২০২০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হতে চীনের সহায়তা চেয়েছেন ট্রাম্প

ডোনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে নানা জনের নানা রকম মন্তব্যের শেষ নেই, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর থেকেই উদ্ভট সব কারণে আলোচিত-সমালোচিত হয়ে আসছেন তিনি।

তবে, তার সম্পর্কে তারই সাবেক ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজর জন বোল্টনের করা মন্তব্য স্বাভাবিক ভাবেই বেশি মনোযোগের দাবি রাখে। ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে ১৭ মাস কাজ করার অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে একটি বই লিখেছেন বোল্টন। দীর্ঘ জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আগামী ২৩শে জুন প্রকাশিত হতে চলেছে জন বোল্টনের ‘দ্যা রুম হোয়্যার ইট হ্যাপেনড’ বইটি।

ধারণা করা হচ্ছিল ট্রাম্প প্রশাসন যেনতেন প্রকারে এই বইটির প্রকাশ বন্ধ করে দিতে পারে। তবে ইতিমধ্যে বইটির কপি পৌঁছে গেছে আমেরিকার শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যমগুলির হাতে। বইটির চুম্বক কিছু অংশ ইতিমধ্যে ইন্টারনেট দুনিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

আসুন ট্রাম্প সম্পর্কে তার সাবেক এই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার করা এমন কিছু মন্তব্য জেনে নিই

পুন:নির্বাচিত হতে চীনের সাহায্য চেয়েছেন ট্রাম্প
বইটিতে মি. বোল্টন গত বছর জাপানে জি-২০ বৈঠকে রাষ্ট্রপতি ট্রাম্প এবং তার চীনা সমকক্ষ শি জিনপিংয়ের মধ্যে বৈঠকের বর্ণনা দিয়েছেন। মি. বোল্টন মন্তব্য করেন, কথোপকথন হঠাৎ করেই ট্রাম্প আসন্ন মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের দিকে (২০২০ সালে) ঘুরিয়ে নেন এবং চীনের অর্থনৈতিক সক্ষমতার দিকে ইঙ্গিত করে শি’র কাছে দ্বিতীয়বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হতে সহায়তার জন্য অনুরোধ করেন মি. ট্রাম্প।

চীনের ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি করা সঠিক ছিল বলেও মন্তব্য করেছেন ট্রাম্প
চীনের উইঘুর এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের উপর চলমান নির্যাতন বিশ্বব্যাপী সমালোচনার শিকার হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে প্রায় দশ মিলিয়ন মানুষকে চীন সরকার জিনজিয়াং অঞ্চলের শিবিরগুলিতে বন্দী রেখেছিল। সম্প্রতি ট্রাম্প এই গণ-কারাগারের সাথে জড়িত চীনা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার অনুমতি দিয়েছেন।

তবে মি. বোল্টন দাবি করেছেন, জিংপিংয়ের সাথে আলাপকালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট চীনের এই পদক্ষেপ সমর্থন করেছিলেন। মি. বোল্টন লিখেছেন, “ট্রাম্প বলেছিলেন যে শি’র ক্যাম্প তৈরির প্রক্রিয়া এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত, যা ট্রাম্পের কাছে তখন সঠিক পদক্ষেপ বলে মনে হয়েছিল।”

ট্রাম্প ‘স্বৈরাচারীদের ব্যক্তিগত সহায়তা’ করেছিলেন
শুধু চীনের প্রেসিডেন্ট নয়, বরং অন্যান্য স্বৈরাচারীদের প্রতি আলাদাই দরদ রয়েছে ট্রাম্পের, এমনটাই দাবি করেছেন বোল্টন। মি. বোল্টন লিখেছেন, ট্রাম্প বিভিন্ন অপরাধমূলক তদন্তে হস্তক্ষেপ করতে রাজি ছিলেন, “বাস্তবে স্বৈরশাসকদেরকে ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করতে তিনি পছন্দ করেন”।

বইটিতে আরও দাবি করা হয়, ২০১৮ সালে ইরানের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার সম্ভাব্য লঙ্ঘন বিষয়ে তুরস্কের একটি সংস্থার উপর মার্কিন তদন্ত চলাকালে মিস্টার ট্রাম্প তুরস্কের রাষ্ট্রপতি রিসেপ তায়িপ এরদোয়ানকে সহায়তা করার প্রস্তাব করেছিলেন।

ডেমোক্র্যাটদের অভিশংসনের প্রচেষ্টা দিয়ে আরও এগিয়ে যাওয়া উচিত ছিল
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউক্রেনের সামরিক সহায়তা আটকাতে চেয়েছিলেন, বইটিতে ডেমোক্রেটদের এই অভিযোগ সমর্থন করেছেন মি. বোল্টন। তিনি বইটিতে ডেমোক্র্যাটদের সমালোচনা করে বলেছেন যে, তারা কেবল ইউক্রেনকে কেন্দ্র করেই অভিশংসনের চেষ্টা করেছে। তার যুক্তি ডেমোক্র্যাটরা তদন্তকে আরও প্রশস্ত করে দিলে আরও বেশি আমেরিকানদের বোঝানো যেত যে, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পকে পদ থেকে অপসারণের মতো যথেষ্ট “অপরাধ ও অপকর্ম” তিনি করেছেন।

ট্রাম্প দুইবারেরও বেশি সময় রাষ্ট্রপতি থাকতে চান
মি. বোল্টন দাবি করেন, ট্রাম্প চীনের নেতার সাথে আলাপকালে দুই মেয়াদের বেশি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনের আশা প্রকাশ করেছেন। ট্রাম্প এ সময় দাবি করেন, তিনি যাতে করে দু’বারের বেশি মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করতে পারেন সে উদ্দেশ্যে প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক পরিবর্তন আনতে আমেরিকান জনগণ আগ্রহী।

ট্রাম্প জানতেন না যুক্তরাজ্য একটি পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র
১৯৫২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পরমাণু ক্ষমতা অর্জনের পরে তৃতীয় দেশ হিসেবে ব্রিটেন পরমাণু ক্ষমতা অর্জন করে। তবে যুক্তরাজ্য পারমাণবিক অস্ত্র সজ্জিত রাষ্ট্রগুলির একটি তা ট্রাম্প জানতেন না।

তৎকালীন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সাথে ২০১৩ সালের বৈঠক চলাকালীন একজন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। ট্রাম্প তখন অবাক হয়ে মন্তব্য করেছিলেন “ওহ, আপনিও তাহলে পারমাণবিক শক্তিধর?”

ফিনল্যান্ড রাশিয়ার অংশ
মি. বোল্টন বলেছেন, রাষ্ট্রপতি ট্রাম্পের জ্ঞানের অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। ফিনিশ রাজধানী হেলসিঙ্কিতে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে বৈঠকের আগে ট্রাম্প জানতে চেয়েছিলেন ফিনল্যান্ড রাশিয়ার কোনো স্যাটেলাইট রাষ্ট্র কিনা।

মি. বোল্টনের মতে, গোয়েন্দা ব্রিফিংগুলিও ট্রাম্পের ক্ষেত্রে কার্যকর ছিল না, কারণ বেশিরভাগ সময় তিনি নিজেই ব্রিফারদের চেয়ে লম্বা বক্তব্য রাখতেন। অন্যদিকে, ট্রাম্পের এইসব বক্তব্যের সাথে আলোচিত বিষয়ের কোনো সম্পর্কই থাকত না।

এছাড়াও ট্রাম্প ন্যাটো ভেঙ্গে দিতে অনেক বেশি সিরিয়াস ছিলেন এবং ভেনিজুয়েলা দখল করতে আগ্রহী ছিলেন বলেও উল্লেখ করা হয় বইটিতে। সব মিলিয়ে বইটি প্রকাশিত হলে ট্রাম্পের অন্দরের অনেক খবর জনসম্মুখে প্রকাশিত হবে বলে ধারণা করছেন রাজনীতি সচেতন মহল। তথ্যসূত্র: বিবিসি.কম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
তানজিদের অভিষেক ফিফটিতে টাইগারদের বড় জয় May 03, 2024
img
শনিবার থেকে ট্রেনে বাড়তি ভাড়া, কোন রুটে কত May 03, 2024
img
আরআরআর'র সভাপতি আনোয়ার হোসেন সম্পাদক তাওহীদুল ইসলাম May 03, 2024
img
মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অভিষেক হলো আসিফের May 03, 2024
img
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনা : জয়দেবপুর স্টেশন মাস্টারসহ তিনজন সাময়িক বরখাস্ত May 03, 2024
img
নির্বাচনী আচরণবিধি না মানলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না: ইসি রাশেদা May 03, 2024
img
টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ, তানজিদের অভিষেক May 03, 2024
img
অতি গরমের প্রভাব বাজারে, বেড়েছে মুরগি-সবজির দাম May 03, 2024
img
সরকারকে যারা চাপে রাখতে চেয়েছিল তারা নিজেরাই চাপে আছে: ওবায়দুল কাদের May 03, 2024
img
শনিবার বন্ধ থাকবে ২৫ জেলার স্কুল-মাদরাসা May 03, 2024