চীনের ভিন্ন মতাবলম্বী শিল্পী আই উইউই, একজন স্পষ্টভাষী মানুষ। অকপটে মানুষের পক্ষে কথা বলতেন। তিনি যা বলতেন, তার বেশিরভাগই যেত চীনের সরকারের বিরুদ্ধে। আর এজন্যই তার ঠাঁই হয় নির্জন কারাকক্ষে। যেখানে ২০১১ সালে টানা তিন মাস কেটে যায়।
এরপরও ছাড় নেই। অভিযোগ আনা হলো- কর ফাঁকি দেয়ার। শুধু রাজনৈতিক ভিন্ন অবস্থানের জন্যই ছিল সেই অভিযোগ, এমনটাই মনে করেন বেশির ভাগ মানুষ। সেই অভিযোগ থেকে রেহাইয়ের পর উইউইকে কড়া নজরদারির মধ্যে রাখা হয়। এখন ইংল্যান্ডে ৬২ বছর বয়সী এই শিল্পীর নিবাস। করোনার এই মহামারীর সময়ে তিনি সেখানেই একান্তে সময় কাটাচ্ছেন।
উইউইয়ের দেশ চীনের উহান শহরে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রাদুর্ভাব হয় করোনাভাইরাসের, যা সারা বিশ্বে এটি ছড়িয়ে পড়ে। এই মহামারী চীন যেভাবে সামলানোর চেষ্টা করেছে তারও তীব্র সমালোচনা করেছেন শিল্পী উইউই।
সম্প্রতি দ্য আর্ট নিউজপেপারে এক নিবন্ধে করোনাভাইরাস নিয়ে বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন উইউই। তিনি লিখেছেন, চীনের তথ্য চাপা দেয়ার কারণেই আজ সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়েছে করোনা। পশ্চিমা দুনিয়ে থেকে চীনের তথ্য চাপা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এই শিল্পী মনে করেন, পশ্চিমের এই অভিযোগ বেশ উপরভাসা। পশ্চিমের প্রশ্ন করতে হবে চীন কেন তথ্য চাপা দেয়?
এর উত্তরও দেন এই ভাস্কর। তার কথা, তথ্য নিয়ন্ত্রণ এবং বিকৃতি ছাড়া চীন চলতেই পারে না।
উইউই বলেন, 'চীন সবকিছু নিয়েই রাজনীতি করে। তারা যতটা চায় ততটা সংখ্যাই জানাবে। আর পেছনে নিশ্চিত কারণ থাকে। তাদের কাছে সংখ্যা কোনো বিষয় না। ব্যক্তির কোনো মর্যাদা তাদের কাছে নেই।'
উইউই বলেন, 'কোনো কোনো সময় আপনি ব্যক্তির নামই খুঁজে পাবেন না। এরা একেবারে লাপাত্তা হয়ে যাবে। কারণ, রাষ্ট্র তার নিজের ইমেজ রক্ষা করতে সদাতৎপর।'
২০০৮ সালে পশ্চিম চীনের সিচুয়ানে ভূমিকম্পে প্রায় ৯০ হাজার মানুষ মারা যায় বলে মনে করা হয়। সেই সময় স্কুলভবনে চাপা পড়ে অন্তত পাঁচ হাজার শিশু মারা যায়। 'রিমেমবারিং' নামের এক শিল্পকর্মে উইউই এক মায়ের করুন আর্তি তুলে ধরেছিলেন। সেখানেও সংখ্যা চাপা দেয়ার মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছিল।
উইউই বলেন, 'চীনের কোনোদিন শিক্ষা হবে না। কোনো ধরণের বিপর্যয় তাদের আছে তা তাদের বিচার্য নয়। তারা একটি বিষয়ই জানে তাহলো, তারা তাদের কর্তৃত্ববাদী ক্ষমতা ব্যবহার করে কীভাবে ঘটনাতে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করবে। এই গোয়ার্তুমি তাদের আবার নতুন সংকটের মধ্যে ফেলে।'
টাইমস/জিএস