আমাদের হৃদপিণ্ড জন্ম হতে মৃত্যু অব্দি নিরল ভাবে কাজ করতে থাকে। তাই নিজের স্বার্থেই দেহের গুরুত্বপূর্ণ এই অঙ্গটির যত্ন নেয়া অতীব জরুরি। দৈনন্দিন যাপনে ছোট কিছু পরিবর্তন আনার মধ্য দিয়ে আমরা চাইলে খুব সহজেই আমাদের হৃদপিণ্ডকে সুস্থ ও সবল রাখতে পারি।
চলুন জেনে নিই, সুস্থ হৃদয়ের জন্য যা করতে হবে-
পর্যাপ্ত ঘুমান
হৃদপিণ্ড সুস্থ ও সবল রাখতে হলে পর্যাপ্ত ঘুমের বিকল্প নেই। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় প্রতিদিন কমপক্ষে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ৭ ঘণ্টার কম বা ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমায় তাদের ধমনীতে যারা প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুমায় তাদের তুলনায় ক্যালসিয়ামের মাত্রা বেশি। ধমনীতে ক্যালসিয়াম বেড়ে যাওয়া হৃদরোগের লক্ষণ।
তবে শুধু ঘুমালেই হবে না, হৃদপিণ্ড সুস্থ রাখতে নিরবিচ্ছিন্ন গভীর ঘুম প্রয়োজন।
চাপমুক্ত থাকুন
নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা জরুরি। কারণ উচ্চ রক্তচাপ আমাদের ধমনীর দেয়ালের ক্ষতি করে এবং ক্ষত সৃষ্টি করে। ফলে হৃদপিণ্ডে রক্ত ও অক্সিজেন প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয় এবং হৃদপিণ্ড দ্রুত স্পন্দিত হতে বাধ্য হয়। এটি যথেষ্ট অক্সিজেন পায় না এবং অকেজো হতে শুরু করে।
১৮ বছরের পর থেকে প্রতি ৩-৫ বছর পরপর রক্তচাপ পরীক্ষা করুন। উচ্চ রক্তচাপ থাকলে প্রতিবছর তা পরীক্ষা করুন। লবণ কিংবা অ্যালকোহল খাওয়া কমিয়ে আনুন, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন। ডাক্তার পরামর্শ দিলে অবশ্যই ওষুধ গ্রহণ করুন।
সম্পৃক্ত চর্বি গ্রহণ কমিয়ে আনুন
সম্পৃক্ত চর্বি গ্রহণ করা কমিয়ে দিন, যা মাংসে ও দুগ্ধজাত পণ্যে পাওয়া যায়। এছাড়াও কৃত্রিমভাবে তৈরি চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়া কমান। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করিয়ে নিন। মনে রাখবেন, সব ধরনের চর্বি হৃদপিণ্ড ও ধমনীর জন্য ক্ষতিকর।
ডায়াবেটিস পরীক্ষা করুন
লাখ লাখ লোক জানেন না যে, তারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাই নিশ্চিন্ত হয়ে নিতে ডায়াবেটিস পরীক্ষা করিয়ে নিন। রক্তে থাকা উচ্চ মাত্রার শর্করা ধমনী ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে। যদি ডায়াবেটিস ধরা পড়ে তাহলে খাদ্যাভ্যাস ও দৈনন্দিন যাপনের পরিবর্তনের মাধ্যমে রক্তে উচ্চ মাত্রার শর্করা নিয়ন্ত্রণ করুন।
নিয়মিত শরীর চর্চার অভ্যাস করুন
প্রতিদিন ৩০ মিনিট করে সপ্তাহে অন্তত পাঁচদিন আমাদের শরীরচর্চা করা উচিৎ। আপনি যদি একেবারেই শরীরচর্চা না করে অভ্যস্ত হোন তাহলে অভ্যাস পরিবর্তন করুন। খুব বেশি বসে থাকবেন না। নড়াচড়া করুন, ঘাম ঝরান।
খাদ্য তালিকা হালনাগাদ করুন
প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক-সবজি ও বিভিন্ন শস্য দানা যেমন- বাদাম, কাজু, আখরোট, কিসমিস প্রভৃতি খাবার অভ্যাস গড়ে তুলুন। মৌসুমি সবজি ও ফলমূল বেশি পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস করুন। প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন ব্রেড, কেক, পাস্তা, নুডুলস, কুকিজ প্রভৃতি খাওয়া কমিয়ে আনুন। চিনিযুক্ত বিভিন্ন পানীয় গ্রহণের মাত্রা কমান।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
অতিরিক্ত ওজন আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ। তাই অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। তাছাড়া দেহে অতিরিক্ত চর্বি জমলে ধমনীতে চর্বি জমে তা বন্ধ বা সরু হয়ে যেতে পারে। তাই অবশ্যই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
ধূমপান বর্জন করুন
ধূমপান হৃদযন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সিগারেটের ধোয়াতে থাকা নিকোটিন আমাদের রক্তকে দূষিত করে আর রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। ধূমপান করলে উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। সুতরাং যদি ধূমপান করার অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই তা ছাড়ার চেষ্টা করুন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, উল্লেখিত ধাপগুলো অনুসরণ করে আপনি খুব সহজে দীর্ঘ ও সুস্থ জীবনের পথে পা বাড়াতে পারেন। আপনাকে সবগুলো ধাপ অনুসরণ করতেই হবে এমন কথা নেই। মাত্র ১টি থেকে ২টি ধাপ অনুসরণ করেই হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমিয়ে আনতে পারবেন। তথ্যসূত্র: ওয়েবএমডি
টাইমস/এনজে/জিএস