মিষ্টি মরিচ চাষ : এক সম্ভাবনার নাম

ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ সারা বিশ্বেই একটি জনপ্রিয় সবজি। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। মিষ্টি মরিচ আমাদের দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও ইদানীং এর চাষ প্রসারিত হচ্ছে।

এই মরিচ অভিজাত হোটেলসহ বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া মিষ্টি মরিচ বিদেশে রপ্তানির সম্ভাবনাও প্রচুর। কারণ বিশ্বে টম্যাটোর পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে মিষ্টি মরিচ। মিষ্টি মরিচ দিয়ে ভিন্ন স্বাদের আচার তৈরি করা যায়।

পুষ্টিমানের দিক থেকে মিষ্টি মরিচ একটি অত্যন্ত মূল্যবান সবজি। পুষ্টিবিদদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টি মরিচে ১.২৯ মিলিগ্রাম আমিষ, ১১ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ৮৭০ আইহউ ভিটামিন-এ, ১৭৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ০.০৬ মিলিগ্রাম থায়ামিন, ০.০৩ মিলিগ্রাম রিভোফ্লেভিন এবং ০.৫৫ মিলিগ্রাম নায়াসিন রয়েছে।

এছাড়াও রয়েছে সামান্য পরিমাণ ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-বি৬, থায়ামিন ও ফলিক এসিড। খণিজ উপাদানের মধ্যে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, জিংক, কপার ইত্যাদি। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচের রয়েছে নানান স্বাস্থ্যগুণ।

মিষ্টি মরিচ চাষের জন্য দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি ভালো। খরা ও গোঁড়ায় পানি জমা কোনোটিই মিষ্টি মরিচের গাছ সহ্য করতে পারে না। মিষ্টি মরিচের বীজ বোনার উপযুক্ত সময় হলো অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত। প্রতি শতকের জন্য ১ গ্রাম বীজ দরকার হয়। বীজ থেকে প্রথমে চরা তৈরি করে নিতে হয়।

এ জন্য বীজগুলোকে ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে আগে থেকে তৈরি করে রাখা বীজতলায় ১০ সেমি. দূরে দূরে লাইন করে বীজ বুনতে হবে। বীজ বোনার ৭-১০ দিন পর চারা ৩-৪ পাতা হলে মাঝারি আকারের পলিথিন ব্যাগে চারা স্থানান্তর করতে হবে।

এরপর মূল জমি চাষ ও মই দিয়ে ভালোভাবে তৈরি করে নিতে হবে। ওই জমিতে বেড তৈরি করে নিতে হবে। প্রতিটি বেড চওড়া ২.৫ ফুট এবং দুই বেডের মাঝখানে নালা রাখতে হবে। মিষ্টি মরিচ চাষে প্রতি শতাংশে গোবর ৪০ কেজি, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ১.৪ কেজি, এমপি ১ কেজি , জিপসাম ০.৪৫ কেজি, এবং জিংক অক্সাইড ০.০২ কেজি প্রয়োগ করতে হবে। এর মধ্যে অর্ধেক গোবর সার জমি তৈরির সময়, বাকি অর্ধেক গোবর চারা রোপণের গর্তে প্রয়োগ করতে হবে।

সাধারণত ৩০ দিন বয়সের চারা তৈরি করা বেডে ১.৫ ফুট দূরে দূরে লাইনে রোপণ করতে হবে। রোপণ করা জমিতে রাতের তাপমাত্রা অনেক কম হলে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে তাপমাত্রা বাড়তে হবে।

যেহেতু, ক্যাপসিকাম খরা ও জলাবদ্ধতা কোনটাই সহ্য করতে পারে না, তাই প্রয়োজন অনুসারে জমিতে সেচ দিতে হবে। কোনো গাছে ফল ধরা শুরু হলে খুঁটি দিতে হবে যাতে গাছ ফলের বারে হেলে না পড়ে। জমি সব সময় আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।

মিষ্টি মরিচ সাধারণত পরিপক্ব সবুজ অবস্থায় লালচে হওয়ার আগেই মাঠ থেকে উঠানো যায়। সাধারণত সপ্তাহে একবার গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করতে হয়। ফল সংগ্রহের পর ঠাণ্ডা ও ছায়াযুক্ত স্থানে সংরক্ষণ করতে হয়।

মনে রাখতে হবে, অপ্রাপ্ত বয়স্ক জাব পোকা দলবদ্ধভাবে মরিচ গাছের পাতার রস চুষে খেয়ে থাকে। ফলে পাতা বিকৃত হয়ে যায়, বৃদ্ধি ব্যাহত হয় ও নীচের দিকে কোঁকড়ানো দেখা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় আক্রান্ত পাতা ও ডগার জাব পোকা হাত দিয়ে পিষে মেরে ফেলা যায়। নিম বীজের দ্রবণ (১ কেজি পরিমাণ অর্ধভাঙ্গা নিম বীজ ১০ লিটার পানিতে ১২ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে) বা সাবান গুলা পানি (প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২ চা চামচ গুড়া সাবান মেশাতে হবে) স্প্রে করেও এ পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কমানো যায়।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ