কমলার ৪০ গুণ ভিটামিন-সি কাঁকরোলে

মৌসুমের সবজিগুলোর মধ্যে কাঁকরোল অন্যতম। যদিও এ সবজি অনেকেই খেতে পছন্দ করেন না; অথচ সারা গায়ে কাঁটাযুক্ত এ সবজির বিস্ময়কর পুষ্টিগুণ ও উপকারিতার কথা বিভিন্ন গবেষণায় বারবার উঠে এসেছে। এছাড়া কাঁকরোলের পুষ্টিগুণের পাশাপাশি রয়েছে অনেক ভেষজ গুণ, যা আমাদের দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জন্য খুব উপকারী।

কাঁকরোল (Teasel gourd) এক ধরনের কুমড়া গোত্রীয় ছোট সবজি, যা মূলত গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালে বাংলাদেশে চাষ হয়ে থাকে। কাঁকরোল Cucurbitaceae পরিবারের, যার ইংরেজি নাম Teasel gourd/spine gourd/kantola এবং বৈজ্ঞানিক নাম Momordica dioica। কাঁকরোল গাছের কাঁচা ফল তরকারী, ভাজি বা সিদ্ধ করে ভর্তা হিসেবে খাওয়া হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কাঁকরোলের গাছ থেকে শুরু করে পাতা, শেকড়, ফল ও বীজ সবকিছুই আমাদের দেহের জন্য উপকারী। এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। রয়েছে সর্বোচ্চ পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’ ও ‘সি’। এছাড়া বিভিন্ন খনিজপদার্থ যেমন- আয়রন, জিঙ্ক, পটাশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম ছাড়াও এটি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্রোমিয়ামের ভালো উৎস। এতে আরও আছে ফাইবার, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, লুটেইন, জিয়াজেন্থিন, যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, কাঁকরোলে টমেটোর চেয়ে ৭০ গুণ বেশি লাইকোপিন, গাজরের চেয়ে ২০ গুণ বেশি বিটা ক্যারোটিন, কমলার চেয়ে ৪০ গুণ বেশি ভিটামিন-সি এবং ভুট্টার চেয়ে ৪০ গুণ বেশি জিয়াজেন্থিন রয়েছে।

চলুন জেনে নেয়া যাক, কাঁকরোলের নানাবিধ পুষ্টিগুণ সম্পর্কে-

কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়
যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি বা যাদের উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলের রয়েছে তারা নিশ্চিন্তে কাঁকরোল খেতে পারেন। এটি উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটায়
কাঁকরোলে চোখের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী ভিটামিন, বিটাক্যারোটিন ও অন্যান্য উপাদান রয়েছে, যা দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে সাহায্য করার পাশাপাশি চোখের ছানি প্রতিরোধেও সাহায্য করে।

ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, কাঁকরোলের পুষ্টি উপাদান ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং ক্যান্সার কোষের সংখ্যা বৃদ্ধিকে ধীর গতির করতে পারে। এতে নির্দিষ্ট একটি প্রোটিন থাকে, যা ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে প্রতিহত করতে পারে।

তারুণ্য ধরে রাখে
কোষের কার্যক্রমকে উদ্দীপিত করার মাধ্যমে এবং স্ট্রেস কমানোর মাধ্যমে বয়স বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে ধীর গতির করতে সাহায্য করে কাঁকরোল। কোলাজেনের গঠনকে পুনর্নির্মাণের মাধ্যমে বয়সের ছাপ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে এটি।

অ্যানিমিয়া প্রতিহত করে
কাঁকরোলে প্রচুর আয়রন থাকার পাশাপাশি ভিটামিন-সি ও ফলিক এসিডও রয়েছে। এ কারণে নিয়মিত এটি খেলে অ্যানিমিয়ার প্রতিহত করা সম্ভব হয়।

বিষণ্ণতা প্রতিহত করে
কাঁকরোলে সেলেনিয়াম, মিনারেল ও ভিটামিন রয়েছে, যা নার্ভাস সিস্টেমের উপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে। তাই বিষণ্ণতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করে কাঁকরোল।

কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ প্রতিরোধ করে
যেহেতু কাঁকরোলে উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, তাই এটি কার্ডিওভাস্কুলার রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। সক্রিয় জীবনযাপনের পাশাপাশি কাঁকরোল খাওয়া হৃদস্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: