করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারঘোষিত ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটিতে দেশে প্রায় ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ কর্ম হারিয়েছেন। ফলে মাত্র দুই মাসের ব্যবধানেই দেশের প্রায় ৫ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের জীবনযাত্রার মানে দেখা দিয়েছে ব্যাপক পরিবর্তন।
এছাড়া অঘোষিত লকডাউনের প্রভাবে নতুন করে প্রায় আরও ২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ হতদরিদ্র হয়ে গেছে। তবে দেশের ধনার্ঢ্যদের অবস্থা আগের মতই রয়েছে।
সোমবার ২০২০-২১ অর্থবছরের বিকল্প বাজেট নিয়ে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত।
‘করোনার (কোভিড-১৯) মহাবিপর্যয় থেকে মুক্তি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা’ শিরোনামে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সমিতির সহ-সভাপতি জেড এম সালেহের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্য দেন সাধারণ সম্পাদক জামালউদ্দিন আহমেদ।
এসময় আবুল বারকাত বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা তুলে ধরে তার বক্তব্যে বলেন, করোনাভাইরাসের আগে দেশে কর্মে নিয়োজিত ছিল ৬ কোটি ১০ লাখ মানুষ। এর মধ্যে ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন। তারা এখন বেকার জীবনযাপন করছেন।
এছাড়া করোনাভাইরাসের প্রকোপে ৫ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তন হয়ে গেছে জানিয়ে তিনি বলেন, লকডাউনের আগে দেশে অতি ধনীর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৭০ লাখ। সেই সংখ্যা এখনও আগের মতই আছে। আর দেশের ধনীক শ্রেণির জীবনযাত্রার মানে কোনো প্রভাব পড়েনি।
অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারাকাত আরও বলেন, করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে উচ্চ-মধ্যবিত্তে থাকা ৩ কোটি ৪০ লাখ থেকে ১ কোটি ১৯ লাখ মধ্য-মধ্যবিত্তে নেমে এসেছে। এছাড়া মধ্য-মধ্যবিত্তে থাকা ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের থেকে ১ কোটি ২ লাখ নিম্ন-মধ্যবিত্তে নেমে গেছে।
তিনি বলেন, করোনার প্রভাবে দেশে নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির ৫ কোটি ১০ লাখ মানুষের ১ কোটি ১৯ লাখ এখন দরিদ্রদের কাতারে এসে দাড়িয়েছেন। আর দরিদ্র থাকা ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষের ২ কোটি ৫৫ লাখ এখন হতদরিদ্র হয়ে গেছেন। সব মিলিয়ে লকডাউনের মাত্র ৬৬ দিনে ৫ কোটি ৯৫ লাখ মানুষের শ্রেণি কাঠামো ও জীবনযাত্রার মান ব্যাপক ভাবে পরিবর্তন হয়েছে।
জাদরেল এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, দেশের নীতি-নির্ধারকদের বলতে চাই, দারিদ্র্য বিমোচন নিয়ে অতীতে যেসব কথাবর্তা হয়েছে, সেসব ভুলে যান। বাংলাদেশে ২৬ মার্চের আগের অবস্থা এখন আর নেই। লকডাউনের ৬৬ দিনে দেশের অর্থনৈতিক খাতে মারাত্মক ঘটনা ঘটে গেছে। সামনের দিনগুলোতে তা বাড়বে ছাড়া কমবে না।
আবুল বারাকত বলেন, বাংলাদেশ এখন উচ্চ আয় বৈষ্যমের দেশ এবং বিপজ্জনক আয় বৈষ্যমের দেশে পরিণত হয়েছে। এই আয় বৈষ্যম ও সম্পদের বৈষ্যম নিরসনে যত পথ পদ্ধতি আছে তার সবগুলো ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে। তা না হলে অর্থনৈতিক সংকট প্রকট হবে।
টাইমস/এসএন