উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের যেসব খাবার খেতে মানা

উচ্চ রক্তচাপ বর্তমান সময়ে সবচেয়ে আলোচিত এক জটিল শারীরিক সমস্যার নাম। এটা কোনো রোগ নয়, রোগের উপসর্গ মাত্র। বর্তমান বিশ্বে এটি মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের অনেক ব্যক্তি এই রোগ বহন করে চলছেন। যেকোনো মুহূর্তে এটি মানুষকে মৃত্যুর মুখে ফেলতে পারে।

বয়স ও লিঙ্গভেদে দেহ ও মনের স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ যদি নির্ধারিত মাত্রার উপরে অবস্থান করে তাকে উচ্চ রক্তচাপ বলে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির বেলায় ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৯০মি.মি.পারদ চাপ এবং সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৪০মি.মি.পারদ চাপের বেশি হলে উচ্চরক্তচাপ চিহ্নিত করা হয়।

আজকাল যে কোনো বয়সী মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা দেখা যায়।

সাধারণত অতিরিক্ত ওজন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে অনেকেই খুব কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে আক্রান্ত হন। উচ্চ রক্তচাপ হলে খাবারের নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের ব্লাড প্রেসারের সমস্যা রয়েছে, তারা অনায়াসেই সেই সমস্যা দূর করতে পারেন শুধু স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে। তাই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রত্যেক রোগীর উচিত রক্তচাপ বাড়ায় এমন খাবার পরিহার করা।

চলুন জেনে নিই, উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের যেসব খাবার খাওয়া উচিত নয়-

লবণ
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় প্রথমেই যে খাবারটি খেতে মানা, তা হলো- লবণ।

হাই ব্লাড প্রেসারের অন্যতম কারণ হল শরীরে মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম জমা হওয়া। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে, তাদের জন্য লবণ খুবই ক্ষতিকর।

তাই খাবারের সঙ্গে বাড়তি লবণ খাওয়া এবং বেশি লবণযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।

ফাস্ট ফুড এবং বেকারি খাবার
বর্তমান যুগে ফাস্ট ফুড খাওয়া অনেকের দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে।

প্যাকেটজাত ও প্রসেসড ফুডগুলির মধ্যেই সব থেকে বেশী উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিকারী উপাদান থাকে। অনেকেই জানেন না যে, এই ফাস্ট ফুড এবং বেকারি খাবারে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, প্রিজারভেটিভ, বিষাক্ত রঙ এবং ক্ষতিকারক চর্বি ডালডা ব্যাবহার করা হয়।

কফি
যারা কফি খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য দুঃসংবাদ হলো, কফি খেলে সাময়িক সময়ের জন্য রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে, তাদের জন্য কফি খাওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ ক্যাফেইন রক্তনালীকে সরু করে দেয়, ফলে হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া রক্তচাপের ফলে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

রেড মিট বা লাল মাংস
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় রেড মিট অর্থাৎ গরুর মাংস, খাসির মাংস ও মহিষের মাংস একেবারেই বর্জন করা একান্তভাবে জরুরি। কারণ এসব লাল মাংসে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে, যা হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়।

মুরগীর চামড়া এবং ডিমের কুসুম
হাই প্রেসারের রোগীরা মুরগীর চামড়া এবং ডিমের কুসুম খেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়, সেই সঙ্গে বেড়ে যায় হৃদরোগের ঝুঁকিও। তাছাড়া মুরগির ত্বকে উচ্চ মাত্রার চর্বি থাকে, যা মানুষের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।

চিনি যুক্ত খাবার
অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ এসব খাবার আমাদের শরীরে মেদ জমতে সাহায্য করে। ফলে ওজন বৃদ্ধি পেয়ে শরীর মোটা হয়ে যায়। তাছাড়া অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়।

আচার ও সস জাতীয় খাবার
যারা হাই প্রেসারের সমস্যায় ভুগছেন, তাদের আচার ও সস জাতীয় খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ আচার ও সসে লবণ এবং চিনির পরিমাণ খুব বেশি থাকে, যা প্রেসারের রোগীদের শরীরের জন্য একেবারেই ভালো নয়।

অ্যালকোহল এবং কোমল পানীয়
অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় খেলে দ্রুত রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া এটাও মনে রাখা উচিত যে অ্যালকোহল ও কোমল পানীয়গুলোতে প্রচুর ক্যালোরি আছে, যা ওজন বৃদ্ধি করে। তাই অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় কিংবা কোমল পানীয় না খেয়ে তাজা ফলের রস কিংবা লেবুর শরবত খাবেন।

 

টাইমস/জিএস/টিএইচ

Share this news on: