মিশরীয় ভাস্কর্যের নাক ভাঙ্গা থাকে কেন?

বিশ্বের প্রাচীন সভ্যতা সমূহের একটি হলো মিশরীয় সভ্যতা। মিশরীয় পিরামিড, মমি কিংবা ফারাও সাম্রাজ্যের কথা কমবেশি আমরা সবাই জানি। তৎকালীন জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ভাস্কর্য শিল্পে অনেক এগিয়ে ছিল এই সভ্যতাটি। আপনিও নিশ্চয়ই মিশরীয় ভাস্কর্যের সাথে পরিচিত, অন্তত একটি ছবিতে হলেও দেখেছেন। মিশরীয় ভাস্কর্যের ছবি দেখে আপনার মনে কি কখনো প্রশ্ন জেগেছে যে, প্রায়শই এই ভাস্কর্যগুলির নাক ভাঙ্গা থাকে কেন?

অ্যাডওয়ার্ড বেইলবার্গ ব্রুকলিন মিউজিয়ামের মিশরীয় আর্ট গ্যালারীর একজন কিউরেটর। ভিজিটরদের কাছ থেকে প্রায়শই তাকে এই প্রশ্নটির সম্মুখীন হতে হয় যে, ভাস্কর্যগুলির নাক ভাঙ্গা কেন?

বেইলবার্গের মতে নানা কারণে একটি ভাস্কর্য ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। অনেক সময় প্রাকৃতিক কারণে ভাস্কর্যের কোন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অনেক সময় লুণ্ঠনকারী বা ভিনদেশী কোনো বিজেতা আক্রোশের বসে বিজিত সভ্যতার বা রাজ্যের শিল্প বা ভাস্কর্য ধ্বংস হয়ে থাকে। তবে মিশরীয় ভাস্কর্যগুলির ক্ষেত্রে নাক ভাঙ্গা থাকার কারণ একটু ভিন্ন।

তার গবেষণা বলছে, মিশরীয় ভাস্কর্যের নাক ভাঙ্গার এই ঘটনা উদ্দেশ্যমূলক এবং মিশরীয়রাই সেটি করেছেন। এর পেছনে জড়িত ছিল মিশরীয়দের একটি বিশেষ আধ্যাত্মবাদী বিশ্বাস। প্রাচীন মিশরীয়রা মনে করতেন কোনো ভাস্কর্য বা মূর্তিতে দেবতা বা মৃত ব্যক্তি ভর করেন এবং ভাস্কর্যটি সক্রিয় হয়ে ওঠে। ভাস্কর্য বা মূর্তির সক্রিয় হয়ে ওঠা ঠেকাতেই এই অভিনব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছিল।

মিশরীয়দের বিশ্বাস ছিল ভাস্কর্যের নাক ভেঙ্গে দিলে অঙ্গহানির ফলে সেটি সক্রিয় হয়ে উঠতে পারবে না। কারণ, তাতে ভর করা আত্মা বা দেব-দেবী নাকহীন অবস্থায় ঠিকমত শ্বাসকার্য সম্পাদন করতে পারবে না। এই বিশ্বাস থেকেই তারা তৈরি ভাস্কর্যের নাক ভেঙ্গে দিতে শুরু করে।

যখন বিভিন্ন কারণে কোনো দেব-দেবী বা মৃত ব্যক্তির দ্বারা আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা দেখা দিত, তখন তারা সেই দেব-দেবী বা মৃত ব্যক্তিটির মূর্তির নাক ভেঙ্গে দিতেন বা ছবির নাক বিকৃত করতেন।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যখন কোনো ধনী ব্যক্তি মারা যেতেন তার কবরে অনেক মূল্যবান সামগ্রী উৎসর্গ করা হতো, আবার তার মূর্তিও স্থাপন করা হতো। কোনো চোর যখন উৎসর্গীকৃত মূল্যবান সামগ্রী চুরি করতেন তখন তিনি মৃত ব্যক্তির মূর্তিটির নাক ভেঙ্গে দিতেন, যাতে করে তার আত্মা প্রতিশোধ নিতে না পারে।

এছাড়াও একটি সাংস্কৃতিক বিশ্বাস ছিল যে, কারো ছবি বিকৃত করা মানে ওই ব্যক্তিটির সম্মানহানি ঘটানো। তাই সম্মানহানি করার উদ্দেশ্যেও অনেক সময় ভাস্কর্যের নাক ভেঙ্গে দেয়া হতো। প্রায়শই ফারাও সম্রাটরা তাদের মূর্তি ও ছবি বিকৃতিকারীদের বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারী করতেন বলে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে।

বেইলবার্গের মতে, এই নাক ভাঙ্গার সাথে যারা জড়িত তারাও ভাস্কর্য শিল্পী ছিলেন এবং যথেষ্ট সতর্কতার সাথেই কাজগুলি সম্পন্ন করা হয়েছে। তথ্যসূত্র: সিএনএন

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: