লবণের ভালো-মন্দ দিক

লবণ বা নুন​ হলো খাদ্যে ব্যবহৃত এক প্রকারের দানাদার পদার্থ, যার মূল উপাদান হলো সোডিয়াম ক্লোরাইড। এটি প্রাণীর জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য, কিন্তু অধিকাংশ স্থলজ উদ্ভিদের জন্য বিষবৎ। লবণের স্বাদকে মৌলিক স্বাদের একটি বলে গণ্য করা হয়। পৃথিবীর সর্বত্র এটি খাদ্য প্রস্তুতিতে ব্যবহার করা হয়।

মানুষের খাদ্যে বিভিন্ন ধরণের লবণ ব্যবহার করা হয়। যেমন অপরিশোধিত সৈন্ধব লবণ, পরিশোধিত খাবার লবণ, আয়োডিনযুক্ত লবণ ইত্যাদি। লবণ দেখতে দানাদার, সাদাটে বর্ণের। সমুদ্রের পানি থেকে অথবা খনি থেকে লবণ আহরণ করা হয়। এছাড়া লবণাক্ত কূপ অথবা লবণাক্ত হ্রদের পানি থেকেও লবণ আহরণ করা হয়ে থাকে।

খাবার পাতে হোক বা রান্নায় লবণ খাবারের স্বাদ বদলে দেয়। এটি কাঁচা খেলে যেমন অপকার ঠিক তেমনি এটি একদম না খেলেও ক্ষতি। লিভার, কিডনি, হার্টের মতো শরীরের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশের কার্যকলাপ লবণের উপর নির্ভর করে। তাই লবণের খাওয়ার ভালো ও মন্দ দিক সবারই জেনে রাখা দরকার।

আসুন জেনে নেয়া যাক, লবণ খাওয়ার ভালো দিক–

  • অতিরিক্ত ওজন কমাতে লবণ একটি শ্রেষ্ঠ উপাদান হতে পারে। ওজন অতিরিক্ত হলে রোগ ব্যাধি বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ওজন হ্রাস করা লবণের উপকারিতার মধ্যে অন্যতম।

  • লবণ ব্লাড প্রেসার হাই করতে উপযোগী। তাই যাদের ব্লাড প্রেসার কম, তারা খাবার পাতে এক চিমটে লবণ খেতে পারেন।
  • ত্বকের মরা কোষ দূর করে ত্বককে কোমল ও মসৃণ করে তুলতে লবণের ভূমিকা অপরিহার্য। লবণ বডি স্ক্রাব হিসাবে খুব ভালো একটি উপাদান।
  • লবণ মুখের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই করতে পারে। নিয়মিত লবণ জলের গার্গল করলে মুখের ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস হয় এবং মাড়ির ব্যথা, দাঁতের ব্যথা উপশম হয়।
  • লবণে রয়েছে সোডিয়াম, যা মস্তিষ্ক সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে। সোডিয়াম শরীরের জল প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং স্নায়ুতন্ত্রকে সঠিকভাবে কাজ করতে সহায়তা করে।
  • খাবার হজম করতে সাধারণত হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড প্রয়োজন হয়। আর এই অ্যাসিড ক্লোরিন ও হাইড্রোজেন উপাদানের সমন্বয়ে উৎপন্ন হয়। এই উপাদান দুটি লবণে বিদ্যমান।

অনেকেই রান্না করা খাবারের ওপর লবণ ছিটিয়ে খান। এভাবে কাঁচা লবণ খেলে উচ্চ রক্তচাপের পাশাপাশি বিভিন্ন সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। লবণের খনিজ উপাদান শরীরের জন্য উপকারী হলেও মাত্রা বেশি শরীরের জন্য ভালো নয়।

আসুন জেনে নেয়া যাক, অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার মন্দ দিক–

  • অতিরিক্ত লবণ খাওয়া হলে রক্তচাপ বৃদ্ধি, পেটে ক্যান্সার, স্থূলতা এমনকি হাঁপানির সমস্যা দেখা দেয়। অতিরিক্ত লবণ খাওয়া হলে হার্ট ও কিডনির সমস্যা দেখা দিতে পারে। স্বাস্থ্য গবেষকদের মতে, রক্তসঞ্চালন প্রক্রিয়া ও স্নায়ুতন্ত্রের উপরেও খারাপ প্রভাব ফেলে কাঁচা লবণ।

  • খাবারে বাড়তি লবণ নেয়া মানে অসুখকে দাওয়াত দেয়া। রান্না করা হলে লবণের লৌহযৌগের সরলীকরণ ঘটে এবং তা খুব সহজেই শোষিত হয়। কাঁচা লবণের লৌহযৌগ একই থাকে এবং তা চাপ বাড়ায়। ফলে শরীরে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।
  • ক্লিনিকাল ইনভেস্টিগেশন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত লবণাক্ত খাবার তৃষ্ণা কমায় এবং ক্ষুধা বাড়ায়।
  • অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করলে হাড় থেকে ক্যালসিয়াম ক্ষয় হতে পারে। যা অস্টিওপরোসিসের সমস্যা হতে পারে। তাই যাদের হার্টের অসুখ রয়েছে বিশেষত বয়স্কদের লবণ খাওয়া পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে।
  • বাইরের খাবার যেমন জাঙ্ক ফুড বা স্ট্রিট ফুডগুলিতে বেশি করে লবণের পরিমাণ থাকে। এই ধরনের গ্রহণে হার্টের রোগ এবং স্ট্রোকের প্রবণতা থাকে।
  • অত্যধিক পরিমাণ লবণ খাওয়ার জন্য হৃদ চাপ বেড়ে যায়। ফলে কিডনি থেকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম নিঃসৃত হয় এবং কিডনিতে পাথর সৃষ্টি হয়।
  • লবণের কারণে ব্লাড প্রেসার বেড়ে যায়। যার ফলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

যে পরিমাণ লবণ খাওয়া উচিত
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ এর স্বাস্থ্য গবেষকদের মতে, পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দৈনিক দুই চা-চামচ লবণ খাওয়া দরকার। ভারতীয় পুষ্টিবিদ তানিয়া কাপুর জানান, ১০ গ্রাম লবণে ৪০০ মি.গ্রা. সোডিয়াম থাকে যা প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য প্রযোজ্য।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, লবণ অতিরিক্ত বা খুব কম খাওয়া ঠিক নয়। তবে প্রতিদিন দুই গ্রাম বা হাফ চা চামচের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখুন লবণের পরিমাণ। এছাড়া কাঁচা লবণ খাবেন না।

  

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ