উচ্চ তাপমাত্রায় দীর্ঘ সময় টিকে থাকে করোনাভাইরাস

চীনের উহান শহর থেকে গেল ডিসেম্বরে ছড়িয়ে পড়া নোভেল করোনাভাইরাস বিশ্বের এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি মানুষকে মেরে ফেলেছে। অতি রহস্যময় এই ভাইরাসটির চূড়ান্ত গতিপ্রকৃতি নিরূপণে হিমশিম খাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কেউ বলছেন, এটি প্রতিনিয়ত রূপ বদলাচ্ছে। আবার কেউ বলছেন, ঠাণ্ডায় এর প্রাদুর্ভাব ক্ষমতা বেশি, গরমে কম। তবে এসব তথ্য সাময়িক জল্পনা-কল্পনাতেই সীমাবদ্ধ।

এবার সেই জল্পনায় নতুন তথ্য নিয়ে হাজির হয়েছেন ফ্রান্সের একদল বিজ্ঞানী। তারা বলছেন, উচ্চ তাপমাত্রাতেও দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকতে পারে করোনাভাইরাস। শনিবার বায়োআরএক্সআইভিডটওআরজি’তে নন-পিয়ার-রিভিউড গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ ফ্রান্সের অ্যাক্স-মার্সাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেমি চ্যারেল ও তার সহকর্মীরা করোনাভাইরাসকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১৪০ ডিগ্রি ফারেনহাইট) তাপমাত্রায় এক ঘণ্টা ধরে ফুটিয়ে দেখেন যে, তখনও কিছু ভাইরাস পুনরুৎপাদন অব্যাহত রেখেছে।

প্রাকৃতিকভাবে পৃথিবীর উষ্ণতার সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যায়, ১৯১৩ সালের ১০ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ডেথ ভ্যালিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৫৬ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার মানে করোনাভাইরাসের ঠিকে থাকা বা ধ্বংস হওয়ার ক্ষেত্রে পৃথিবীর সাধারণ তাপমাত্রা কোনো প্রভাব ফেলছে না।

বিজ্ঞানীরা বলেছেন, করোনাভাইরাসকে পুরোপুরি মারতে তাপমাত্রা প্রায় ফুটন্ত অবস্থায় (যেমন: পানির স্ফুটনাংক ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) নিয়ে যেতে হয়েছিল।

জানা গেছে, ভাইরাসের কার্যক্রম পরীক্ষার জন্য আদর্শ মানসম্মত আফ্রিকান সবুজ বানরের কিডনি সেলে ভাইরাসটি সংক্রমিত করেছিলেন বিজ্ঞানীরা। জার্মানির বার্লিনের একজন রোগীর শরীর থেকে ভাইরাসটির নমুনা নেয়া হয়েছিল।

নোংরা ও পরিষ্কার পরিবেশে পৃথক টিউবে প্রাণীর প্রোটিনসহ ভাইরাসটি রাখা হয়েছিল। পরিষ্কার পরিবেশে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ভাইরাসটিকে তাপ দেয়ার পর দেখা যায়, ভাইরাস কম কার্যকর হয়েছে। কিন্তু নোংরা পরিবেশে রাখা ভাইরাসটি একই তাপমাত্রায় তখনও বেঁচে ছিল এবং পুনরুৎপাদন অব্যাহত রেখেছে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এমতাবস্থায় ল্যাবে করোনাভাইরাস নিয়ে যারা সরাসরি গবেষণা বা আক্রান্তদের নমুনা পরীক্ষা করছেন, তাদের সুরক্ষা নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে।

তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, ৯২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১৫ মিনিট ধরে ফুটানো হলে করোনাভাইরাস পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে।

তাই ল্যাব কর্মী, চিকিৎসক ও করোনা আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের এই বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ