এবার বিহারে করোনা দেবীর আবির্ভাব

করোনা মহামারীর ফলে বিশ্বজুড়ের ইতিমধ্যে ৭২ লাখেরও বেশি লোক আক্রান্ত হয়েছেন এবং চার লাখেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন। ফলে ‍মৃত্যু ভয়ের পাশাপাশি দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়ছে নানা গুজব, ভ্রান্ত ধারণা কিংবা অন্ধবিশ্বাস। এবার সাধারণ মানুষের অন্ধবিশ্বাসের সুযোগে ভারতের বিহার রাজ্যে আবির্ভাব ঘটেছে এক করোনা দেবীর। উল্লেখ্য আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও আক্রান্তের সংখ্যা ২,৮৭,১৫৫ ছাড়িয়ে গেছে, মৃত্যু বরণ করেছেন আট হাজারেরও বেশি মানুষ।

বিশ্বব্যাপী এই মহামারীর মধ্যে বিহারের গ্রামাঞ্চলের নারীদের কাছে দেবী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন জনৈক করোনা দেবী। সহজ সরল গ্রাম্য এইসব নারীরা বিশ্বাস করেন যে, এই দেবীই তাদের করোনার সংক্রমণ থেকে মুক্তি দেবে।

বিহার রাজ্যের নালন্দা, গোপালগঞ্জ, সরণ, বৈশালী, মুজাফফরপুরসহ বিহারের অনেক জেলায় হেল কয়েকদিন ধরে গ্রামের নারীরা আশেপাশের জলাশয়ে ভিড় করছেন এবং ‘করোনার দেবী’র উপাসনা করছেন। অনুষ্ঠানগুলির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে ভাইরালও হয়েছে, স্থান করে নিয়েছে আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও। মজার ব্যাপার হলো- নারীদেরকে করোনা দেবীর উপাসনার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতেও দেখা যায়।

করোনা দেবী উপাসনার রীতিও অভূতপূর্ব। এই উদ্দেশ্যে নারীরা নদী, পুকুর বা জলাশয়ের ঘাটে সাতটি গর্ত খুঁড়েন এবং লবঙ্গ, এলাচ, ফুল, সাতটি লাড়ুসহ সেসব গর্তের মধ্যে গুড়ের সিরাপ ঢেলে দেন। তারপর শুরু হয় ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে করোনা দেবীর কাছে প্রার্থনা।

মুজাফফরপুরের ব্রহ্মপুরায় সর্বেশ্বরনাথ মন্দিরে বেশ কিছুদিন ধরে নারীরা এই আচার অনুষ্ঠান পালন করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে করোনা দেবীর উপাসক একজন নারী জানান, তিনি ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও দেখার পরে “উপলব্ধি” করেছেন যে করোনাকে তাড়িয়ে দিতে হলে লাড়ু, ফুল ও তিলের বীজ উৎসর্গ করা উচিৎ। আবার অনেকের দাবি, স্বয়ং করোনা দেবী স্বপ্নে এসে তাদের পূজার আদেশ দিয়েছেন।

বক্সার জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকে নারীরা ‘করোনার দেবী’ উপাসনা করেন। এখানেও নিয়ম প্রায় একই রকম- নারীরা গঙ্গায় ডুব দিয়ে নদীর তীরে এসে প্রার্থনা করেন, তারপর সেখানে আগেই তৈরি করে রাখা সাতটি গর্তে ধূপ জ্বালানোর পরে গুড় ও তিলের সঙ্গে লাড়ু ও ফুল মাটিতে পুঁতে দেন। আবার অনেক অঞ্চলে, করোনা দেবীকে পোহা দিয়েও পূজাও করা হয়।

তবে মোজাফফরপুরের পণ্ডিত বিনয় পাঠকের মতো বিহারের যুক্তিবাদীরা এই আচারটিকে কুসংস্কার বলে অভিহিত করছেন এবং সংক্রমণ রোধে চিকিৎসা ব্যবস্থার উপর জোর দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন।

বাবা সাহেব ভীমরাও আম্বেদকর বিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক বি.এন. সিং গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে বলেন, “যখনই আমাদের উপর কোনো বিপদ আসে, আমরা সবাই ঈশ্বরের আশ্রয় গ্রহণ করি। অনেক সময় এই বিশ্বাস কুসংস্কারেও রূপ নেয়।”

গোপালগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. ত্রিভুবন নারায়ণ সিংহও একে সম্পূর্ণ কুসংস্কার বলে অভিহিত করেছেন। তার মতে “করোনা একটি মহামারী এবং এর জন্য চিকিৎসা করা জরুরি।”

উল্লেখ্য এর আগেও ভারতে করোনাভাইরাস দূর করতে গোমূত্র পান করাসহ নানা রকম অদ্ভুত সব কু-সংস্কার জনপ্রিয় হয়েছিল। তথ্যসূত্র: দ্যা গালফ নিউজ।

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: