করোনার মধ্যে রোজায় সঠিক খাদ্যাভ্যাসে নজর দিন

শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে ঠিক এ সময় সবাই বাড়িতে গৃহবন্দি। যে গতিতে দেশে করোনার বিস্তার ঘটছে তাতে বলাই যায়, আসন্ন রমজান মাসেও সবাইকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে শারীরিক সক্ষমতা বজায় রাখতে হবে।

এ অবস্থায় সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, করোনাভাইরাস মূলত যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের সহজেই ঘায়েল করে। এজন্য এবারের রমজানে রোজায় বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করা জরুরী। তা সুস্থভাবে রোজা পালন ও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখতে সঠিক খাবার নির্বাচনে একটি পরিকল্পনা থাকা আবশ্যক।

পুষ্টিবিদরা বলছেন, রমজান মাসে সবাইকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে শারীরিক সক্ষমতা বজায় রাখতে হবে। এবার গ্রীষ্মকালে রোজা হওয়ায় প্রায় ১৪ ঘণ্টা পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে। তাই সুষম খাদ্য নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। করোনার মধ্যে রোজায় কী খেতে হবে তা নিয়ে পুষ্টিবিদরা কিছু কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। সেগুলো হলো-

কোভিড-১৯ প্রতিরোধের জন্য খাবার তালিকায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট (ভিটামিন এ, সি, ই) ও জিংকসমৃদ্ধ খাবার বেশি রাখতে হবে। ভিটামিন-সি ভাইরাস প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে।

এ ধরনের খাবার হিসেবে আমলকী, লেবু, জাম্বুরা, পেয়ারা, টমেটো, কমলা, কাঁচামরিচ ইত্যাদি রাখা যায়। এছাড়া মৌসুমি ফল তরমুজ, পেঁপে, আনারস, স্ট্রবেরি, জলপাই এগুলোও তালিকায় রাখতে হবে। বিটা ক্যারোটিনসমৃদ্ধ খাবার যেমন গাজর, মিষ্টিআলু, বিট এবং জিংক ও প্রোটিনসমৃদ্ধ মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, বাদাম, ডাল, গমজাতীয় খাবার, ওটস, লাল চাল ইত্যাদি খেতে পারেন।

টকদই প্রোবায়োটিক যা শ্বাসযন্ত্র এবং পরিপাকতন্ত্রের সংক্রমণে কার্যকরী। তাই ইফতার বা সেহরিতে অল্প পরিমাণ টকদই খাবেন।

গ্রীষ্মকালীন রোজার কারণে ইফতার থেকে সেহরি পর্যন্ত সময়ে পানিশূন্যতা রোধে বেশি পরিমাণ পানি এবং তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে।

ইফতারে কচি ডাবের পানি, লেবুর শরবত, বেলের শরবত, ইসুবগুলের ভুসি, কাঁচা আমের শরবত রাখলে পানিশূন্যতা রোধের পাশাপাশি ভিটামিন ও খনিজ লবণের ঘাটতি পূরণ করবে। উল্লেখ্য, শরবত অতিরিক্ত চিনিযুক্ত হবে না।

সব ধরনের অতিরিক্ত তেলেভাজা খাবার পরিহার করুন, না হলে অ্যাসিডিটি হয়ে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াতে পারে। ইফতারে চিঁড়া, টকদই ও কলা খেতে পারেন। এছাড়া সিদ্ধ ছোলা, আদা, পুঁদিনাপাতা, ধনেপাতা, লেবু, শসা, টমেটো দিয়ে মিশিয়ে খেতে পারেন যা আঁশ, প্রোটিন, খনিজ লবণের চাহিদা পূরণ ও কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করবে। ইফতারে মিশ্রফলের সালাদ খাওয়া যেতে পারে। ইফতারে চাল, ডাল মিশ্রিত পাতলা খিচুড়ি বা হালিম খেতে পারেন যা মুখরোচক এবং সুষম খাবার।

ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রাতের খাবারটাকে ইফতারে এবং দুপুরের সমপরিমাণ খাবার সেহরির সময়ে খেতে হবে। সন্ধ্যারাতে হালকা খাবার যেমন- দুধ, ওটস ও বাদাম অথবা আটার রুটি, সবজি খাওয়া যাবে।

ডায়াবেটিস রোগীরা ইনসুলিন বা ওষুধের মাত্রা চিকিৎসকের পরামর্শে ঠিক করে নেবেন এবং হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি এড়ানোর জন্য সেহরি শেষ সময়ে গ্রহণ করবেন।

ইউরিক এসিড এবং কিডনিজনিত সমস্যা থাকলে ডাল এবং বেসনের পরিবর্তে ইফতার তৈরিতে চালের গুঁড়া ও ময়দা ব্যবহার করতে পারেন। বেগুনি ও পিয়াজুর পরিবর্তে ডিম সিদ্ধ খেতে পারেন।

যাদের ওজনাধিক্য আছে তারা অতিরিক্ত তেল ও সরল শর্করাজাতীয় খাবার খাবেন না, যেমন- চিনি ও অন্যান্য মিষ্টিজাতীয় খাবার। এছাড়া খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে ক্যালরির পরিমাণের দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।

সেহরিতে ভাত, সবজি, মাছ, মাংস, ডিম ও দুধ খাবেন। এছাড়া ২-৩টি খেজুর সারাদিনে আপনাকে শক্তি জোগাতে সাহায্য করবে।

প্রক্রিয়াজাত খাবার, কোমল পানীয়, কৃত্রিম জুস, আইসক্রিম, চর্বিযুক্ত খাবার, অ্যালকোহল, জর্দা, সিগারেট পরিহার করতে হবে। কারণ এগুলো ভাইরাস সংক্রমণে সহায়তা করে।

নিয়মিত ৩০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করবেন। তবে রোজা পালন অবস্থায় দিনের বেলা না করে ইফতারের পরে ব্যায়াম করতে হবে।

সব ধরনের মানসিক চাপমুক্ত থাকতে চেষ্টা করবেন অন্যথায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। দিনের বেলা সম্ভব হলে ১৫-২০ মিনিট রোদে বসুন।

রোজার সময় সুষম খাদ্য পরিকল্পনার মাধ্যমে পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারলে ভাইরাস প্রতিরোধের পাশাপাশি সুস্থভাবে পবিত্র রমজানের সব রোজা পালন করতে পারবেন।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: