সম্প্রতি কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের উপর পরিচালিত এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে, এই রোগটির চিকিৎসায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন বিশেষ কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।
যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হেলথ এবং ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার অর্থায়নে পরিচালিত এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে আসে। গবেষণাপত্রটি মেডআরএক্সফোর নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, জার্নালটি প্রাথমিক গবেষণাপত্র প্রকাশের জন্য পরিচিত। তবে গবেষণাপত্রটি এখনো যাচাই-বাছাই করা হয়নি।
গবেষণার উদ্দেশ্যে ৩৬৮ জন রোগীর উপর সমীক্ষা চালানো হয়। এতে দেখা যায়, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন গ্রহণ করা ৯৭ জন রোগীর মধ্যে মৃত্যুর হার ২৭.৮%। অন্যদিকে, এই ওষুধটি গ্রহণ না করা ১৫৮ জন রোগীর মধ্যে মৃত্যু হার ১১.৪%।
গবেষকরা হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন অ্যান্টিবায়োটিকের যৌথ প্রয়োগ কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কতটা কার্যকর সে বিষয়েও গবেষণা চালিয়েছেন।
গবেষণাপত্রটির একজন লেখক বলেন- “এই গবেষণায় আমরা এমন কোনো প্রমাণ পাইনি যে, অ্যাজিথ্রোমাইসিনের সঙ্গে বা তার বাইরে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহার করায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস ব্যবহারের ঝুঁকি হ্রাস পেয়েছে।”
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন কর্তৃপক্ষ কোভিড-১৯ প্রতিরোধ বা চিকিৎসার জন্য এখনও পণ্য বা ওষুধকে ছাড়পত্র দেয়নি। তবে অনেক ওষুধ নিয়ে বর্তমানে গবেষণা চলছে।
হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন কয়েক দশক ধরে ম্যালেরিয়া, লুপাস ও রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিসের মতো রোগের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প কোভিড-১৯ রোগের বিরুদ্ধে এই ওষুধটিকে “গেম চেঞ্জার” হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেছেন হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন “অসাধারণ প্রতিশ্রুতি”। তিনি ভারতকে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন রপ্তানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নেয়ার জন্য হুশিয়ারিও উচ্চারণ করেছিলেন।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এ ব্যাপারে সতর্ক করে বলছেন, ট্রাম্প ওষুধটির ব্যাপারে খুব আশাবাদী হতে পারেন। তবে এটি কাজ করে কিনা এবং এটি ব্যবহার নিরাপদ কিনা তা দেখার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
অন্য এক গবেষণায় ফ্রান্সের গবেষকরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ১৮১ জন কোভিড-১৯ রোগীর মেডিকেল রেকর্ড পরীক্ষা করেছেন, যাদেরকে পরিপূরক অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন পড়েছিল। এদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক সংখ্যক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন গ্রহণ করেছিলেন এবং বাকী অর্ধেক তা পায়নি।
এতে দেখা গেছে, দুটি গ্রুপের মৃত্যুর হারের ক্ষেত্রে বা নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্য নেই।
তবে, তারা আটজন রোগী শনাক্ত করেছেন ওষুধটি ব্যবহারের ফলে যাদের হৃৎস্পন্দন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং তাদেরকে ওষুধটি গ্রহণ থেকে বিরত থাকতে হয়েছিল।
উল্লেখ্য যে, গবেষণা দুটির এখনও পিয়ার-পর্যালোচনা হয়নি বা কোনো মেডিকেল জার্নালে এগুলি প্রকাশিত হয়নি।
তবে, গবেষণাটি প্রকাশিত হওয়ার মধ্য দিয়ে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ও অ্যাজিথ্রোমাইসিন কোভিড-১৯ রোগটির বিরুদ্ধে কার্যকর এমন দাবি নিয়ে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হলো। তথ্যসূত্র: সিএনএন
টাইমস/এনজে/জিএস