জমিতে ঘাস চাষ একটি প্রচলিত ধারণা। এই ধারণা বদলে ঘরের ভেতরে মাটি ছাড়া কেবল পানি ছিটিয়ে পশুখাদ্য উৎপাদন সম্ভব। হাইড্রোফনিক (মৃত্তিকাবিহীন জল চাষ বিদ্যা) ফডার নামের এই প্রযুক্তিতে পশুখাদ্য উৎপাদনে খরচও কম। এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে পশুখাদ্য তৈরি খুবই সম্ভাবনাময়।
শুধু এই খাদ্য দিয়েই গরু, ছাগল, ভেড়া, খরগোশ ও রাজহাঁস পালন করা সম্ভব। কারণ, এই খাদ্যে বাজারের দানাদার ও মাঠের সবুজ ঘাসের প্রায় সব পুষ্টি উপাদান রয়েছে। গম, ছোলা, খেসারি, ভুট্টা, সয়াবিন, মাষকলাইসহ বিভিন্ন শস্যের অঙ্কুরোদ্গম বীজ ব্যবহার করে খাদ্যটি উৎপাদন করা যায়।
চাষ পদ্ধতি
- বীজ ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
- পানি ঝরিয়ে ভেজা চটের বস্তা বা কালো সুতির কাপড়ের ভেতরে বেঁধে ২৪ ঘণ্টা অন্ধকারে রাখতে হবে।
- একপাশ ছিদ্রযুক্ত কাঠ, টিন বা প্লাস্টিকের ট্রেতে ওই বীজ বিছিয়ে কালো কাপড় দিয়ে দুই দিন ঢেকে রাখতে হবে, যেন বাইরের আলো-বাতাস না লাগে। কাপড় সারাক্ষণ ভেজা রাখতে হবে।
- তৃতীয় দিন কাপড় সরিয়ে আধা ঘণ্টা পর পর পানি ছিটাতে হবে। একটি ঘরে বাঁশ বা কাঠের তাক বানিয়ে ট্রেগুলো সাজিয়ে রাখতে হবে।
- ৯ দিন পর ৭ থেকে ৮ কেজি কাচা ঘাস পাওয়া যাবে। ৫ বিঘা জমিতে যে পরিমাণ ঘাস উৎপাদন হয়, সমপরিমাণ ঘাস মাত্র ৩০০ বর্গফুট টিন শেড ঘরে উৎপাদন করা সম্ভব।
হাইড্রোপনিক ঘাসের উপকারিতা
- সবুজ ঘাস উৎপাদনের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
- স্বল্প জায়গায়, অল্প পরিসরে অধিক ঘাস উৎপাদন করা যায়।
- আঁশ জাতীয় খাদ্যের শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগই হাইড্রোপনিক ঘাস খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়। ১০ থেকে ১৫ ভাগ দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। দুধের ফ্যাট ও এস এন এফ শতকরা ০.৩ থেকে ০.৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়।
- এ ঘাস শতকরা ৯০ ভাগ হজমযোগ্য পক্ষান্তরে এই বীজের দানাদার খাবার মাত্র শতকরা ৪০ ভাগ হজমযোগ্য। এতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার নেই।
- এ ঘাসে দানাদারের চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি পরিমাণের ভিটামিন-এ, ভিটামিন-বি, ভিটামিন-সি বিদ্যমান।
- গর্ভধারণের হার বৃদ্ধি পায় কারণ এ ঘাসে ভিটামিন-ই সেলিনিয়াম, ভিটামিন-এ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যমান।
- শতকরা ২৫ ভাগের অধিক ঘাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এ ঘাস আঁশ উদ্ভিজ আমিষ, নানাবিধ ভিটামিন ও খনিজ লবণের উৎস।
- এ ঘাস সারা বছরই চাষ করা যায়। মাটিবাহিত রোগ হবে না। কীটপতঙ্গ আক্রমণের সম্ভাবনা নেই তাই কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না।
- অধিক রসালো ও পরিপাচ্য হওয়ার কারণে দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এ পদ্ধতিতে ঘাস চাষ অধিক পরিবেশ উপযোগী।
টাইমস/জিএস