করোনায় কিডনি-ফুসফুস-মস্তিষ্কে জমছে রক্ত

অতি রহস্যময় করোনাভাইরাসের চূড়ান্ত গতিপ্রকৃতি নিরূপণে হিমশিম খাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। শুরু থেকেই এই ভাইরাসকে ফুসফুসে সংক্রমণ সৃষ্টিকারী রোগ হিসেবে ধারণা করা হতো। বর্তমানে অনেক বিশেষজ্ঞরাই এটাকে এখন ফুসফুসের রোগের চাইতেও বেশি বলে মনে করছেন।

মার্কিন বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভাইরাসটি শরীরের একাধিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ অকেজো করে দিতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি ও জমাট বাঁধার মতো কয়েকটি বৈশিষ্ট্য শনাক্ত করেছেন তারা।

রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের কয়েকজন বিশেষজ্ঞের পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে এমন তথ্য।

নিউইয়র্কের মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের করোনা আক্রান্তদের পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, তাদের ফুসফুসের একটি অংশ অস্বাভাবিকভাবে রক্তশূন্য হয়ে পড়ছে। হাসপাতালের কিডনি বিশেষজ্ঞরা জানান, কিডনি ডায়ালাইসিস ক্যাথেটারে রক্ত জমাট বেঁধে থাকতে দেখা যাচ্ছে। স্নায়ু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রক্ত জমাট বাঁধার কারণে স্ট্রোকের রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তরুণদের মধ্যে অনেকেই স্ট্রোক করছেন। যারা স্ট্রোক করেছেন তাদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই করোনায় আক্রান্ত।

হাসপাতালটির নিউরোসার্জন ডা. জে. মকো বলেন, ‘এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে কোভিড-১৯ রক্ত জমাট বাঁধতে অস্বাভাবিক ভূমিকা রাখছে। অনেক বিশেষজ্ঞরাই এটাকে এখন শুধু ফুসফুসের রোগের চাইতেও বেশি বলে মনে করছেন।’ তিনি জানান, করোনায় আক্রান্ত কয়েকজন তরুণের ক্ষেত্রে প্রথম উপসর্গই ছিল স্ট্রোক।

হাসপাতালটির সভাপতি ডা. ডেভিড রেইখ বলেন, ‘রক্ত জমাট বাঁধা আটকানো গেলে হয়তো রোগটির ভয়াবহতা কিছুটা কমে আসতে পারে। তবে, এখনো বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। তাই উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন নিয়ম অনুসরণ করা হচ্ছে না।’

মার্চের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে তিন সপ্তাহে ৩২ জন স্ট্রোক করা রোগীকে দেখেছেন নিউরোসার্জন ডা. জে. মকো। এই রোগীদের মস্তিষ্কে অস্বাভাবিকভাবে জমাট বাঁধা রক্ত দেখেছেন তিনি।

মকো জানান, এই তিন সপ্তাহে স্বাভাবিকের চেয়ে দ্বিগুণ সংখ্যক রোগী এসেছে। পাঁচ জনের বয়স ছিল ৪৯ বছরের নিচে। সবচেয়ে কম বয়সী রোগীর বয়স ৩১ বছর। তারা কেউই স্ট্রোকের ঝুঁকিতে ছিলেন না।

ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডা. হুম্যান পোর জানান, হাসপাতালে ১৪ জন করোনা রোগীকে ভেন্টিলেটর সেবা দিতে গিয়ে অবাক হয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘সাধারণত নিউমোনিয়ায় যেমন হয়, এই রোগীদের ফুসফুস তেমনটা শক্ত হয়ে যায়নি। বরং মনে হচ্ছিল, ফুসফুসের মধ্যে রক্তের প্রবাহ ঠিকভাবে হচ্ছে না।’

জানা গেছে, ইস্টার সানডের রাত তিনটার দিকে নিউরোসার্জন ডা. জে. মকোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন ফুসফুস বিশেষজ্ঞ ডা. হুম্যান পোর। এরপর মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের ১৯ জন করোনা রোগীর রিপোর্টের পাশাপাশি চীনের হুবেই প্রদেশসহ অন্যান্য অঞ্চলের করোনা আক্রান্তদের রিপোর্ট নিয়ে আলোচনায় বসেন। এসময় তারা অন্যান্য অঞ্চলের রোগীদের ক্ষেত্রেও একইরকম বৈশিষ্ট্য দেখতে পান।

ফিলাডেলফিয়ার থমাস জেফারসন ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের চিকিৎসক পাস্কাল জ্যাব্বারও করোনা আক্রান্তদের মধ্যে স্ট্রোকের প্রবণতার কথা জানান। তিনি বলেন, ‘আমি এর আগে কখনো কোনো ভাইরাসের আক্রমণে এ রকম কিছু হতে দেখিনি।’

 

টাইমস/জিএস

Share this news on: