বিশ্বে প্রথম লিফট ব্যবহার করেন ফরাসি সম্রাট

বহুতল ভবনে লিফট বা এলিভেটর থাকবে না, এই সময়ে এটা প্রায় অকল্পনীয়। দ্রুত গতিতে ওঠা-নামা করার জন্য লিফটের বিকল্প নেই। এই লিফটকে আধুনিক বিজ্ঞানের অবদান হিসেবে গণ্য করা হলেও এর পেছনের গল্পটা বেশ পুরনো।

রোমান লেখক ভিত্রুভিয়াসের মতে, প্রায় ২ হাজার ২০০ বছর আগে প্রাচীন গ্রিসে বিজ্ঞানী আর্কিমিডিসের তৈরি এক ধরনের এলিভেটরের প্রচলন ছিল। খ্রিষ্টের জন্মের ২৩৬ বছর আগে গ্রিসে পাকানো দড়ি দিয়ে একটি ড্রামের চারপাশে পেঁচিয়ে সেটিকে টেনে ওপরে তোলার কৌশল রপ্ত করেছিলেন সেখানকার অধিবাসীরা। প্রাচীন রোমে গ্ল্যাডিয়েটর ও বন্য পশুদের কলোসিয়ামের নিচের কক্ষগুলো থেকে ওপরে তুলে আনতে তখন আধুনিক এলিভেটরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ প্রযুক্তির ব্যবহার করা হতো।

তবে, মানুষের ব্যবহারের জন্য ১৭৪৩ সালে পৃথিবীর প্রথম লিফট বা এলিভেটরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি যন্ত্র তৈরি করা হয়। সেটা তৎকালীন ফরাসি সম্রাট পঞ্চদশ লুই ভার্সাইয়ের প্রাসাদে স্থাপন করা হয়েছিল। সেই লিফটের ধারণ ক্ষমতা ছিল খুবই কম। মাত্র একজন ব্যক্তিকে বহন করতে সক্ষম ছিল এই যন্ত্র। তা কেবল প্রথম তলা থেকে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত যেতে পারত। সে সময় এটাকে উড়ন্ত চেয়ার (Flying Chair) বলা হতো।

ওই যন্ত্রটির নির্মাণ কৌশল খুব বেশি জটিল ছিল না। একটি চিমনির ভেতরে দড়ির সঙ্গে কিছু ওজন বাঁধা থাকতো। দড়ির অন্যপ্রান্ত বাধা ছিল চেয়ারটি। প্রহরীদের চিমনির ভেতরে ডিউটি দেয়া হতো। তারা রাজার নির্দেশ অনুযায়ী দড়িতে ভার কমিয়ে-বাড়িয়ে চেয়ারকে উঠাতো এবং নামাতো।

তবে, আধুনিক এলিভেটর বা লিফটের সফল ও নিরাপদ ব্যবহারের সঙ্গে মিশে আছে এলিশা গ্রেভস ওটিসের (১৮১১-১৮৬১) নাম। বহুতল ভবনে আজ যে লিফটের জয়জয়কার, তার প্রথম বাণিজ্যিক রূপ দিয়েছিলেন আমেরিকান এই প্রকৌশলী। তিনি ১৮৫২ সালে প্রথম নিরাপদ এলিভেটর তৈরি করতে সক্ষম হন।

এলিশা গ্রেভস ওটিস ১৮৫৩ সালে প্রতিষ্ঠা করলেন ‘ওটিস এলিভেটর কোম্পানি’। এরপর তিনি নিজেই ভবনমালিকদের দ্বারে দ্বারে গেলেন, লিফটের সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তার বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা করলেন। বুঝলেন অনেকেই, তবে প্রথম বছর তিনি মাত্র তিনটি লিফট বিক্রি করতে পেরেছিলেন।

এলিশা গ্রেভস ওটিস নিজের নামে নিরাপদ লিফটের প্যাটেন্ট পান ১৮৬১ সালে। তবে, তার আগেই ১৮৫৭ সালের ২৩ মার্চ গ্রাভিস ওটিস নিউইয়র্কের একটি পাঁচতলা দোকানে মানুষ বহনে সক্ষম প্রথম বাণিজ্যিক লিফট স্থাপন করেন।

বছর পাঁচেক বাদে ওটিস হাইড্রোলিক এলিভেটর চালু করে এবং ১৮৮৯ সালে ওটিস বৈদ্যুতিক এলিভেটর মেশিন স্থাপনে সক্ষম হয়। ওটিসের অগ্রযাত্রা থেমে থাকেনি। পৃথিবীর দুইশ’র বেশি দেশে বর্তমানে ওটিসের এলিভেটর ব্যবহৃত হয়।

 

টাইমস/জিএস 

Share this news on: