করোনায় চীনের একচেটিয়া ব্যবসা

চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে গেল বছরের ডিসেম্বরে প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের তথ্য মতে, দেশটিতে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ভাইরাসজনিত কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয় ৮১ হাজার ৫৫৪ জন। যার মধ্যে মারা গেছেন ৩ হাজার ৩১২ জন। শুরুর দিকে ধারণা করা হয়েছিল, গোটা চীনে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়বে। তবে দেশটি উহানের মধ্যেই এর ভয়াবহ পরিস্থিতি সীমাবদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছে। যার কারণে ৮ এপ্রিল থেকে উহান শহরে আংশিকভাবে লকডাউনও তুলে নেয়া হয়।

তবে, এরই মধ্যে করোনার মহামারী পুরো বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে। বিশ্বে মোট আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৯লাখ ৩৬ হাজার, যার মধ্যে মারা গেছেন ৪৭ হাজার ২২৪ জন। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের নানা দেশ করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে মরিয়া হয়ে লড়ছে। দেশে দেশে হুহু করে বাড়ছে জীবন রক্ষাকারী মেডিকেল সরঞ্জামের চাহিদা।

আর এটাকেই ব্যবসার নতুন সুযোগ হিসেবে লুফে নিয়েছে বিশ্বের বৃহত্তম উৎপাদক ও সরবরাহকারী দেশ চীন। আকাশছোঁয়া চাহিদা পূরণে দেশটিতে নতুন করে গড়ে উঠছে হাজার হাজার কোম্পানি। বিশ্বজুড়ে লকডাউনের সুযোগে একচেটিয়া ব্যবসা করছে দেশটির কোম্পানিগুলো।

সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাত-দিন চলছে ফ্যাক্টরি, তৈরি হচ্ছে সার্জিক্যাল মাস্ক। উৎপাদন হচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সদের জন্য ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী পিপিই, করোনা টেস্টিং কিট ও কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস দেয়ার মেশিন ভেন্টিলেটর। শত শত বিমান ও জাহাজে এসব রফতানি হচ্ছে ব্রিটেন, ইতালি, স্পেন, মঙ্গোলিয়া, ইউক্রেনের মতো বিশ্বের শতাধিক দেশে।

দেশটির ব্যবসায় তথ্য-উপাত্তবিষয়ক প্রতিষ্ঠান তিয়ানইয়ানচার মতে, গত দুই মাসেই আট হাজার ৯৫০টি নতুন কোম্পানি মাস্ক উৎপাদন শুরু করেছে। ফার্মাসিউটিক্যাল তথা ওষুধ শিল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গুয়ান সুনজে। উহানে করোনা ছড়িয়ে পড়ার এক মাসের মাথায় নতুন একটি মাস্ক ফ্যাক্টরি চালু করেন তিনি। যেখানে উৎপাদন শুরু হতে সময় লাগে মাত্র ১১ দিন।

চীনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই ফ্যাক্টরির পাঁচ প্রোডাকশন লাইনে তৈরি হচ্ছে এন৯৫ মাস্ক। প্রতিদিন উৎপাদন হচ্ছে ৬০-৭০ হাজার পিস। গুয়ান সুনজের ফ্যাক্টরিতে তৈরি এসব মাস্ক যাচ্ছে ব্যাপক করোনাপীড়িত ইতালিতে। ফ্যাক্টরি বিক্রয় ব্যবস্থাপক শি সিনহুই বলেন, মাস্ক মেশিন হচ্ছে টাকা ছাপানোর মেশিনের মতো।

করোনা রোগীদের জন্য সবচেয়ে দরকারি কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসের যন্ত্র ভেন্টিলেটর। বিশ্বজুড়ে ব্যাপক সংক্রমণের মধ্যে ভেন্টিলেটরের ভয়াবহ সংকটে বহু দেশ। ফলে চাহিদা আকাশচুম্বী। স্রোতের মতো নতুন নতুন ক্রয়াদেশ আসছে চীনের কোম্পানিগুলোয়। সরবরাহ নিশ্চিত করতে ২৪ ঘণ্টা চালু রাখতে হচ্ছে ভেন্টিলেটর কারখানা।

এই মুহূর্তে ভেন্টিলেটর উৎপাদনে সবচেয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে বেইজিংয়ের ‘অয়নমেড কোং’। কোম্পানির নির্বাহী কর্মকর্তা লি কাই গ্লোবাল টাইমসকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বিদেশ থেকে অনেক বেশি ক্রয়াদেশ আসছে। গত দুই মাসে তার কোম্পানি ব্রিটেন, ইতালি, মঙ্গোলিয়া ও ইউক্রেনের মতো বিশ্বের প্রায় ৪০টি দেশ থেকে অসংখ্য ক্রয়াদেশ পেয়েছে বলে জানান লি।

বিজনেস ডেটা অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১২ হাজার নতুন ভেন্টিলেটর কোম্পানি গড়ে উঠেছে। এর ফলে মোট কোম্পানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৪২০টিই চীনের সরকারি লাইসেন্সপ্রাপ্ত। এসব কোম্পানির প্রত্যেকটাতেই সপ্তাহে ৮০-১০০টি ভেন্টিলেটর তৈরি হচ্ছে। উৎপাদিত সব ভেন্টিলেটরই বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে।

ভেন্টিলেটর ছাড়াও এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে ব্যাপক ঘাটতি করোনা টেস্টিং কিট, পিপিই, গ্লাভস, গাউন, ইনফ্রেয়ার্ড থার্মোমিটার ও অন্যান্য মেডিকেল সরঞ্জামের। খবর পিপলস ডেইলি ও গ্লোবাল টাইমস

Share this news on:

সর্বশেষ