‘সেক্স ফেরোমন’ ফাঁদ হচ্ছে এক ধরনের কীটপতঙ্গের দমন পদ্ধতি। কুমড়াজাতীয় ফসল, সবজিসহ নানা চাষাবাদে এ পদ্ধতিতে পোকা দমনের কার্যকারিতা অনেক বেশি। এ পদ্ধতিতে ‘সেক্স ফেরোমন’ ব্যবহার হয়ে থাকে, যা পুরুষ পোকাকে আকৃষ্ট করতে স্ত্রী পোকা কর্তৃক নিঃসৃত এক ধরনের রাসায়নিক পদার্থ (স্ত্রী পোকার গন্ধ)।
পোকা দমনের এই ফাঁদ তৈরির জন্য যেসব উপকরণ প্রয়োজন তা হলো- ‘সেক্স ফেরোমন’ টোপ (লিউর বা কিউলিউর), প্লাস্টিক বৈয়াম, তার, সাবান গুড়া, পানি ও বাঁশের খুঁটি। লিউরটি বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।
এই ফাঁদ তৈরি করতে খেতের মাঝখানে বাঁশের খুঁটিতে পাস্টিকের পাত্র (বয়াম) স্থাপন করতে হবে। ওই পাত্রের তলা হতে উপরের দিকে কমপক্ষে তিন-চার সেন্টিমিটার পর্যন্ত সাবান মিশ্রিত পানি রাখতে হবে। প্লাস্টিক পাত্রের উপরের পানি হতে এক-দেড় ইঞ্চি উপরে ‘সেক্স ফেরোমন’ টোপটি (লিউর) একটি সরু তার দিয়ে ঝুলিয়ে রাখতে হবে।
১২-১৫ মিটার দূরে দূরে বর্গাকারে জমিতে ফেরোমন ফাঁদ বসাতে হবে। অথবা প্রতি তিন শতাংশ জমিতে একটি ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে। একটি ফাঁদ ৪৫–৫০ দিন অর্থাৎ এক মৌসুমে দু'টি ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে। গরমের সময় তিনদিন, শীতের সময় ৫-৬ দিন পর পর সাবানের পানি বদলাতে হবে।
বিভিন্ন ধরনের ‘সেক্স ফেরোমোন’ ফাঁদ পাওয়া যায়। এর মধ্যে ডেল্টা ফাঁদ, উইং বা ডানা ফাঁদ, ফানেল ফাঁদ এবং পানি ফাঁদ প্রচলিত রয়েছে। তবে মাঠ পর্যায়ে পানি ফাঁদ পদ্ধতিটি বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে।
পানি ফাঁদ তৈরি করতে প্রায় ৩ লিটার পানি ধরে এবং প্রায় ২২ সে.মি লম্বা গোলাকার বা চারকোনা বিশিষ্ট প্লাস্টিকের পাত্র বা বৈয়ামের প্রয়োজন হয়। বৈয়ামের উভয় পাশে ১০ থেকে ১২ সে.মি চওড়া এবং ১১ থেকে ১২ সে.মি উঁচু পরিমাণ অংশ ত্রিভুজের মত করে কেটে নিতে হবে। পাত্রের তলা হতে কাটা অংশের নিচের দিকে কমপক্ষে ৪ থেকে ৫ সেমি পর্যন্ত সাবান মিশ্রিত পানি দিয়ে ভরে রাখতে হবে।
বৈয়ামের ঢাকনার মাঝে কালো রংয়ের একটি ল্যুপ বসানো থাকে। ল্যুপের নিচের ছিদ্রে চিকন তার বাঁধা হয়। তারের অপর মাথায় ফেরোমোন সম্বলিত টিউব বা লিউরটি এমনভাবে বাঁধতে হবে যেন লিউরটি সাবান মিশ্রিত পানি হতে ২ থেকে ৩ সেমি উপরে ঝুলতে থাকে। সেক্স ফেরোমনের গন্ধে আকৃষ্ট হয়ে পুরুষ পোকা বৈয়ামের ভেতরে প্রবেশ করে এবং লিউরটির চারপাশে উড়তে যেয়ে সাবান মিশ্রিত পানিতে পড়ে মারা যায়।
‘সেক্স ফেরোমন’ ফাঁদে ব্যবহৃত বক্সটিতে স্ত্রী পোকার নিঃসৃত গন্ধকে কৃত্রিমভাবে ১০০ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। যাতে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পোকা বক্সের ভেতরে স্ত্রী পোকা আছে ভেবে খুঁজতে থাকে। খোঁজার এক পর্যায়ে পুরুষ পোকা লিউরের কাছে আসলে মাতাল হয়ে পাত্রের সাবান মিশ্রিত পানিতে পড়ে যায়। পানি আঠালো হওয়ায় আর উঠতে পারে না। এভাবে প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ পোকা মারার মাধ্যমে বংশবৃদ্ধি বন্ধ করে পোকা দমন করা হয় ।
টাইমস/জিএস