সীমান্তে সড়ক নির্মাণ: ভারত নেপালের মধ্যে সংঘাত

সীমান্ত এলাকায় ভারতের সদ্য তৈরি করা একটি পার্বত্য সড়ককে কেন্দ্র করে ভারত ও নেপালের মধ্যে হঠাৎ করেই সংঘাত চরমে পৌঁছেছে।

বিবিসি বাংলা’র এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ভারতের উত্তরাখন্ড, চীনের তিব্বত আর নেপালের সীমানা যেখানে মিশেছে সেখানে হিমালয়ের একটি গিরিপথের নাম লিপুলেখ। ওই গিরিপথের দক্ষিণের ভূখন্ডটি 'কালাপানি' নামে পরিচিত। যে এলাকাটি ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নেপাল তাদের অংশ বলে দাবি করে থাকে।

গত সপ্তাহে লিপুলেখের সঙ্গে সংযোগকারী নতুন একটি ৮০ কিলোমিটার লম্বা পার্বত্য রাস্তার উদ্বোধন করেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তারপরই নেপাল এর তীব্র প্রতিবাদ জানায় ও ওই এলাকাটিকে তাদের বলে দাবি করে।

যদিও ভারত দাবি করছে, নতুন ওই রাস্তাটি সম্পূর্ণভাবে ভারতীয় ভূখন্ডের মধ্যে নির্মিত হয়েছে।

বিষয়টির বিরুদ্ধে নেপালের পার্লামেন্টেও আলোচনা হয়েছে। নেপালি কংগ্রেসের এমপি পুষ্পা ভূষল গৌতম বলেন, ১৮১৬ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও নেপালের মধ্যে স্বাক্ষরিত সাগাউলি চুক্তি অনুসারে ওই এলাকা সম্পূর্ণভাবে নেপালের।

আর এক পার্লামেন্টারিয়ান গগন থাপা হুঁশিয়ারি দেন, নেপালের এক ইঞ্চি জমিও কেউ কেড়ে নিতে পারবে না - আর ভারতের এই দাদাগিরির বিরুদ্ধে নেপালের সিংহভাগ মানুষ গর্জে উঠবে।

তবে নেপাল সদ্ভাবনা পার্টির এমপি সরিতা গিরি আবার প্রশ্ন তোলেন, এই ইস্যুতে ভারতকে ডিপ্লোম্যাটিক নোট পাঠানো হলেও চীনের বিরুদ্ধেও কেন একই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না?

পার্লামেন্টে নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গাওয়ালি জানান, ২০১৫তে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের পরই ওই দুই দেশ লিপুলেখে একটি বাণিজ্যিক পোস্ট খুলতে সম্মত হয় - যা নেপাল কখনওই মেনে নিতে পারেনি।

নেপালের পার্লামেন্টেও ভারতের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের দাবি ওঠার পর সোমবার নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কাঠমান্ডুতে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত বিনয় মোহন কাটরাকে সিংদরবারে তলব করা হয়। এ ব্যাপারে তার হাতে একটি প্রতিবাদসূচক নোটও তুলে দেন।

তবে কালাপানির ওপর ভারতের দাবিরও ঐতিহাসিক ভিত্তি আছে বলে মনে করেন নেপালে নিযুক্ত সাবেক ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দেব মুখার্জি। তবে রাস্তা উদ্বোধনের বিষয়টা অন্যভাবে করা যেতে পারত বলেও তার অভিমত।

দেব মুখার্জি বিবিসিকে বলেন, শুধু মানচিত্রই নয়, ১৮৪০ থেকে ১৮৬০-র দশকেও আমরা ইংরেজ শিকারি, পর্যটক বা অ্যাডভেঞ্চারারদের অসংখ্য বিবরণ পাই, যেখানে তারা লিপু পেরিয়ে ওই এলাকায় যাচ্ছেন। এটাই প্রমাণ করে কালাপানি ভারতের নিয়ন্ত্রণে ছিল, কারণ নেপাল তখন বিদেশিদের ঢুকতেই দিত না।

তিনি জানান, ১৯০৬ সালে আলমোড়ার ডেপুটি কমিশনার সি এ শেরিংয়ের বইয়েও ওই এলাকাটিতে ভারতের শাসন ও নিয়ন্ত্রণের স্পষ্ট প্রমাণ আছে। তারপরও বলব, ভারত যখন নেপালকে কথা দিয়েছে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে, তখন বলা যায় না এটা আমাদেরই এলাকা - তোমাদের এ নিয়ে কিছু বলার হক নেই।

গত বছর জম্মু ও কাশ্মীরের প্রশাসনিক পুনর্গঠনের পর ভারত দেশের যে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে, তাতে কালাপানিকে ভারতের মধ্যে দেখানোর প্রতিবাদ জানিয়েছিল নেপাল।

 

টাইমস/এইচইউ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
তুমি আসবে বলেই আকাশ মেঘলা, বৃষ্টি এখনো হয়নি: পরীমণি May 05, 2024
img
দেশজুড়ে কালবৈশাখী ঝড়ের সতর্কতা জারি May 05, 2024
img
বাংলাদেশকে ১৩৯ রানের লক্ষ্য দিলো জিম্বাবুয়ে May 05, 2024
img
শুক্রবার ক্লাস নেওয়া নিয়ে ফেসবুক পোস্ট ভুলবশত: শিক্ষা মন্ত্রণালয় May 05, 2024
img
একদিনের ব্যবধানে ফের বাড়ল স্বর্ণের দাম May 05, 2024
img
পরিবেশ রক্ষায় ঢাকাসহ সারা দেশে গাছ কাটা বন্ধে হাইকোর্টে রিট May 05, 2024
img
মানবপাচার মামলায় ৪ দিনের রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার May 05, 2024
img
প্রয়োজনে শুক্রবারও ক্লাস নেওয়া হবে: শিক্ষামন্ত্রী May 05, 2024
img
‘জনগণের ভরসাস্থল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে সেনাবাহিনী’ May 05, 2024
img
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরত রাখা দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত : কাদের May 05, 2024