যেসব খাবার মেজাজ নষ্ট হবার জন্য দায়ী

সুস্বাদু খাবার আমাদের মেজাজ ফুরফুরে করে দেয়। তাই অনেক সময় বলা হয়ে থাকে যে, মন ভালো না থাকলে আপনি পছন্দের খাবার খেতে পারেন। মেজাজ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অবশ্য কোন পরিবেশে খাচ্ছেন সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। আবার এমন কিছু খাবার আছে, যা আপনার মেজাজ নষ্ট করতেও ভূমিকা রাখে।

এ বিষয়ে যুক্তরাজ্যের শীর্ষ স্থানীয় ডায়েটেশিয়ান টাই ইবিটয় বলেন, “নিয়মিত উচ্চ মাত্রার ফ্যাট ও চিনি যুক্ত খাবার গ্রহণ করলে তা আমাদের মেজাজের উপর বাজে প্রভাব ফেলতে পারে। আবার স্বল্পমাত্রায় গ্রহণ করলে এর ফলাফল উল্টো। যেমন অনেক সময় দেখা যাচ্ছে, একটি কুকি (চিনি যুক্ত খাবার) গ্রহণ করলে অনেকে বেশ ভালো অনুভব করেন।” অর্থাৎ কিছু খাবার রয়েছে যেগুলি অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণ করলে তা মেজাজের উপর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করে, কিন্তু স্বল্পমাত্রায় গ্রহণ করলে তার প্রভাব ইতিবাচক হওয়া সম্ভব।

আসুন মেজাজ নষ্ট হবার জন্য দায়ী এমন কিছু খাবার ও পানীয় সম্পর্কে জেনে নিই

অ্যালকোহল
মেজাজ নষ্টকারী অন্যতম একটি পানীয় অ্যালকোহল। ইবিটয়ের মতে, অল্প পরিমাণে অ্যালকোহল গ্রহণ করলে তা মন ও মেজাজ উন্নত করতে পারে। তবে নিয়মিত বা অত্যধিক পরিমাণে অ্যালকোহল সেবন মেজাজ খারাপের জন্য দায়ী। তাছাড়া এটি হ্যাঙ্গওভার হওয়ার জন্য দায়ী।

ক্যাফেইন
ইবিয়টের মতে, মন-মেজাজ ভালো রাখতে ক্যাফিনেটেড চা ও কফির মতো উত্তেজক পানীয় গ্রহণের পরিমাণ সীমিত করা উচিৎ। ক্যাফিনেটেড ড্রিংকসের বদলে গ্রিন-টি গ্রহণ করা যেতে পারে।

মেডিকেল ডেইলি অনুসারে, কফির মতো ক্যাফিনেটেড পানীয়গুলি মস্তিষ্কে ডোপামিন এবং সেরোটোনিন নিঃসরণ বৃদ্ধি করে। তবে অল্প পরিমাণ চা-কফি মন মেজাজ ফুরফুরে করে তুলতেও ভূমিকা রাখে। তবে খুব বেশি পরিমাণে এবং প্রায়শই এগুলি গ্রহণ করলে বিরক্তি, উত্তেজনা ও উদ্বেগ দেখা দিতে পারে।

সোডা
কোমল পানীয় বা সোডায় সাধারণত পরিশোধিত চিনি থাকে, যা শরীরে দ্রুত শোষিত হয়। ফলে সাময়িক সময়ের জন্য অ্যানার্জি বৃদ্ধি পায় এবং পরবর্তীতে তীব্র আলস্য দেখা দেয়। এমনকি ডায়েট সোডাতে যেসব কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহৃত হয়, সেগুলিও এই সমস্যা থেকে মুক্ত নয়। ফলে সোডা বা অন্য চিনি যুক্ত পানীয় অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে আলস্য ও মেজাজ খারাপ হওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

২০১৪ সালের এক সমীক্ষায় প্রবীণদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টির সাথে মিষ্টি জাতীয় পানীয়ও খাবারের একটি সম্পর্ক পাওয়া গেছে।

বেকড খাবার
স্মিথ বলেছিলেন, কুকি বা কেকের মতো খাবারগুলি চিনি জাতীয় বা মেজাজের অবনতি ঘটাতে সক্ষম এমন উপাদানে পরিপূর্ণ। যদি আপনার বেকড সামগ্রী অতিরিক্ত গ্রহণের অভ্যাস থাকে এবং প্রায়শই মেজাজ খারাপ অনুভব করেন তাহলে এসব খাবার গ্রহণ হ্রাস করলে ভালো ফলাফল পেতে পারেন।

যুক্তরাজ্যের আরেকজন নিউট্রোশনিষ্ট ক্লাউদিয়া স্মিথ বলেন, “কেক, বিস্কুট, মিষ্টিজাতীয় পানীয় বা মিষ্টি খাওয়া কমিয়ে দিয়ে আপনার চিনি গ্রহণের পরিমাণ হ্রাস করার চেষ্টা করুন। এতে করে মন মেজাজ ভালো থাকবে।”

প্রক্রিয়াজাত খাবার
প্রক্রিয়াজাত খাবার বলতে এমন সব খাবার বোঝায়, যা খাবারের জন্য প্রস্তুত অবস্থায় সংরক্ষণ ও বাজারজাত করা হয়। চিপস, পিৎজা, বার্গার প্রভৃতি এই জাতীয় খাবারের অন্তর্ভুক্ত। এসব প্রক্রিয়াজাত খাবার মেজাজ খারাপ কারার জন্য দায়ী হিসেবে মনে করা হয়। কারণ, এসব খাবারে উচ্চ পরিমাণে পরিশোধিত চিনি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং প্রিজারভেটিভ থাকে। এই উপাদানগুলি আমাদের শরীরে ক্লান্তি সৃষ্টি করে এবং অনুপ্রেরণার হ্রাস ঘটায়।

এর অর্থ এই নয় যে, আপনি কখনই এসব খাবার খাবেন না। স্মিথের মতে, প্রতিদিনের খাবার হিসেবে স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। তবে মাঝে মধ্যে এখানে সেখানে এসব মুখরোচক খাবার গ্রহণ করা যেতেই পারে। তথ্যসূত্র: হাফপোস্ট

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: