অতিরিক্ত মানসিক চাপের বিভিন্ন উপসর্গ

মানসিক চাপ আমাদের দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। গবেষণায় দেখা গেছে, পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মধ্যে প্রায় ৩৩ শতাংশই মারাত্মক মানসিক চাপে ভোগেন। দীর্ঘদিন মানসিক চাপে থাকার ফলে দেহ ও মনে নানা ধরনের বিরূপ প্রভাব পড়ে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন তাদের পাব-মেড জার্নালে বিভিন্ন সময় মানসিক চাপ সংক্রান্ত নানা গবেষণা প্রকাশ করে আসছে। সেসব গবেষণার উপর ভিত্তি করে অতিরিক্ত মানসিক চাপের কিছু লক্ষণ বাংলাদেশ টাইমস এর পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-

দুর্বলতা ও নিদ্রাহীনতা
দীর্ঘ দিনের মানসিক চাপের ফলে শারীরিক দুর্বলতা সৃষ্টি হয়। ২ হাজার ৪৮৩ জনের উপর করা জরিপে দেখা গেছে, দুর্বলতার জন্য মানসিক চাপ মারাত্মকভাবে দায়ী। এছাড়াও অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও মানসিক চাপ নিদ্রাহীনতা সৃষ্টি করে। ঘুমের স্বল্পতার ফলেও দুর্বলতা দেখা দেয়।

ব্রণ
বলা হয়ে থাকে যে ব্রণের মধ্য দিয়ে মানসিক চাপ নিজেকে প্রকাশ করে। কারণ মানুষ যখন মানসিক চাপে ভোগে তখন বারবার মুখে হাত দেয়। এর ফলে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের মাধ্যমে ব্রণ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপে ভোগা লোকদের মধ্যে সিংহভাগই ব্রণে আক্রান্ত। তবে মানসিক চাপ ঠিক কিভাবে ব্রণের সৃষ্টি করে তা এখনও নির্দিষ্টভাবে উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি।

ঘন ঘন জ্বর
আপনি যদি প্রায়শই জ্বরে আক্রান্ত হতে থাকেন, তাহলে হয়ত মাথা ব্যথাই এর কারণ। প্রায় ৬১ শতাংশ মানুষ দীর্ঘ দিনের মানসিক চাপের ফলে ঘন ঘন জ্বরে ভোগেন। কারণ, মানসিক চাপ আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয়।

যৌন আকাঙ্ক্ষা হ্রাস 
মানসিক চাপের ফলে আমাদের দেহে স্ট্রেস হরমোন বেড়ে যায়। অন্যদিকে সেক্স হরমোন বা লিবিডো হ্রাস প্রাপ্ত হয়। ফলে যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যায়। অতি মাত্রায় মানসিক চাপ নেতিবাচকভাবে আমাদের যৌন আকাঙ্ক্ষা, যৌন উদ্দীপনা এবং যৌন মিলনে তৃপ্তি লাভকে প্রভাবিত করে।

মাথা ব্যথা
মানসিক চাপের ফলে প্রচণ্ড মাথা ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে। ২৬৭ জনের উপর চালানো একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপের সময় প্রায় ৪৫ শতাংশই মাথা ব্যথাতে আক্রান্ত হন। ১৫০ জন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের উপর পরিচালিত আরেক গবেষণায় দেখা গেছে প্রায় ৬৭ শতাংশ সদস্য মানসিক চাপে মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

হজমে সমস্যা
মানসিক চাপ আমাদের প্রাকৃতিক হজম প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে থাকে। ফলে বিপাক ক্রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নানা প্রক্রিয়া সঠিকভাবে সম্পন্ন হয়না। এতে করে হজমের সঙ্গে সম্পর্কিত নানাবিধ সমস্যা যেমন- ডাইরিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য প্রভৃতি দেখা দেয়।

ক্ষুধামন্দা
একটু লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকলে আমাদের খিদা পায় না, খাওয়ার ইচ্ছা এবং রুচি কমে যায়। আবার অনেকের ক্ষেত্রে উল্টো ঘটনাও দেখা যায়। সঠিক সময়ে খাবার না খেয়ে অনেকেই মাঝরাতে প্রচণ্ড ক্ষুধা অনুভব করেন।

দ্রুত হৃদ-স্পন্দন
দ্রুততর হৃদ-স্পন্দন প্রচণ্ড মানসিক চাপে থাকার অন্যতম একটি উপসর্গ। গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপে থাকলে আমাদের রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং হৃদ-স্পন্দন দ্রুততর হয়। তবে অন্যান্য অনেক কারণেই হৃদ-স্পন্দন বৃদ্ধি প্রাপ্ত হতে পারে।

অবসাদ
মানসিক চাপের সঙ্গে অবসাদ গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। অতিরিক্ত ও দীর্ঘ দিনের মানসিক চাপ থেকে অবসাদের সূত্রপাত ঘটে। ৮১৬ জন অবসাদগ্রস্ত রোগীদের উপর করা এক জরিপে দেখা গেছে, এরা সবাই কম-বেশি মানসিক চাপের শিকার।

দৈনন্দিন জীবনে কম-বেশি সবাই আমরা মানসিক চাপ মোকাবেলা করে থাকি। তবে অতিরিক্ত মানসিক চাপ হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আলঝেইমার, উচ্চ রক্তচাপ প্রভৃতি রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। শরীর চর্চা, মেডিটেশন, খেলাধুলা প্রভৃতি নানা উপায়ে মানসিক চাপ হ্রাস করা সম্ভব। তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডি.কম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: