঢ় রাখতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দরকার হয় শরীরের। যা এই ফলে রয়ছে। এগুলো ক্যান্সারের সঙ্গেও লড়াই করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ
২০১১ সালে এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অব ক্যান্সার প্রিভেনশনে প্রকাশিত গবেষণায় বলা হয়, প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ‘লাইকোপেনে’ নামক পুষ্টি উপাদান গ্রহণ না করলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও ড্রাগনে রয়েছে ক্যারোটিন। যা শরীরে থাকা টিউমার ধ্বংস করতে পারে।

হজম প্রক্রিয়া ঠিক রাখে
খাদ্যে আঁশের পরিমাণ বেশি থাকলে পরিপাক প্রক্রিয়া ঠিক ভাবে কাজ করে। উচ্চ আঁশের ড্রাগন ফল তাই কোষ্ঠকাঠিন্য এবং বদহজম প্রতিরোধেও কার্যকর। এছাড়া আঁশ শরীরের চর্বি কমায়।

সুস্থ হৃদপিণ্ড
খারাপ কোলেস্টেরল কমানোর মাধ্যমে হৃদযন্ত্র ভাল রাখে ড্রাগন। ভাল কোলেস্টেরলও বাড়ায় এ ফল। ২০১০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে ড্রাগন খেলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে।

ডায়াবেটিস
বেশি পরিমাণে আঁশ থাকায় ড্রাগন খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্থিতিশীল থাকে। গবেষকরা বলছেন, খাদ্য তালিকায় নিয়মিত ড্রাগন থাকলে ডায়াবেটিস সংশ্লিষ্ট সমস্যাগুলো প্রতিরোধ করা সম্ভব।

রোগ প্রতিরোধে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির সব উপাদানই রয়েছে ড্রাগনে। বিশেষত এর প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি কার্যকর রাখে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে। এছাড়া এ ফলে মিনারেলস, পাইটোঅ্যালবুমিনও রয়েছে উচ্চ পরিমাণে। নিয়মিত খেলে এই বিদেশি ফলটি আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখবে।

চোখ ভালো রাখে
ড্রাগন ফল ক্যারোটিন সমৃদ্ধ। ফলে এটি চোখ ভালো রাখতে সাহায্য করে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: