‘জুনোটিক ডিজিজ’ কেন মানব সম্প্রদায়ের জন্য মারাত্মক হুমকি?

বেশ কিছু রোগ প্রাণীদেহ থেকে মানবদেহে সংক্রমিত হয়, এগুলিকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় জুনোটিক ডিজিজ বলা হয়ে থাকে। বর্তমান সময়ে মহামারীর আকার ধারণ করা কোভিড-১৯ একটি জুনোটিক রোগ।

কোভিড-১৯ এর সংক্রমণের পূর্বেও বহু রোগ প্রাণীদেহ থেকে মানবদেহে ছড়িয়ে মারাত্মক মহামারীর সূচনা ঘটিয়েছিল। এসব জুনোটিক রোগের মধ্যে ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু, প্লেগ, অ্যানথ্রাক্স, ইবোলা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

এসব ফ্লু সমগোত্রীয় অতীতেও বৃহৎ মহামারীর দেখা দিয়েছিল। ১৯১৮ সালে ছড়িয়ে পড়া স্প্যানিশ ফ্লু’তে আক্রান্ত হয়ে প্রায় অর্ধ লাখ লোক মৃত্যুবরণ করে এবং ১৯৬৮ সালে ছড়িয়ে পড়া হংকং ফ্লু’র কারণে মারা গিয়েছিল প্রায় সাত লাখ মানুষ।

আসুন জেনে নিই, প্রাণীদেহ থেকে মানবদেহে ছড়িয়ে পড়া এসব রোগ কেন এতো মারাত্মক

মানুষের খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা অন্য প্রাণীদের থেকে আলাদা এবং আরও নানা প্রাকৃতিক কারণে মানুষের প্রতিরোধ ব্যবস্থাও তাদের থেকে ভিন্ন। তাছাড়া আমাদের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় প্রাণী থেকে সংক্রমিত নতুন ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কোনো অভিজ্ঞতা নেই, সুতরাং এটি জানে না কিভাবে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা অধিকাংশ ভাইরাসকে প্রাকৃতিকভাবেই ধ্বংস করতে সক্ষম হয়। কিন্তু প্রাণী থেকে নতুন কোনো ভাইরাসের সংক্রমণের সময় কার্যত এটি অনেকটাই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে।

প্রাণী থেকে নতুন প্রজাতির ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সেটি প্রতি আক্রমণ করতে বাধ্য। তাই প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাসটির বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করে সেটি ধ্বংস করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে শুরু করে।

যেহেতু এই ভাইরাসের সঙ্গে পূর্বের কোনো লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা নেই, তাই প্রতিরোধের জন্য কার্যকর কোনো ইম্যুনিটি বা অ্যান্টিবডি দেহে মজুদ থাকে না। ফলে ভাইরাসটির বিরুদ্ধে কার্যকর উপাদান প্রস্তুত করতে ও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বেশ কিছুদিন সময় লেগে যায়। এর মধ্যে ভাইরাসটি অনেক সময় চূড়ান্ত বিস্তার লাভ করে, কখনো রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেয়ার সক্ষমতা অর্জন করে।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নটিংহাম ইউনিভার্সিটির ইনফেকশন ইম্যুনোলজি বিভাগের প্রফেসর ক্রিস্টোফার কোলম্যান বলেন, “একটি প্রচলিত ধারণা হলো কোনো ভাইরাস যে হোস্টের (প্রাণীদেহে) মধ্যে প্রথমে বিস্তার লাভ করে, সেই হোস্টের জন্য এটি কম বিপদজনক হয়ে ওঠে।”

“এটি যদিও সবক্ষেত্রে সত্যি নাও হতে পারে, তবে যে ভাইরাসটি মানবদেহে সংক্রমিত হয় সময়ের সঙ্গে সেটি মানুষের জন্য কম বিপদজনক হয়ে ওঠে। কারণ ভাইরাস ও মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মধ্যে ক্রমাগত ‘অস্ত্র-প্রতিযোগিতা’ ও বিবর্তনের ফলে একটি অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। হয়তো ভাইরাসটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয় না, কিন্তু আগের মতো ক্ষতি সাধন ও বিস্তার লাভে ব্যর্থ হয়” বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেন, “মুরগির ছোঁয়াচে বংক্রাইটিস ভাইরাস করোনাভাইরাস পরিবারের অন্তর্গত হলেও সেটি কিন্তু মানবদেহের কোনো ক্ষতি করতে পারেনা, কিন্তু শুকর ছানার ক্ষেত্রে একই ভাইরাস শতভাগ প্রাণঘাতী।”

অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে বিবর্তনের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও রোগের বিরুদ্ধে মানুষ বা অন্য কোনও প্রাণী প্রাকৃতিক উপায়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সক্ষম। কিন্তু যখন নতুন কোনো প্রজাতির কোনো ভাইরাস এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে বিস্তার লাভ করে, তখন প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই নতুন আক্রান্ত প্রজাতিটির জন্য সেটি মারাত্মক হয়ে ওঠে। তথ্যসূত্র: মেডিক্যাল নিউজ টুডে

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: