বিশ্বজুড়ে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। প্রতিদিন মৃত্যু মিছিলে যোগ হচ্ছে হাজার হাজার করোনায় আক্রান্ত রোগী। রাশ টানা যাচ্ছে না এ মহামারির। প্রাণঘাতী এই ভাইরাসের ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার নিয়ে বিশ্বজুড়ে চলছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ঘুম নেই গবেষকদের চোখেও।
এবার ফরাসি বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে পারে নিকোটিন। তারা বলছেন, সাধারণ মানুষের তুলনায় ধূমপায়ীরা কোভিড-১৯ তে কম আক্রান্ত হচ্ছে। এরপরই করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি এবং আক্রান্তদের চিকিৎসা করতে গিয়ে সংক্রমিত স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর নিকোটিনের পরীক্ষা চালাতে যাচ্ছেন গবেষকরা। খবর এএফপি
ফরাসি বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোভিড সংক্রমণ রুখতে পারে নিকোটিন। এটা তাদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। প্যারিসের এক নামি হাসপাতালে ৩৪৩ জন কোভিড পজিটিভ রোগীর ওপর সমীক্ষা চালিয়েছেন গবেষকরা। তারা বলেছেন, ওই রোগীদের মধ্যে ১৩৯ জনের শরীরে মৃদু সংক্রমণ ছিল।
দেখা গেছে, রোগীদের মধ্যে সংক্রমণ কম বা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে, এমন সবাই ধূমপানে আসক্ত। বাকিরা তেমনভাবে ধূমপান করেন না।
ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী পাস্তুর ইন্সটিটিউটের নিওরোবায়োলজিস্ট জিন-পিয়েরে চ্যাংসাজ বলেছেন, নিকোটিন ভাইরাস প্রোটিনকে মানুষের দেহকোষের ভেতরে ঢুকতে দেয় না। দেহকোষের যে সারফেস প্রোটিন বা বাহক প্রোটিনের সঙ্গে জোট বেঁধে ভাইরাস কোষের মধ্যে ঢোকে, সেই জোট বাঁধার প্রক্রিয়াকে আটকে দেয় নিকোটিন।
ফ্রান্সের সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্যারিসের নানা হাসপাতালে ভর্তি ১১ হাজার রোগীর মধ্যে মাত্র ৮.৫ ভাগ ধূমপায়ী। গবেষক জাহির আমোরা বলেছেন, কোভিড সংক্রমণে রোগীদের শরীরে অধিক সাইটোকাইন ক্ষরণ অর্থাৎ ‘সাইটোকাইন ঝড়’-কে নিকোটিন থামাতে পারবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিনে চীনের বিজ্ঞানীদের একটি গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশিত হয় মার্চ মাসে। সেখানে বিজ্ঞানীরা দাবি করেন, ১০০০ জন করোনা রোগীর মধ্যে মাত্র ১২.৫ ভাগ ধূমপায়ী। যাদের শরীরে নিকোটিন রয়েছে, তারা অনেকটাই সংক্রমণ ঠেকাতে পেরেছেন।
গবেষকরা বলেছেন, নিকোটিন-প্যাচ দিয়ে করোনা রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ওপর ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হয়েছে। এই ট্রায়ালের রিপোর্ট এলেই বোঝা যাবে নিকোটিন সংক্রমণ আটকাতে কতটা কার্যকরী।
তবে, গবেষকরা সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য মানুষকে ধূমপান করতে উৎসাহ দিচ্ছেন না; তারা বলছেন, নিকোটিনের অনেক খারাপ দিকও আছে। অতিরিক্ত ধূমপানে শরীরের ক্ষতি হয়, নষ্ট হয়ে যায় ফুসফুস, যা পরিণামে মৃত্যু ঘটায়।
টাইমস/জিএস