কুইক কম্পোস্ট সারের প্রস্তুত প্রণালি

মাটির স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য জৈব পদার্থের প্রয়োজন। কারণ, জৈব পদার্থ হলো- মাটির প্রাণ বা হৃদপিণ্ড। কুইক কম্পোস্ট হলো- এমন একটি জৈব সার, যা স্বল্প সময়ে তৈরি করা যায় এবং এর মধ্যে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদানও বেশি থাকে। প্রতি একশ' কেজি কুইক কম্পোস্টে ২.৫৬% নাইট্রোজেন, ০.৯৮% ফসফরাস, ০.৭৫% পটাশিয়াম পাওয়া যায়। তাছাড়া পরিমিত মাত্রায় ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ অন্যান্য গৌণ পুষ্টি উপাদানও রয়েছে।

সাধারণত কম্পোস্ট সার তৈরি করতে দুই থেকে তিন মাস লেগে যায়। কৃষক পর্যায়ে সব সময় এই সার প্রস্তুত করা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই কুইক কস্পোস্ট সার খুব সহজ উপায়ে এবং মাত্র ১৪-১৫ দিন সময়েই তৈরি করা যায়।

কুইক কম্পোস্ট সারের রয়েছে নানা উপকারিতা, যা মাটিতে পানি ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান সহজলভ্য করে। মাটিতে থাকা অণুজীবের ক্রিয়াকলাপ বৃদ্ধি করে। গাছের শিকড় ও অঙ্গজ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। সবজি ফসলে মালচিংয়ের কাজ করে। সর্বোপরি মাটির উর্বরতা সুরক্ষা করে এবং ফসল উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

চলুন জেনে নিই, কুইক কম্পোস্ট সারের প্রস্তুত প্রণালি

কুইক কম্পোস্ট তৈরির জন্য প্রয়োজন পচা গোবর, কাঠের গুড়া ও খৈল। উপকরণগুলোর মিশ্রণের অনুপাত হবে পচা গোবব : কাঠের গুড়া : খৈল = ৪: ২: ১ । এক ভাগ খৈল ভালোভাবে গুড়া করে দুই ভাগ কাঠের গুড়া বা চালের কুড়া এবং চার ভাগ পচা গোবর বা হাঁস মুরগির বিষ্ঠার সঙ্গে ভালো করে মিশাতে হবে। পরিমিত পরিমাণ পানি এমনভাবে মিশাতে হবে যেন সব উপাদান খুব ভালোভাবে মিশে।

উপাদান ভালোভাবে মিশলে এক ধরনের খামির মতো তৈরি হয়। ওই খামি দিয়ে যেন বল তৈরি করা যায়। বলটি এক মিটার ওপর থেকে ছেড়ে দিলে যদি একদম ভেঙে না যায়, আবার একেবারে লেপ্টেও না যায়, তাহলে বুঝতে হবে মিশ্রণে পানির পরিমাণ ঠিক আছে।

পরবর্তীতে মিশ্রণটি স্তূপ করে রেখে দিতে হবে, যেন ভেতরে জলীয়বাষ্প আটকিয়ে পচনক্রিয়া সহজতর হয়। স্তূপটির পরিমাণ ৩০০ থেকে ৪০০ কেজির মধ্যে হওয়া উত্তম। শীতকালে স্তূপের ওপর চটের বস্তা দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।

স্তূপ করার ২৪ ঘণ্টা পর হতে মিশ্রণের ভেতরের তাপমাত্রা বাড়তে থাকে এবং ৪৮-৭২ ঘণ্টার মধ্যে স্তূপের তাপমাত্রা ৬০০-৭০০ সে. এ পৌঁছায়। ওই পরিমাণ তাপমাত্রা অনুভূত হলে স্তূপ ভেঙে মিশ্রণ ওলট-পালট করে এক ঘণ্টা সময়ের জন্য মিশ্রণকে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে এবং পুনরায় স্তূপ করে রাখতে হবে।

স্তূপে বেশি পরিমাণ তাপ অনুভূত হলে খৈলের সমপরিমাণ পচা গোবর বা হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা পুনরায় মিশিয়ে দিতে হবে। স্তূপের এ অবস্থায় অ্যামোনিয়ার মতো গন্ধ বের হবে। স্তূপটি প্রতি দুই-তিন দিন পরপর ওলট-পালট করে পুনরায় স্তূপ করে রেখে দিতে হবে। এভাবে ওলট-পালট করতে থাকলে ১৪-১৬ দিনের মধ্যেই ওই মিশ্রণটি জমিতে প্রয়োগ করার উপযোগী হয়।

সার উপযোগী হওয়ার অন্যতম প্রধান লক্ষণ হলো- এ সময় কোনো রকম গরম বা গন্ধ থাকবে না এবং কালো বাদামি বর্ণ ধারণ করবে, শুকনা ও ঝুরঝুরে হবে।

কুইক কম্পোস্ট ছায়ায় এমনভাবে শুকাতে হবে যেন হাতের মুঠোয় নিয়ে চাপ দিলে তাতে কোনো রস না দেখা যায়। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে ব্যবহারের জন্য চটের/পাটের বস্তায় বা মাটির পাত্রে সংরক্ষণ করা যায়।

সাবধানতা
মিশ্রণটি উঁচু ও ছায়াযুক্ত স্থানে করতে হবে। স্তূপের নিচে পলিথিন শিট দিতে হবে, যেন মিশ্রণে থাকা প্রয়োজনীয় পুষ্টি গুণাগুণ মাটিতে চলে না যায়।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: