করোনাভাইরাস: গর্ভবতী নারীদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের উত্তর

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের মহামারী ছড়িয়ে পড়ায় নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই আতঙ্কিত। তবে, যেসব নারী এখন গর্ভবতী তারা নিজের অনাগত সন্তানকে নিয়ে বিশেষ চিন্তিত।

কোভিড-১৯ রোগের উপসর্গ অনেকটাই সর্দি, জ্বর ও ফ্লুয়ের মতো। তবে, এটি বয়স্ক ব্যক্তি, দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এবং শ্বাসযন্ত্রের জটিলতায় আক্রান্ত লোকদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকি সৃষ্টি করে।

গর্ভবতী নারীদের কি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি?
এ বিষয়ে ইংল্যান্ডের দ্যা রয়্যাল কলেজ অব মিডওয়াইভস গর্ভবতী নারীদেরকে আশার বাণী শুনিয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষের মতে, গর্ভবতী নারীদের করোনায় আক্রান্ত হবার ঝুঁকি আর দশজন সাধারণ মানুষের মতই। তবে, এখন পর্যন্ত তাদের কাছে খুব বেশি তথ্য উপাত্ত নেই।

এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, “সাবধানতা হিসেবে গর্ভবতী নারীরা চাইলে ১২ সপ্তাহের সেলফ কোয়ারেন্টাইন বা স্ব-বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করতে পারে। কারণ, গর্ভবতী অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তার প্রভাব গর্ভে থাকা সন্তানের উপর পড়তে পারে। অনেক গর্ভবতী নারীই এ সময় ঠাণ্ডা বা ফ্লুয়ের মতো উপসর্গ অনুভব করতে পারেন।

কলেজটির মহাপরিচালক ড. অ্যাডওয়ার্ড মরিস বলেন, “আমরা গর্ভবতী নারীদের আশ্বস্ত করতে চাই যে, করোনাভাইরাসে তাদের আক্রান্ত হবার ঝুঁকি অন্য লোকদের থেকে বেশি নয়। এখন পর্যন্ত এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি, যাতে বলা যাবে- রোগটিতে আক্রান্ত হলে তারা সুস্থ কোনো ব্যক্তির থেকে জটিল পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন।”

করোনাভাইরাস কি মা থেকে বাচ্চার মধ্যে ছড়াতে পারে?
ইউরোপিয়ান রেসপাইরেটরি জার্নালে ৯ এপ্রিল প্রকাশিত এক নিবন্ধে চিনা গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, গর্ভবতী মা থেকে শিশুর শরীরে হয়তো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে।

তবে, এ বিষয়ে এখনো কোনো অকাট্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তারা উহান প্রদেশে জন্ম নেয়া চারটি শিশুর উপর সমীক্ষা চালিয়ে এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তবে এই সমীক্ষার সীমাবদ্ধতার কথাও গবেষকরা স্বীকার করেছেন।

এ বিষয়ে ড. ঝি ঝিয়াং (উহান ইউনিভার্সিটি) বলেন, কোভিড-১৯ অত্যন্ত সংক্রামক ব্যাধ, তবে গর্ভাবস্থায় সংক্রমণ ঘটতে পারে না এবং মা ও সন্তানের জন্য এটি একটি সুসংবাদ।”

৯ মার্চ ড. মরিস বলেছিলেন, “যদিও তথ্য উপাত্ত সীমিত তবে এটি বলা যেতে পারে যে মা থেকে শিশুর মধ্যে কোভিড-১৯ সংক্রমণ ঘটবে না।”

কিন্তু, ১৪ মার্চ কলেজটির প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, গর্ভবতী অবস্থায় সংক্রমণের দু’টি সম্ভাব্য ঘটনার কথা জানা গেছে। তবে, শিশু দু’টি গর্ভাবস্থায় সংক্রমিত হয়েছে না জন্মের পর এটি ঘটেছে, তা নিশ্চিত করা যায়নি। রিপোর্টে বিশেষজ্ঞদের বরাতে উল্লেখ করা হয় যে, ভ্রূণ অবস্থায় সংক্রমণ ঘটার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

শিশুকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত মায়ের দুগ্ধ পান করানো কতটা নিরাপদ?
এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, যাতে বলা যেতে পারে- মায়ের দুধের মধ্য দিয়ে কোভিড-১৯ রোগটির সংক্রমণ ঘটে। তাই মায়ের দুধ পান করানো নিরাপদ বলেই বিবেচিত হবে।

কলেজটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, “চিনে ৯ জন সংক্রমিত মায়ের বুকের দুধ পরীক্ষা করে সেখানে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি।”

করোনায় আক্রান্ত মা থেকে শিশুকে আলাদা রাখতে হবে?
এখন পর্যন্ত যেসব তথ্য প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে তাতে বলা যাবে না যে, আক্রান্ত মা থেকে বাচ্চাকে আলাদা রাখা হলে কোনো সুফল পাওয়া যাবে। বরং তাদের আলাদা করা হলে মা ও বাচ্চা উভয়ের জন্যই তা কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

এ বিষয়ে অধ্যাপক রাসেল ভিনার জানিয়েছেন, “এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে আমরা বিশ্বাস করি না যে, কোভিড-১৯ আক্রান্ত মা থেকে তার শিশুকে আলাদা করতে হবে। মা ও শিশুকে আলাদা করা হলে উভয়ের মানসিক স্বাস্থ্য প্রভাবিত হতে পারে। তবে ভবিষ্যতে নতুন কোনো তথ্য পাওয়া গেলে তখন এই পরামর্শ বদলের প্রয়োজন হতে পারে।”

গর্ভবতী নারীরা কিভাবে করোনাভাইরাস থেকে নিজেকে রক্ষা করবেন?
আর দশজনের মতোই তাদেরকে একই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর তা হলো- বারবার হাত ধোয়া, মুখ-নাক-চোখে হাত না দেয়া, বাড়ির বাইরে না বেরোনো, মাস্ক ব্যবহার করা এবং অন্য লোকদের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকা। বাড়তি সতর্কতা হিসেবে তারা স্ব-বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন করতে পারেন।

গর্ভবতী নারীর করোনার উপসর্গ দেখা দিলে কী করবেন?
করোনার উপসর্গ দেখা দিলে অন্যদের থেকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করুন এবং ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন। প্রয়োজনে রাষ্ট্রের জরুরি কোভিড-১৯ সেবা নাম্বারে যোগাযোগ করুন।

সচেতন থাকুন, নিরাপদ থাকুন। অহেতুক দুশ্চিন্তা করবেন না, দুশ্চিন্তা আপনার এবং আপনার শিশুর উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তথ্যসূত্র: দ্যা ইন্ডিপেন্ডেন্ট (ইউকে)

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: