চীনে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা ১৭শ’ ছাড়িয়েছে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের বিষয়ে চীনের কাছ থেকে তথ্য চেয়েছে। চীন ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১৭৭০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে শনাক্ত করেছে, যাদের মধ্যে ছয়জন মারা গেছেন।

মহামারী ছড়িয়ে পরার পর চীন যে তথ্য সরবরাহ করে আসছে এই প্রথম তাতে স্বাস্থ্য কর্মীদেরকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ডা. টেড্রোস অ্যাধনম ঘেরবাইয়াস বলেছেন- ‌‘এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, কারণ স্বাস্থ্যকর্মীরা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এবং মহামারীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ টিকিয়ে রাখে।’

তিনি আরও বলেন- ‘আমাদের এই পরিসংখ্যানগুলি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে হবে, স্বাস্থ্যকর্মীরা যে সময়ের মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন সেই সময়কাল ও পরিস্থিতি জানা গুরুত্বপূর্ণ।’

একই দিন আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসাবে মিশর করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার একটি কেস রিপোর্ট করেছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তি বিদেশী ছিলেন এবং দেশে ফেরার পর তাকে হাসপাতালে জনবিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছিল। তিনি আরও যোগ করেন যে, বিষয়টি ডব্লিউএইচওকে অবিলম্বে অবহিত করা হয়েছিল এবং প্রয়োজনীয় প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল। তবে তারা আক্রান্ত ব্যক্তির জাতীয়তা বা অন্য কোনো বিবরণ দেয়নি।

এই মাসের শুরুর দিকে ডব্লিউএইচও জানিয়েছে যে, তারা উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির সম্পর্কে বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। যেসব দেশের দুর্বল স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য কেসগুলি শনাক্ত করার সুযোগ সুবিধার অভাব রয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, চীনের চিকিৎসক ও নার্সদের প্রতিরক্ষামূলক গাউন, গ্লাভস এবং মাস্কের মারাত্মক সংকটের মুখে নিজেকে রক্ষা করার জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিরক্ষামূলক মুখোশগুলি টেপ দিয়ে প্যাচ করা এবং চশমাগুলি আগে একবার ব্যবহার করে ফেলে দেয়ার পর আবার ব্যবহার করা হচ্ছে। তারা তাদের জুতো প্লাস্টিকের ব্যাগে মুড়ে রাখছে, কারণ তাদের কাছে কোনো সুরক্ষামূলক কভার নেই।

কেউ কেউ তাদের নিজের অর্থ সুরক্ষামূলক গিয়ার কিনতে ব্যবহার করেছেন বা বন্ধুদের কাছে ধার চেয়েছেন। অন্যরা দীর্ঘ সময় ধরে খাওয়া এবং পান করা এড়িয়ে চলছেন। কারণ, টয়লেটে যাওয়ার অর্থ সুরক্ষা গাউনগুলি প্রতিস্থাপন করতে হবে না, যা এই মুহূর্তে কষ্টসাধ্য।

টেড্রোস উল্লেখ করেছেন যে, ডব্লিউএইচও, চীন ও অন্যান্য দেশে স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষার জন্য তার গাইডলাইন ছড়িয়ে দিয়েছে। তবে করোনাভাইরাস আক্রান্ত চীনা হাসপাতালের গুরুত্বর সমস্যা হলো প্রতিরক্ষামূলক গিয়ারের তীব্র সংকট।

মেডিসিনস সানস ফ্রন্টিয়ারেসে (এমএসএফ) চিকিৎসকরা বলেছিলেন যে, ২১ ফেব্রুয়ারি ৩.৫ টন চিকিৎসা প্রতিরক্ষামূলক সরঞ্জাম চীনের উহান জিনিন্তান হাসপাতালে পাঠানো হবে।

ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে চীনের শহরগুলিতে জন চলাচল বন্ধ থাকায় ব্যক্তিগত সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম (পিপিই), মুখোশ, গ্লাভস প্রভৃতি প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির উৎপাদন সরবরাহ এবং বিতরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ডব্লিউএইচও ‘কভিড ১৯’ ভাইরাস নির্ণয় পদ্ধতি সম্পর্কে চীন সরকারের কাছে আরও তথ্য চেয়েছে। হুবেই প্রদেশের প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রবিন্দু থেকে আরও ১৫,০০০ টিরও বেশি কেস শনাক্ত করা গেছে, যাদের সবগুলিই ফুসফুসের একটি সিটি স্ক্যান দ্বারা শনাক্ত করা হয়েছিল, ল্যাব পরীক্ষার মাধ্যমে নয়।

শনিবার জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন ঘোষণা করেছে যে, চীনে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬৬,৪৯২ জনে দাঁড়িয়েছে। ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১,৫২৩ জন। টেড্রোস বলেছিলেন যে, তাদের জানা দরকার যে ডাক্তাররা অন্য সংক্রমণগুলিকে ভুল করে করোনাভাইরাস হিসাবে চিহ্নিত করছেন না।

তিনি আরও বলেন- ‘যদি আরও তথ্য পাওয়া যায় সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্লিনিক্যাল সংজ্ঞা পরিবর্তন করা অস্বাভাবিক নয়। আমরা কীভাবে ক্লিনিক্যাল রোগ নির্ণয় করা হচ্ছে সে সম্পর্কে আরও স্পষ্টতা চাইছি, যাতে ইনফ্লুয়েঞ্জাসহ অন্যান্য শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত অসুস্থতা করোনাভাইরাসের সঙ্গে মিশে না যায়।’

ডব্লিউএইচও জানিয়েছে, মার্কিন বিশেষজ্ঞরা একটি আন্তর্জাতিক দলের অংশ হিসেবে আগামী সাপ্তাহিক ছুটিতে চীন পৌঁছাবেন। ‘আমরা চাইনিজদের কাছ থেকে স্বচ্ছতার অভাব নিয়ে কিছুটা হতাশ হয়েছি’ বলে মন্তব্য করেছেন ডিরেক্টর ল্যারি কুডলো।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের ভাইস ডিরেক্টর জেং ইয়িক্সিনা নিশ্চিত করেছেন যে, ১৭শ’ এরও বেশি চীনা স্বাস্থ্যকর্মী সংক্রমিত হয়েছেন এবং ছয়জন মারা গেছেন।

সিঙ্গাপুরে শুক্রবার নতুন করে আরও ৯জন করোনা আক্রান্তের ঘটনা নিশ্চিত হওয়া গেছে, এই নিয়ে দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৬৭ জন।

যদিও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ইতিবাচকভাবে রিপোর্টিংয়ের পরিবর্তনের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, অন্যরা বলেছেন যে এটি তথ্য সম্পর্কে আরও প্রশ্ন উত্থাপন করে। তবে ডায়াগনস্টিকের মানদণ্ডের পরিবর্তনটি শুধু হুবেই প্রদেশে প্রয়োগ করা হয়েছে।

শীর্ষ নেতৃত্বের দিকে ইঙ্গিত করে কুডলো বলেন, ‘পলিটব্যুরোরা কি সত্যিই আমাদের সঙ্গে সৎ? রাষ্ট্রপতি শি জিনপিং ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, বেইজিং মার্কিন সহায়তা গ্রহণ করবে, তবে তারা আমাদের তা করতে দিচ্ছে না। আমি জানি না তাদের উদ্দেশ্য আসলে কী। তবে এটা জানি যে, প্রতিদিন অনেক অনেক লোক সেখানে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।’

বৃহস্পতিবার বেইজিংয়ে সিনিয়র নেতাদের এক বৈঠকে কর্মকর্তারা অন্যান্য অঞ্চলকে ‘উহানের মতো কোয়ারেন্টাইন ও উদ্ধার ব্যবস্থা গ্রহণ’ করার আহ্বান জানিয়েছেন। চীনা প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে উহানকে ভাইরাস সংক্রমণের বিষয়ে সন্দেহভাজন চিহ্নিত ও কোয়ারেন্টাইন করার কাজ ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানানো হয়।

উহানের বাইরের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চল হুয়াংগ্যাং-এ প্রায় ২ হাজারেরও বেশি রোগী শনাক্ত করা হয়েছে এবং কমপক্ষে ৫৯ জন মারা গেছেন। কর্তৃপক্ষ ১৪ দিনের জন্য জরুরি ব্যবস্থা জারি করেছে, সব আবাসিক এলাকা ‘পুরোপুরি বন্ধ’ করে দেয়া হয়েছে এবং যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অনুমোদন ছাড়া বাসিন্দারা কোনো এলাকাতে প্রবেশ বা ত্যাগ করতে পারবে না। ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চেকপয়েন্ট স্থাপন করা হবে এবং জননিরাপত্তা মোতায়েন করা হবে। স্থানীয় জেলা কমিটিগুলি বাসিন্দাদের খাবার ও সরবরাহের ব্যবস্থা করবে। তথ্যসূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
তানজিদের অভিষেক ফিফটিতে টাইগারদের বড় জয় May 03, 2024
img
শনিবার থেকে ট্রেনে বাড়তি ভাড়া, কোন রুটে কত May 03, 2024
img
আরআরআর'র সভাপতি আনোয়ার হোসেন সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম May 03, 2024
img
মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিষেক হলো আসিফের May 03, 2024
img
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা : জয়দেবপুর স্টেশন মাস্টারসহ তিনজন সাময়িক বরখাস্ত May 03, 2024
img
নির্বাচনী আচরণবিধি না মানলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না: ইসি রাশেদা May 03, 2024
img
টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, তানজিদের অভিষেক May 03, 2024
img
অতি গরমের প্রভাব বাজারে, বেড়েছে মুরগি-সবজির দাম May 03, 2024
img
সরকারকে যারা চাপে রাখতে চেয়েছিল তারা নিজেরাই চাপে আছে: ওবায়দুল কাদের May 03, 2024
img
শনিবার বন্ধ থাকবে ২৫ জেলার স্কুল-মাদরাসা May 03, 2024