কেবিন ফিভার বা গৃহবন্দীর উপসর্গ থেকে মুক্তির উপায়

সাধারণত টানা বৃষ্টির সময় বা প্রচণ্ড ঠাণ্ডার সময় ঘরে আটকে থাকার সঙ্গে কেবিন ফিভার বা গৃহবন্দীর উপসর্গের একটি সম্পর্ক রয়েছে। তবে বাস্তবতা হলো- বাইরের পৃথিবী থেকে দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকলে যে কোনো সময় এটি দেখা দিতে পারে।

কেবিন ফিভার বা গৃহবন্দীর উপসর্গ হলো- লম্বা সময়ের জন্য ঘরে আটকে থাকার ফলে দেখা দেয়া নানা উপসর্গ বা আবেগের সমষ্টি। এটি ঝড়-বৃষ্টি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কিংবা কোভিড-১৯ সহ বিভিন্ন কারণে ঘরে আটকে পড়ার ফলে হতে পারে।

বর্তমানে যেহেতু আমরা কোভিড-১৯ এর ফলে দীর্ঘদিনের জন্য ঘরের ভেতর আটকে আছি কিংবা সামাজিক বিচ্ছিন্নতা পালন করছি, তাই অনেকের মধ্যে এই কেবিন ফিভার দেখা দিতে পারে।

কেবিন ফিভারের উপসর্গ সমূহ
কেবিন ফিভারের মূল উপসর্গ অবসাদ ও উদাসীনতা। এছাড়াও অস্থিরতা, হতাশা, মনোযোগহীনতা, নিদ্রাহীনতা, সময় মতো ঘুমাতে না পাড়া, ঘুম থেকে প্রয়োজন অনুযায়ী উঠতে না পারা, দুর্বলতা, আশপাশের মানুষদের প্রতি অবিশ্বাস, নেতিবাচক চিন্তাভাবনা, ধৈর্যের অভাব, মন খারাপ প্রভৃতি রয়েছে। তবে ব্যক্তি ভেদে ভিন্ন ভিন্ন এক বা একাধিক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

চলুন জেনে নিই, কেবিন ফিভার উপসর্গ দেখা দিলে কী করবেন
কেবিন ফিভার যেহেতু একটি মানসিক অবস্থা তাই এর প্রথাগত তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। উদ্ভূত পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে জীবনযাত্রার সাধারণ কিছু পরিবর্তন মানুষকে গৃহবন্দীর উপসর্গগুলি থেকে মুক্তি এনে দিতে পারে।

রুটিন গড়ে তুলুন
সাধারণত আমরা প্রতিদিনের ৯-৫টা অফিস ও বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকি, ফলে আমাদের জীবন একটা রুটিনের মধ্যে থাকে। ঘরে আটকে থাকার এই সময়টায় যেহেতু সেরকম রুটিন থাকেনা তাই আমরা নিজেকে কর্মহীন, একা ও বিচ্ছিন্ন অনুভব করি। সেজন্য প্রতিদিনের নির্দিষ্ট রুটিন গড়ে তুলুন।

নিয়মিত শরীরচর্চা করুন
গবেষণায় দেখা গেছে, শরীরচর্চা করা লোকেরা তুলনামূলকভাবে কম উদ্বেগ আর অবসাদে ভোগেন। এর অন্যতম কারণ হলো- শরীর থেকে ঘাম ঝরালে দেহের স্ট্রেস হরমোন বা করটিসোলের মাত্রা হ্রাস হয়। সুতরাং নিয়মিত শরীরচর্চা করুন।

নিজেকে সময় দিন
এই সামাজিক বিচ্ছিন্নতার সময়ে বাবা-মায়ের উচিৎ সন্তানদের সময় দেয়া, পার্টনারদের উচিৎ পরস্পরকে সময় দেয়া, পরিবারের সদস্যদের উচিৎ একে অন্যকে সময় দেয়া। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, আপনি নিজেকে একেবারেই সময় দেবেন না। যদিও কেবিন ফিভার হলে মন অন্য লোকের সংস্পর্শ পেতে চায়, তবে আপনি নিজেকে সময় দেয়ার মধ্য দিয়েও উপসর্গগুলি দূর করতে পারেন। মাঝে মধ্যে নির্জন কোনো স্থানে বসে বই পড়ুন, মেডিটেশন করুন কিংবা গান শুনুন।

সামাজিকতা গড়ে তুলুন
সমস্যাটি যেহেতু সামাজিক বিচ্ছিন্নতা থেকে উদ্ভূত তাই সামাজিক যোগাযোগ গড়ে তোলা এর অন্যতম সমাধান হতে পারে। তবে এই মুহূর্তে আপনি চাইলেই বন্ধুদের সঙ্গে সিনেমা দেখতে, রেস্টুরেন্টে খেতে কিংবা ঘুরতে যেতে পারছেন না। তবে আপনি চাইলে প্রযুক্তির সহায়তায় দূর থেকে ভিন্ন রকম সামাজিকতা গড়ে তুলতে পারেন।

বাইরে সময় কাটান
সামাজিক বিচ্ছিন্নতার এই সময়টায় বাইরে বেরোতে বা মানুষের সংস্পর্শে যেতে বারণ করা হচ্ছে। তবে কেবিন ফিভার সারানোর উত্তম উপায় হলো বাইরে সময় কাটানো। এক্ষেত্রে আপনি এই সময়টায় ছাদে কিংবা বারান্দায় হাঁটতে পারেন। এছাড়াও ঘরের জানালা খোলা রাখতে পারেন যাতে খোলা হাওয়া ঢোকে। এমনকি বাগান করা বা গাছ লাগানো প্রভৃতি কর্মকাণ্ডে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে পারেন। তথ্যসূত্র: হেলথলাইন.কম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ