ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে, বাকীরা কলেজে : অটোরিকশা চালান শিক্ষক বাবা!

মো. আবুল কালাম আজাদ। এক ছেলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন। দুই মেয়ে আনন্দমোহন কলেজ থেকে মাস্টার্স শেষ করেছেন। অপর দুই ছেলে একই কলেজে পড়াশোনা করেন। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করলেও তার প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। তাই এই ৬৫ বছরের জীবনে অভাব তার পিছু ছাড়েনি। লকডাউনের কারণে তার সংসারে অভাব চেপে বসেছে। কিছুদিন আগেই তিনি অবসর নিয়েছেন। এরপরই তার প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। এখানেও তিনি বঞ্চিত হয়েছেন। অভাবের তাড়নায় তিনি এখন বাধ্য হয়ে অটোরিকশা চালাচ্ছেন। এমন করুণ দৃশ্য চোখে পড়েছে ময়মনসিংহে।

আবুল কালাম আজাদ জানালেন, যখন অবসরে যান তখন স্কুল কর্তৃপক্ষ এককালীন দুই লাখ ৮৭ হাজার দিয়েছিল। সেই টাকা খরচ হয়ে গেছে। জমানো আর কিছুই নেই। ১৯৮১ সালে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে জামালপুরের সরিষাবাড়ির জুলিকুড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগ দেন তিনি। ২৯ বছর শিক্ষকতা করে অবসর নিয়েছেন ২০১০ সালে।

অবসর নেওয়ার পর পাঁচ ছেলে-মেয়ের পড়ালেখার সুবিধার কথা চিন্তা করে ময়মনসিংহ শহরে চলে আসেন তিনি। বাগমারা এলাকায় ভাড়া বাসায় সপরিবারে উঠেন। সরকারি আনন্দ মোহন কলেজ থেকে দুই মেয়ে স্নাতকোত্তর করে পরিবারের সঙ্গেই থাকেন। এক ছেলে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। অন্য দু’জন আনন্দ মোহন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র।

পরিবার চালাতে গৃহশিক্ষকতা করতেন আবুল কালাম আজাদ, আয় হতো প্রায় ১০ হাজার টাকা। ছেলেরাও খরচ চালাতে টিউশনি করতেন। ফলে সংসার চলে যেত। কিন্তু করোনার আঘাতে ওলট-পালট হয়ে গেছে সব। সবার আয়ের পথ বন্ধ। ঈদের পরে তিন ছেলেসহ চলে আসেন ঢাকায়, কিন্তু ভাগ্য বদলের চেষ্টায় সফল হননি। পরিস্থিতি এতটাই খারাপ হয়ে পড়ে, তিনি বাধ্য হন ৬৫ বছর বয়সে অটোরিকশা চালাতে।

আবুল কালাম আজাদ বলেন, জমার টাকা দেওয়ার পর দিনে ২০০ টাকার মতো থাকে। তবে বয়সের কারণে প্রতিদিন অটো চালাতে পারি না। তিনি সন্তানদের পড়াশোনা শেষ করাতে চান। এজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।

টাইমস/জেকে

Share this news on: