সেনাপ্রধানের ‘রাজনৈতিক’ বক্তব্যে ভারত জুড়ে সমালোচনা

ভারতের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াতের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ভারত জুড়ে চলছে সমালোচনা। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক ভারতের রাজনৈতিক মহলে তীব্র সমালোচনা চলছে। সম্প্রতি ভারতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে কংগ্রেস, বাম জোট, তৃণমূল কংগ্রেসসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠনের আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের ইঙ্গিত করে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত বলেছেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী আন্দোলনের নামে ‘অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতায় নেতৃত্বদাতারা নেতা নন। আর এই মন্তব্যই জন্ম দিয়েছে ভারতজুড়ে নতুন বিতর্কের।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) দিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রধান বলেন, ‘নেতা হয়ে ওঠার বিষয়টি পুরোপুরি নেতৃত্বনির্ভর। যখন আপনি সামনে এগোবেন, সবাই অনুসরণ করবে। নেতারাই জনতাকে সঠিক পথের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। তারা নেতা নন, যারা জনতাকে ভুল পথে টেনে নিয়ে যান, যেমন আমরা দেখছি অনেক কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে, তারা যেভাবে আমাদের শহরে-নগরে জনতাকে অগ্নিসংযোগ ও বিক্ষোভের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। এটা নেতৃত্ব নয়।’

জানা গেছে, সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল রাওয়াতের মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর। ভারতের সবচেয়ে ক্ষমতাধর বাহিনীর প্রধানের কার্যালয় থেকে বের হওয়ার পাঁচদিন আগে পরোক্ষভাবে বিজেপি সরকারের করা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের পক্ষে অবস্থানের কথা প্রকাশ করলেন বিপিন রাওয়াত।

এদিকে সেনাপ্রধানের এ ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্যে ক্ষুব্ধ কংগ্রেসসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। নাগরিক সমাজও বিস্ময় প্রকাশ করেছে জেনারেল রাওয়াতের ‘বিজেপি-ভাববাদী’ মন্তব্যে।

কংগ্রেসের মুখপাত্র ব্রিজেশ কালাপ্পা তার টুইটার অ্যাকাউন্টে এক বার্তায় বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনবিরোধী বিক্ষোভের বিরুদ্ধে সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের বক্তব্য পুরোপুরি সংবিধানবিরোধী। যদি আজ সেনাপ্রধানকে রাজনৈতিক বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ দেয়া হয়, কাল সেটা তাকে ক্ষমতা-দখলের উসকানি দেবে।

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে সোচ্চার নিখিল ভারত মজলিস-এ-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের (এআইএমআইএম) প্রধান ও লোকসভা সদস্য আসাদউদ্দিন ওয়াইসি অপর এক টুইট বার্তায় বলেন, নেতৃত্ব হলো কারও কার্যালয় অনুসারে (কথা বলার) সীমা জানা। জনগণের ক্ষমতা বোঝা এবং নিজে যে প্রতিষ্ঠানের প্রধান তার মর্যাদা রক্ষা করা।

জেনারেল রাওয়াতের বক্তব্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও উঠেছে সমালোচনার ঝড়। বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিষয়ে আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে জেনারেল রাওয়াত তার ‘সীমা’ ছাড়িয়ে যাওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করছেন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, সেনাপ্রধান হিসেবে অবসর নেয়ার পর বিপিন রাওয়াতকে নতুন তৈরি হওয়া পদ প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান (চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ) হিসেবে অধিষ্ঠিত করার কথা ভাবছে মোদি সরকার। সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন শাখার সঙ্গে সংযোগ রক্ষার পাশাপাশি সরকারের সামরিক পরামর্শদাতার দায়িত্ব পালন হবে প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানের কাজ। চার তারকা জেনারেল সম্মানে তিনি হবেন তিন বাহিনীর প্রধানদেরও প্রধান।

নরেন্দ্র মোদির সরকার বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস করলে প্রথমেই এর বিরুদ্ধে আসাম-ত্রিপুরা-মেঘালয়সহ দেশটির উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোতে বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমেই দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, কর্ণাটকসহ গোটা দেশে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভ ঠেকাতে বিভিন্ন জায়গায় নির্বিচারে গুলি ছুড়ছে পুলিশ। এতে প্রায় দু’ডজন মানুষের প্রাণহানি হয়েছে, যার বেশিরভাগ নিহত হয়েছে উত্তর প্রদেশে।

 

টাইমস/এসএন/টিএইচ

Share this news on: