কোভিড-১৯ নিয়ে ইউটিউবের অনেক ভিডিও’র তথ্যই বিভ্রান্তিমূলক

ইন্টারনেটে যেকোনো তথ্য কিংবা ভিডিও জনপ্রিয় হওয়ার পেছনে রহস্যময় কোনো না কোনো কারণ থাকতে পারে, কিন্তু সঠিক তথ্য প্রদানের সাথে এর কোনো যোগসূত্র নেই বলে মনে করছেন গবেষকরা।

বিএমজে গ্লোবাল হেলথ কর্তৃক সম্প্রতি প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, সার্স-কোভ-২ নিয়ে আলোচনা করা সর্বাধিক দেখা প্রতি চারটি ইউটিউব ভিডিওর মধ্যে একটিতে বিভ্রান্তিমূলক বা ভুল তথ্য রয়েছে। গবেষকরা মনে করেন, ভুল বা ইচ্ছাকৃত বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে পড়ার ফলে নোভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

তবে আশঙ্কার কথা হলো, নোভেল করোনাভাইরাস সম্পর্কে প্রচুর সঠিক তথ্য ইউটিউবে উপলব্ধ থাকলেও অ-বাস্তব বা বিভ্রান্তিমূলক ভিডিওগুলি অনলাইন দর্শকদের কাছে বিশেষ কারণে আবেদনময়ী বলে মনে হচ্ছে।

উল্লেখ্য যে, গুগলের পরে ইউটিউব ইন্টারনেটে দ্বিতীয় বৃহত্তম সাইট এবং অনেক লোক অভ্যাসবশত বিভিন্ন তথ্যের জন্য ইউটিউবের শরণাপন্ন হন।

গবেষকরা গবেষণার জন্য একটি নির্দিষ্ট তারিখে (২২ শে মার্চ, ২০২০) মনোনিবেশ করেছিলেন। তারা ‌‘করোনাভাইরাস’ এবং ‘কোভিড-১৯’ পদগুলির কীওয়ার্ড অনুসন্ধানের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মে সর্বাধিক দেখা প্রাসঙ্গিক ভিডিওগুলি সনাক্ত করেন।

সাদৃশ্যপূর্ণ ভিডিওগুলি সরানোর পরে, ১৫০ টি ভিডিওর একটি তালিকা পাওয়া যায়। এর মধ্যে গবেষকরা ৬৯টি ভিডিও (৪৬%) বিশ্লেষণের জন্য যোগ্য বলে মনে করেছেন। এই চূড়ান্ত ভিডিওগুলি মোট ২৫৭,৮০৪,১৪৬ বার দেখা হয়েছে।

ভিডিওগুলির মধ্যে সামগ্রিকভাবে ২৭.৫ শতাংশ (১৯) ভিডিওতে মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য রয়েছে। এই ভিডিওগুলি পুরো স্টাডি সেটের মোট ২৪% ভিউ পেয়েছে, অর্থাৎ মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য সমৃদ্ধ ভিডিওগুলি ৬২,০৪২,৬০৯ বার দেখা হয়েছে।

গবেষকরা এসব ভিডিওতে থাকা বিবৃতিগুলির কয়েকটি উদাহরণও সরবরাহ করেছেন। যেমন-

  • করোনাভাইরাস কেবল দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পন্ন ব্যক্তি, ক্যান্সার রোগী এবং বয়স্ক ব্যক্তিদেরই প্রভাবিত করে।
  • ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থাগুলির কাছে এর নিরাময় আছে তবে তারা এটি বিক্রি করবে না, এ কারণে এত লোক মারা যাচ্ছে।
  • শক্তিশালী ভাইরাস স্ট্রেন ইরান ও ইতালিতে রয়েছে।
  • বিশ্ব একটি গোষ্ঠীর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। এই সম্প্রদায়টি সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এরা মোট জনসংখ্যার ১% এবং মানুষকে নিয়ন্ত্রণের জন্য তারা একটি অদৃশ্য শক্তি ব্যবহার করে। এই সম্প্রদায়টি জনসাধারণের মধ্যে ভয় ছড়িয়ে দিতে মূলধারার মিডিয়া ব্যবহার করে। করোনাভাইরাস এই নিয়ন্ত্রণ কৌশলগুলির একটি উদাহরণ। এটি ছোট ব্যবসা ধ্বংস করে অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য করা হয়েছে।

এছাড়াও ভিডিওগুলিতে অনুপযুক্ত পরামর্শ ও বৈষম্যমূলক বা বর্ণবাদী মন্তব্যও রয়েছে। যেমন অনেক ভিডিওতে সার্স কোভ-২ কে “চীনা ভাইরাস” হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে ইতিবাচক দিক হলো দলটি সংগ্রহ করা প্রায় তিন চতুর্থাংশ ভিডিওতে সঠিক ও সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে। সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ভিডিওগুলি হলো বিভিন্ন সরকার, পেশাদার ব্যক্তি এবং শিক্ষামূলক ভিডিও নির্মাতাদের তৈরি। তবে এসব উৎসে থেকে আপলোডকৃত ভিডিও’র সংখ্যা বিশ্লেষণ করা ভিডিওগুলির মোট সংখ্যার মাত্র ১১% এবং সেগুলোর ভিউ মোট ভিউও’র মাত্র ১০%। তথ্যসূত্র: মেডিক্যাল নিউজ টুডে

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: