'দেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত'

‘প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এই দিনে আমাদের একটাই শিক্ষা, বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলব।’ মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবর্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় সংসদে দেয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিন বেলা ১১টায় স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের এ বৈঠক শুরু হয়।

সংসদে প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী একটি সমস্যা। মানুষ যাতে এই ভাইরাসে আক্রান্ত না হয়, সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রেখেই মুজিববর্ষ উৎযাপনের সকল কর্মসূচি স্থগিত করেছি। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আমরা ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছিলাম। এটা নিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমরা তা পালন করতে পারিনি। আজকে আওয়ামী লীগের ৭১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীও আমরা বিশেষভাবে উদযাপন করতে পারলাম না। যদিও এ নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা ছিল। করোনা পরিস্থিতির কারণে সবকিছুই এখন সীমিত আকারে করতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। আমাদের কাছে আগে জীবন গুরুত্বপূর্ণ, তারপর অন্যকিছু।

জনগণের কল্যাণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরনো ঢাকার রোজ গার্ডেনে ঐতিহ্যবাহী এই রাজনৈতিক দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এবার মুজিববর্ষে আওয়ামী লীগের একাত্তরতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক পরিকল্পনা ছিল। করোনা মহামারির কারণে সব পরিকল্পনা সীমিত করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কঠিন সময়েও আওয়ামী লীগ মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগ-কৃষকলীগ-স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আমাদের নেতাকর্মীরা প্রতিটি মানুষের ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছানো, লাশ দাফন থেকে শুরু করে সমস্ত কাজে মানুষের পাশে আছে। ঘূর্ণিঝড়ের সময়ও তারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। এখন বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণের কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে দলীয় নেতাকর্মীরা। এইভাবে আওয়ামী লীগ মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাবে।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির জনকের নাম এক সময় ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু তা হয়নি। অবশ্য সত্যকে মোছাও যায় না। জাতির পিতা শারীরিকভাবে আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার অস্তিত্ব আজ প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। তার যে স্বপ্ন ছিল, তা আমাদের পূরণ করতে হবে।

আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সংগ্রামের পথে অগণিত নেতাকর্মী জীবন দিয়েছেন। তাদের ত্যাগ-তিতীক্ষায় আমরা এই স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আজকে আমরা একটা স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি। স্বাধীন জাতি হিসেবে মর্যাদা পেয়েছি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, জাতির পিতা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব যখন পেলেন, দেশ গড়ে তুলে যখন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন, সেই সময় কুচক্রীরা তাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। এভাবেই থেমে যায় মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তি বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, স্বাধীনতার পর আইয়ুব খানের সকল রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে দিয়ে বঙ্গবন্ধু জনগণের ক্ষমতায়ন ও ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রযাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু তা সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। তার অসমাপ্ত কাজ শেষ করাই এখন আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য।

আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৭৫৭ সালে সিরাজউদ্দৌলার পতনের মধ্য দিয়ে বাংলার স্বাধীনতার যে সূর্য অস্তমিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সেই সূর্য পূনরায় উদিত হয় ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের মানুষ অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিল। জাতির পিতা আজীবন সংগ্রাম করেছেন এদেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য।

 

টাইমস/এসএন

Share this news on: