গরু মোটাতাজাকরণে আধুনিক পদ্ধতি

গরু মোটাতাজাকরণ বলতে কিছু সংখ্যক গরু বা বাড়ন্ত বাছুরকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিশেষ ব্যবস্থাপনায় এবং উন্নত সুষম খাবার সরবরাহ করে ওই গরুর শরীরে অধিক পরিমাণ মাংস/চর্বি বৃদ্ধি করে বাজারজাত করাকেই বুঝায়।

দেশের প্রায় ৭০ ভাগ গ্রামীণ পরিবার পশু প্রতিপালনের সঙ্গে জড়িত থাকলেও গরু মোটাতাজাকরণের কলাকৌশল বা প্রযুক্তি ব্যবহারকারী পরিবারের সংখ্যা খুবই কম। যদিও গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি বাংলাদেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং একটি লাভজনক ব্যবসা।

গরু মোটাতাজাকরণের সুবিধা সমূহ

  • কম মূলধন ও কম জায়গার প্রয়োজন হয়।
  • অল্প সময়ের (৪-৬ মাসের) মধ্যে গরু মোটাতাজা করে অধিক মূল্যে বাজারে বিক্রয় করা যায় অর্থাৎ আর্থিক মুনাফা অর্জন করা যায়।
  • খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে লাভসহ মুনাফা ফেরত পাওয়া যায়।
  • এতে নারীদের কর্মসংস্থানে সুযোগ বেশি।
  • বসতভিটা আছে এমন সকল পরিবার স্বল্প বিনিয়োগ করে এ প্রকল্পের আওতায় আসার ব্যাপক সুযোগ লাভ করতে পারে।

  • বাজারের মাংসের চাহিদা সব সময় বেশি থাকার কারণে বাজার দর নিম্নগতির সম্ভাবনা কম ও লোকসানের ঝুঁকি কম থাকে।
  • বাড়ন্ত গরুর রোগ-ব্যাধির প্রকোপ খুব কম থাকে, ফলে আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা খুব কম।
  • গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিকভাবে যেসব বিষয় সম্পন্ন করতে হব তা নিম্নরূপ।

গরু মোটাতাজাকরণ পদ্ধতি

গরু নির্বাচন
মোটাতাজাকরণ কর্মসূচীর জন্য গরু ক্রয়ের সময় প্রধান দুটি বিবেচ্য বিষয় হলো বয়স ও শারীরিক গঠন। মোটাতাজা করার জন্য সাধারণত ২ থেকে ৫ বছরের গরু ক্রয় করা যেতে পারে, তবে ৩ বছরের গরু হলে ভালো।

এছাড়া গরুর শারীরিক গঠন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য কিছু বিষয় দেখে গরু নির্বাচন করা জরুরি। তা হলো- গরুর দেহ হবে বর্গাকার, গায়ের চামড়া হবে ঢিলা, শরীরের হাড়গুলো আনুপাতিকহারে মোটা, মাথাটা চওড়া, ঘাড় চওড়া ও খাটো। এছাড়া পাগুলো খাটো এবং সোজাসুজিভাবে শরীরের সঙ্গে যুক্ত। সর্বোপরি, গরু অপুষ্ট ও দুর্বল কিন্তু রোগা নয়।

কৃমিমুক্তকরণ ও টিকা প্রদান
গরুকে ডাক্তারের নির্দেশনা মত কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে। নতুন গরু সংগ্রহের পর পরই পালের সব গরুকে একসঙ্গে কৃমিমুক্ত করা উচিত। এক্ষেত্রে প্রতি ৭৫ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১ টি করে এনডেক্স বা এন্টিওয়ার্ম ট্যাবলেট ব্যবহার করা যেতে পারে।

পূর্ব থেকে টিকা না দেয়া থাকলে খামারে আনার পর পরই সব গরুকে তড়কা, বাদলা ও ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হবে। এ ব্যাপারে নিকটস্থ পশু হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।

ঘর তৈরি ও আবাসন ব্যবস্থাপনা
আমদের দেশের অধিকাংশ খামারী ২/৩ টি পশু মোটাতাজা করে থাকে, যার জন্য সাধারণত আধুনিক শেড করার প্রয়োজন পড়ে না। তবে যে ধরনের ঘরেই গরু রাখা হোক, ঘরের মধ্যে পর্যন্ত আলো ও বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা থাকতে হবে। ঘরের মল- মূত্র ও অন্যান্য আবর্জনা যাতে সহজেই পরিষ্কার করা যায়, সে দিকে খেয়াল রেখে ঘরে তৈরি করতে হবে।

পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা
গরু মোটতাজাকরণে দুই ধরনের খাদ্যের সমন্বয়ে রশদ (রেশন) তৈরি করা হয়। একটি হলো- আঁশ জাতীয় খাবার। এগুলোর মধ্যে রয়েছে খড়, ইউ এম এস, সবুজ ঘাস ইত্যাদি। তবে এই প্রক্রিয়ায় খামারীদেরকে শুধু খড়ে পরিবর্তে ইউ এম এস খাওয়াতে হবে।

অপরটি হলো দানারার খাবার। এগুলো মধ্যে রয়েছে- খৈল, ভুষি, চাষের কুড়া , খুদ, শুটকি মাছ, ঝিনুকের গুড়া, লবণ ইত্যাদি।

সুষম খাদ্য খাওয়ানো
সঠিক পরিমাণে পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ালে ষাঁড় বাছুরের ওজন প্রতিদিন প্রায় এক কেজি পর্যন্ত বাড়ে। ১০০-১৫০ কেজি ওজনের একটি ষাঁড় বাছুরকে প্রতিদিন ইউরিয়া প্রক্রিয়াজাত খড় ৩-৪ কেজি, সবুজ কাঁচা ঘাস ১০-১২ কেজি, চালের কুঁড়া ১ কেজি, গমের ভুসি ১.২৫ কেজি, তিলের খৈল ৪০০ গ্রাম, হাড়ের গুঁড়া ৫০ গ্রাম, লবণ ৫০ গ্রাম ও ঝোলাগুড় ২৫০ গ্রাম খাওয়াতে হয়। পানি পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়াতে হবে। ইউরিয়া ও খড় প্রক্রিয়াজাত করার ৭ দিন পর খাওয়াতে হবে। অন্যথায় বিষাক্ততা দেখা দিবে। এক বছরের কম বয়সের বাছুরকে ইউরিয়া খাওয়ানো যাবে না।

দৈহিক ওজন নির্ণয়
মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়ায় গরুকে দৈহিক ওজন নির্ণয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কেননা গরুর খাদ্য সরবরাহ, ওষুধ সরবরাহ ইত্যাদি কাজগুলো করতে হয় দৈহিক ওজনের ভিত্তিতে। গরুর ওজন নির্ণয়ের জন্য গরুকে সমান্তরাল জায়গায় দাড় করাতে হবে এবং ছবির নির্দেশিকা মোতাবেক ফিতা দ্বারা দৈর্ঘ্য ও বুকের বেড়ের মাপ নিতে হবে। (দৈর্ঘ্য × বুকের বেড় (ফুট) × বুকের বেড় (ফুট) এই সূত্রে গরুর ওজন পাওয়া যাবে।

এই পদ্ধতি অনুসরণ করে গরু পালন করলে ৯০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যেই গরু মোটাতাজাকরণ করে বাজারজাত করা সম্ভব।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ