মিশেল ওবামার গল্প

মিশেল ওবামা। ৪৪ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী। তিনিই ছিলেন মার্কিন ইতিহাসের প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান ফার্স্ট লেডি। তিনি একাধারে একজন লেখক, আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী। আমেরিকার বর্তমান সময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বদের একজন মিশেল ওবামা।

তিনি ১৯৬৪ সালের ১৭ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় অঙ্গরাজ্যের শিকাগো শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক করেন। পরে ১৯৮৮ সালে হার্ভার্ড ল’ স্কুল থেকে আইন বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে তিনি একটি প্রাইভেট ল’ ফার্মে কর্মজীবন শুরু করেন। ওখানেই বারাক ওবামার সঙ্গে তার পরিচয়। ১৯৯২ সালে বিয়ে করেন এই দম্পতি। তাদের দুই মেয়ে মালিয়া ও শশা।

১৯৯১ সালে আইন পেশা ছেড়ে শিকাগো শহরে মেয়রের সহকারি হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। পরে শিকাগো শহরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিষয়ক সহাকারি কমিশনার নিযুক্ত হন। ১৯৯৬ সালে স্টুডেন্ট সার্ভিস বিভাগের সহযোগী ডিন হিসেবে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। ২০০২ সালে তিনি ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো হসপিটালের নির্বাহী পরিচালক এবং ২০০৫ সালে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো মেডিকেল সেন্টারের কমিউনিটি অ্যান্ড এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্স বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৬ সালে ‘এসেন্স’ ম্যাগাজিন কর্তৃক নির্বাচিত বিশ্বের সবচেয়ে প্রেরণাময়ী পঁচিশজন নারীদের একজন হিসেবে মনোনীত হন। ২০০৪ সালে বারাক ওবামা ইলিনয় রাজ্যের সিনেটর নির্বাচিত হন। তার নির্বাচনী প্রচারণায় নজরকাড়া বক্তব্য দিয়ে জনসম্মুখে ব্যাপক পরিচিতি পান মিশেল ওবামা। ২০০৮ ও ২০১২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বারাক ওবামার জয়ের পেছনেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

২০০৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৪ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন বারাক ওবামা। সেই সঙ্গে মার্কিন ফার্স্ট লেডির মর্যাদা পান মিশেল ওবামা। ফার্স্ট লেডি হিসেবে ওবামার দুই মেয়াদের শাসনামলে দরিদ্রতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সামাজিক খাতে উন্নয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বিশেষ করে সামরিক পরিবার ও কর্মজীবী নারীদেরকে সহযোগিতা প্রদানে তার ভূমিকা ছিল প্রশংসনীয়।

সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে শিক্ষা ও স্বেচ্ছাসেবী কাজে উৎসাহ দিতে তিনি নিয়মিত বিভিন্ন সরকারি স্কুল পরিদর্শন করেছেন। শিশুদের স্বাস্থ্য ও খেলাধুলার উন্নয়নে তিনি ‘লেট’স মুভ’ নামে কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এছাড়া আমেরিকার ফ্যাশন ডিজাইনারদের কাছেও মিশেল ওবামা একজন রোল মডেল।

স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের ব্যাপারে তিনি ছিলেন খুবই সচেতন। এ বিষয়ে তার অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০১২ সালে তিনি ‘American Grown: The Story of the White House Kitchen Garden and Gardens Across America’ নামে বই লিখেন।

২০১৬ সালে সাবেক মার্কিন ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটনের প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মিশেল ওবামা। ২০১৭ সালের ১৩ জানুয়ারি ফার্স্ট লেডি হিসেবে হোয়াইট হাউসে অত্যন্ত আবেগঘন কন্ঠে তিনি বিদায়ী ভাষণ দেন। তিনি তরুনদের আহবান জানিয়ে বলেন, “তোমরা ভয় পাবে না, লক্ষ্য ঠিক কর, লক্ষ্য অর্জনের প্রতিজ্ঞা কর, সুশিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে নিজেকে সক্ষম করে তোল এবং একটি সমৃদ্ধ আমেরিকা গড়তে এই শিক্ষাকে কাজে লাগাও।"

অবসরের পর থেকে তিনি ওবামা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে নিযুক্ত রয়েছেন। বিশেষ করে নারীদের প্রতি যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বাড়াতে তিনি কাজ করছেন। ২০১৮ সালের নভেম্বরে তিনি তার জীবনী-গ্রন্থ ‘বিকামিং’ প্রকাশ করেন। এই বইয়ে তিনি তার শৈশব থেকে ফার্স্ট লেডি হিসেবে আবির্ভূত হবার গল্প তুলে ধরেছেন। বর্তমানে নেটফ্লিক্স এর জন্য মুভি ও সিরিজ তৈরিতে কাজ করার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ওবামা দম্পতি।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ