মাস্ক কমায় করোনা ঝুঁকি, ব্যবহার না করে বিপাকে যুক্তরাষ্ট্র-ইতালি-স্পেন

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন বলছে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে মাস্ক একেবারেই কার্যকর নয়। কিন্তু ‘মাস্ক সেভ লাইভস’ নামের একটি সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে, ভাইরাসটির সংক্রমণ রুখতে দারুণভাবে সহায়তা করতে পারে মাস্কের ব্যবহার। সংস্থাটির দাবি, বাজারে মাস্কের স্বল্পতা ঢাকতেই এমন অদ্ভুত কথা বলছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন, যাতে করে স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের প্রয়োজনীয় মাস্ক সরবরাহ করা যায়।

গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, যেসব দেশে মাস্ক ব্যবহারের সংস্কৃতি নেই বা যেসব দেশ কোভিড-১৯ সংক্রমণের সময় একেবারেই মাস্ক ব্যবহার করেনি, সেসব দেশে ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হয়ে মৃত্যুর হার সব থেকে বেশি।

অন্যদিকে, যেসব দেশে মাস্ক ব্যবহারের সংস্কৃতি রয়েছে এবং ভাইরাসটি সংক্রমণের সময় সাধারণ লোকেরা তুলনামূলকভাবে বেশি হারে মাস্ক ব্যবহার করেছেন, সেসব দেশে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর হার কম।

যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও ইতালির মতো দেশগুলিতে জনসাধারণের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারের প্রচলন কম এবং ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাবের পরেও তারা মাস্ক ব্যবহারে আগ্রহী হয়নি। এই তিনটি দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হার যথাক্রমে প্রতি মিলিয়নে ১০, ১৭৭ ও ২০৬ জন।

এশিয়ার তিনটি দেশ তাইওয়ান, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার জনসাধারণের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারের সংস্কৃতি প্রচলিত রয়েছে এবং ভাইরাসটির সংক্রমণের সময় তারা সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা হিসেবে মাস্ক ব্যবহার করেছে। দেশ তিনটিতে মৃত্যু হার প্রতি মিলিয়নে ০.২, ০.৪ ও ৩ জন।

সংস্থাটি বলছে, জাপানের প্রবীণ জনসংখ্যার গড় হার সব থেকে বেশি আবার দেশটিতে প্রথম দিকেই কোভিড-১৯ সংক্রমণ শুরু হয়েছিল, কিন্তু দেশটিতে এই রোগে মৃত্যু হার সব থেকে কম। এর অন্যতম একটি কারণ মাস্ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে জাপান সব থেকে এগিয়ে রয়েছে।

অন্যদিকে, কোভিড-১৯ সংক্রমণে মাস্ক কার্যকর কিনা সে বিষয়ে বৃহস্পতিবার সংবাদ প্রকাশ করেছে বার্তা সংস্থা সিএনএন। সংস্থাটির সংবাদে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রতিরোধে এশিয়ানদের মাস্ক ব্যবহারের সিদ্ধান্তই সম্ভবত সঠিক। বিশ্বজুড়ে সার্স ভাইরাস সংক্রমণের সময়কার উদাহরণ টেনে সিএনএন বলছে, “তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া ও মূল চীনা ভূখণ্ড, তিনটি দেশেই মাস্ক ব্যবহারের রীতি প্রচলিত রয়েছে এবং দেশ তিনটিই ভয়ঙ্কর প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সফল হয়েছে।”

স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের জন্য মাস্ক বাঁচাতেই মাস্ক ব্যবহারের বিরুদ্ধে কথা বলা হচ্ছে বলেও সিএনএন সংবাদে দাবি করা হয়েছে। তাদের মতে, যদিও মাস্ক ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করার পেছনে কোনো মহৎ উদ্দেশ্য থেকে থাকে, তবুও তা ভাইরাসটি ছড়াতে সাহায্য করছে।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ আদ্রিয়ান ব্রুস এ বিষয়ে বলেন, “বিজ্ঞান বলছে, আপনি যদি মাস্ক ব্যবহার করেন এবং সেটি স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকেন, তাহলে সেটি আপনার কোনো ক্ষতি করবে না। এমনকি বাড়িতে তৈরি একটি মাস্কও ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস করতে সক্ষম।”

মাস্ক ব্যবহারের পক্ষে যেসব যুক্তি তুলে ধরেছে ‘মাস্ক সেভ লাইভস’ সংস্থাটি, সেগুলো হলো-

  • মাস্ক ব্যবহারের ফলে আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে অন্যদের মাঝে সংক্রমণের ঝুঁকি কমে। কারণ, এর ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ থেকে নিঃসৃত ভাইরাস কণা মাস্কে আটকে যায় এবং তা বাতাসে ছড়িয়ে পড়তে পারেনা।
  • মাস্ক ব্যবহারের ফলে বাতাসে ভাসতে থাকা ভাইরাস দ্বারা সুস্থ ব্যক্তির আক্রান্ত হবার ঝুঁকি কমে।
  • মুখমণ্ডল সরাসরি স্পর্শ করার প্রবণতা কমে যায়, ফলে হাত থেকে ভাইরাস শরীরের ভেতর প্রবেশের সম্ভাবনা হ্রাস হয়। তথ্যসূত্র: মাস্কসেভলাইভস.কম ও সিএনএন

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ