‘ফলের রানী’ আনারসের যত পুষ্টিগুণ

আমকে যদি ফলের রাজা বলা হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবে আনারস ‌‘ফলের রানী’। কেননা মাথায় মুকুট পরে কাঁটার আসনে বসে গাম্ভীর্যের সঙ্গে আনারস গর্বিতভাবে জীবনযাপন করে। তাছাড়া ছানাবড়া চোখ শুধু আমাদেরকেই ধাঁধায় না, চোখ তুলে খেতেও বেশি কষ্ট করতে হয়। চেহারা, রূপ-লাবণ্য সব মিলিয়ে আনারসই ফলের রানী হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার দাবি রাখে।

এছাড়া সৌন্দর্যের জন্য কাব্যরসিকরা একে ‘স্বর্ণকুমারী’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। তাইতো ছন্দাকারে বলা যায়- “আনারস মধুর ফল পুষ্টিগুণে ভরা, অর্থ দেয় লাভ দেয় দূর করে জরা।”

সুমিষ্ট গন্ধ ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ আনারসের বৈজ্ঞানিক নাম Anarus comosus| Bromeliaceae পরিবারভুক্ত। বাংলাদেশে হানিকুইন, জায়েন্ট কিউ (কালেঙ্গা) ও ঘোড়াশাল-এই তিন জাতের আনারস চাষ হয়ে থাকে।

রসালো এই ফলটি নানা খাদ্য উপাদানে বরপুর, যা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধে বিরাট ভূমিকা পালন করে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। যেগুলো শরীরের কোষকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য আনারসে পাওয়া যায় ৫০ কিলোক্যালরি শক্তি। এতে ভিটামিন-এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ১০০ গ্রাম আনারসে ০.৬ ভাগ প্রোটিন, ০.১২ গ্রাম সহজপাচ্য ফ্যাট, ০.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১৩.১২ গ্রাম শর্করা, ০.১১ গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৪ মি. গ্রাম ভিটামিন-২, ভিটামিন-সি ৪৭.৮ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০২ গ্রাম, আঁশ ১.৪ গ্রাম এবং ১.২ মিলি গ্রাম লৌহ।

এতে গেল পুষ্টিগুণ। চলুন জেনে নিই, আনারসের ওষধিগুণ-

রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা
আনারসের আছে ভিটামিন-সি, যা বহু রোগ প্রতিরোধে দেহকে প্রস্তুত করে। এছাড়া আরও কিছু ভিটামিন ও মিনারেল থাকার কারণে আনারস সার্বিকভাবে দেহের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ওজন নিয়ন্ত্রণ করতে
আনারসে আঁশ থাকে, যেটাই ফ্যাট নেই বললেই চলে। ওজন কমানোর জন্য আনারস জুস হিসেবে বা সালাদ হিসেবে খাওয়া যেতে পারে। জুস হিসেবে খেলে যেন বাড়তি চিনি দেয়া না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

মজবুত হাড় তৈরিতে
আনারসে আছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ। ক্যালসিয়াম হাড়ের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ম্যাঙ্গানিজ হাড়কে করে তোলে মজবুত।

দাঁত ও মাড়ির সুস্থতায়
এই ফলের ক্যালসিয়াম দাঁতের সুরক্ষায় কাজ করে। মাড়ির যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে এটি। প্রতিদিন আনারস খেলে দাঁতে জীবাণুর আক্রমণ কম হয় এবং দাঁত ঠিক থাকে।

সুস্থ চোখের জন্য
গবেষণায় দেখা যায়, আনারস ম্যাক্যুলার ডিগ্রেডেশন হওয়া থেকে আমাদের রক্ষা করে। আনারসে আছে বেটা ক্যারোটিন। এটি নিয়মিত খেলে ভালো থাকে চোখ।

হজমশক্তি বৃদ্ধিতে
আনারসে আছে ব্রোমেলিন, যা আমাদের হজমশক্তিকে উন্নত করতে সহায়তা করে। বদহজম বা হজমজনিত যে কোনো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রতিদিন আনারস খাওয়া যেতে পারে।

সুস্থ রক্ত প্রবাহ
দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় আনারস। ফলে শিরা-ধমনির (রক্তবাহী নালি) দেয়ালে রক্ত জমে না এবং সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত যেতে পারে।

ত্বকের যত্নে
আনারসে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি, বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ত্বকের ডেড সেল দূর করে। এছাড়া ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে বাঁচায়, অ্যান্টিএজিংয়ের কাজ করে এবং ত্বকে কোলাজেন তৈরি করে ইলাস্টিসিটি ধরে রাখে।

কৃমিনাশক হিসেবে
কৃমিনাশক হিসেবে আনারসের জুস ভালো কাজ করে। নিয়মিত আনারসের জুস খেলে কৃমির সমস্যা দূর করা সম্ভব।

সতর্কতা

  • আনারসে বিদ্যমান ব্রোমালিন ঋতুস্রাবকে প্রভাবিত করে, এতে গর্ভপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই গর্ভবতী মায়েদের অতিরিক্ত আনারস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • আনারস খেলে অনেকের অ্যালার্জি বেড়ে যায়। তাই আনারস কেটে লবণ দিয়ে ধুয়ে নেয়া উচিত।
  • দাঁতে যাদের ক্যাভেটিস আছে তাদের আনারস না খাওয়া ভালো।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: