যেসব খাদ্যাভ্যাস রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে

করোনাভাইরাস বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এখনও এমন কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি, যা ভাইরাস মেরে ফেলতে পারে বা এর বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে। তাই এই ভাইরাস মোকাবেলায় আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো জরুরী। অথচ, আমরা নিজেদের অজান্তেই এমন কিছু খাদ্যাভ্যাসকে লালন করছি, যা আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে কমিয়ে দিচ্ছে। এমনকি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে বলে ধারণা করা হয় এমন খাদ্যও অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে তা আপনার ইম্যুউনিটি কমিয়ে দিতে পারে। অর্থাৎ খাদ্যাভ্যাসকে বলা যায়, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো বা কমানোর ক্ষেত্রে একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।

চলুন জেনে নিই, যেসব খাদ্যাভ্যাস রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে

মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান
মাঝে মধ্যে অল্পস্বল্প মদ্যপান রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় বলে একটি বদ্ধমূল ধারণা রয়েছে। তবে অতিরিক্ত এলকোহল বা মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে আজই ত্যাগ করুন। কারণ, অতিরিক্তি মদ্যপান রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। ‘এলকোহল রিসার্চ’ নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধে গবেষকরা উল্লেখ করেছেন, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়ার সঙ্গে অতিরিক্ত মদপানের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এর ফলে নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় বলেও উল্লেখ করা হয়েছে, যা মহামারি সময়ে আপনার জন্য মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।

অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
যাদের অতিরিক্ত লবণ খাওয়ার অভ্যাস আছে, তাদের এখনই এটি ত্যাগ করা উচিত। কারণ, অতিরিক্ত লবণ বা সোডিয়াম গ্রহণের ফলে শরীরে শুধু যে অতিরিক্ত তরল জমা ও উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করে তাই নয়; এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও দুর্বল করে দেয়। সম্প্রতি জার্মানির ‘ইউনিভার্সিটি হসপিটাল অব বন’র এক গবেষণা থেকে জানা যায়, অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়।

অতিরিক্ত চিনি খাওয়া
আমেরিকান জার্নাল অফ ক্লিনিকাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, সারারাত উপোষ করার পরে কিছু মানুষকে সকালে ১শ গ্রাম চিনি খাওয়ানোর ২ ঘণ্টা পর পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাদের রোগপ্রতিরোধ কোষের ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং তা সর্বাধিক ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হয়।

মাত্রারিক্ত চা-কফি
স্বাভাবিক মাত্রায় চা বা কফি (ক্যাফেইন) খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য অনেক উপকারী হলেও অতিরিক্ত খাওয়া আবার খারাপ। চা বা কফিতে উচ্চ মাত্রার এ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও এ্যান্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকে, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। কিন্তু অতিরিক্ত ক্যাফেইন ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। আর পর্যাপ্ত ঘুম না হলে তা শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

আঁশ জাতীয় খাদ্য গ্রহণে কার্পণ্য করা
গবেষকরা বলছেন, আঁশ জাতীয় খাবার হজমশক্তি বৃদ্ধি, ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। শাক, সবজি, ফলমূল, গোটা শস্য, ডাল, বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার থেকে থেকে এই আঁশ পাওয়া যায়। কিন্তু অনেকেই শাক-সবজি খেতে কার্পণ্য করে। সচরাচর পাওয়া যায় অথচ আমরা খেতে কার্পণ্য করি এমন আঁশযুক্ত শাক-সবজির মধ্যে কচুশাক, মিষ্টি আলুর শাক, কলমি শাক, পুদিনা পাতা, পুঁইশাক, মুলা শাক, ডাঁটা শাক, লাউ ও মিষ্টি কুমড়ার আগা-ডোগা সাজনা, কলার মোচা, ঢেঁড়স, ডাঁটা, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, গাজর, শিম, পটল, কচু, বেগুন, বরবটি ও মটরশুঁটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

পর্যাপ্ত সবুজ শাক-সবজি না খাওয়া
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সবুজ শাক-সবজি রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশেষভাবে সহায়ক। এগুলো ভিটামিন এ, সি, ফোলেট ও বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ সমৃদ্ধ, যা পুষ্টি সরবরাহের পাশাপাশি রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: