পুষ্টিগুণে অদ্বিতীয় আমলকীর যত উপকার

আমলকী, যা আমলা বা ইন্ডিয়ান গুজবেরি হিসেবেও অনেকের কাছে পরিচিত। এর স্বাদ তেমন কিছু আহামরি নয়। তবে এটি আসলে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ একটি ছোট ফল, যা আপনার শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এটি একটি শীতকালীন মৌসুমি ফল।

ফল ও সবজির মধ্যে সর্বাধিক পরিমাণে ভিটামিন-সি রয়েছে আমলকীতে। এটি একটি দুর্দান্ত ডিটক্সাইফাইং এজেন্ট (বিষমুক্ত করতে সক্ষম) হিসেবে কাজ করে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়তা করে।

সকালে আমলকী খাওয়া সর্বোত্তম, বিশেষত শীতকালে যখন তাপমাত্রা হ্রাস পায়। কোলন পরিষ্কার করার পাশাপাশি এটি শরীর থেকে অতিরিক্ত টক্সিন (বিষাক্ত পদার্থ) অপসারণ করে এবং এটি প্রাকৃতিক ভিটামিন-সি ও ক্যালসিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস। আমলকী খুশকি এবং অন্যান্য ত্বকের সমস্যার বিরুদ্ধেও কার্যকর বলে প্রমাণিত।

আমলকী ফলটি রান্নাঘরেও বেশ জনপ্রিয়। আচারের পাশাপাশি, আমলকী দিয়ে মুরব্বাও তৈরি করা যায়। কাঁচা চিবিয়ে, শুকনো আমলকী গুঁড়ো করে কিংবা আচার করেও এটি খাওয়া যায়, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী।

আমলকীর উপকারিতা সমূহ-

ভিটামিন-সি
আমলকীতে কমলার চেয়ে আট গুণ বেশি ভিটামিন-সি রয়েছে। আকাই বেরির দ্বিগুণ এবং ডালিমের চেয়ে প্রায় ১৭ গুণ বেশি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শক্তি রয়েছে আমলকীতে।

ঠাণ্ডার উপসর্গ উপশমে দুই চা চামচ আমলকীর গুঁড়োর সঙ্গে দুই চা চামচ মধু মিশ্রিত করে দিনে তিন থেকে চার বার খাওয়া যেতে পারে। ঠাণ্ডার হাত থেকে সুরক্ষার জন্য প্রতিদিন একবার নিয়মিত মিশ্রণটি খাওয়া উচিত।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আমলকীতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন-সি বিপাকক্রিয়া বিকাশের পাশাপাশি ঠাণ্ডা, কাশিসহ ভাইরাল ইনফেকশন ও ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। পাশাপাশি এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সহায়তা করে।

যদিও আমলকীর রস খেতে একটু তেতো স্বাদের, তবে এটি অত্যন্ত উপকারী। এটি মিছরি হিসাবেও গ্রহণ করা যেতে পারে। আমলকী, গুড় ও বিটলবণের মিশ্রণ দিয়ে আমলকীর মিছরি প্রস্তুত করা হয়। খাওয়ার ঠিক পরে দু-তিনটি আমলকীর ক্যান্ডি বা মিছরি খাওয়া যেতে পারে।



হজম ক্ষমতা বাড়ায়
আমলকী গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টকে পরিষ্কার রেখে স্বাস্থ্যকর মলত্যাগে সহায়তা করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্যসহ সাধারণ পাচনজনিত সমস্যাগুলি প্রতিরোধ করে। আমলকী খেয়ে অম্লতা ও বদহজমও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে আধা চা চামচ আমলকীর গুঁড়ো মিশিয়ে পান করলে হজম জনিত সমস্যা উপশম করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
ক্রোমিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস হিসেবে আমলকী শরীরকে ইনসুলিনের প্রতিক্রিয়ায় সহায়তা করে, যা ইনসুলিন সংবেদনশীলতা পরিচালিত করতে সহায়ক। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে সহায়তা করে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে খাদ্যাভ্যাসের অংশ হিসাবে সেবন করা যায়। তবে এটি নিয়মিত ডায়াবেটিসের ওষুধের বিকল্প নয়।

চুল ও ত্বকের জন্য ভালো
আমলকী চুলের জন্য টনিক হিসাবে কাজ করে। এটি অকালে চুল পাকা প্রতিরোধ করে, খুশকি রোধ করে, চুলের ফলিকেলগুলিকে শক্তিশালী করে এবং মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে। যার ফলে চুলের বৃদ্ধি ঘটে। আমলকী হলো অ্যান্টি-এজিং ফল, অর্থাৎ এটি বুড়িয়ে যাওয়া ধীর করে। প্রতিদিন সকালে মধুর সঙ্গে আমলকীর রস পান করলে ত্রুটিমুক্ত, স্বাস্থ্যকর ও ঝলমলে ত্বক পাওয়া যায়। তথ্যসূত্র: দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: