কোভিড-১৯ মহামারীর থেকেও ভয়ানক মহামারী ছড়িয়ে পড়ছে কাজাখস্তানে, চীনা কর্মকর্তাদের এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।
কাজাখস্তানের চীনা দূতাবাস থেকে বৃহস্পতিবার সে দেশে বসবাসরত চৈনিক নাগরিকদের হুশিয়ার করে বলা হয়, অজানা নিউমোনিয়ার ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে মহামারী ছড়িয়ে পড়েছে কাজাখস্তান জুড়ে, এরই মধ্যে মহামারীতে মারা গেছেন প্রায় ১,৭০০ লোক।
বিবৃতিতে আরও দাবি করা হয়, “কাজাখস্তানের স্বাস্থ্য বিভাগ এবং অন্যান্য সংস্থা ভাইরাসটির বিষয়ে তুলনামূলক গবেষণা চালাচ্ছে এবং নিউমোনিয়া ভাইরাসটির প্রকৃত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে এখনও সফল হতে পারেনি।”
চীনা দূতাবাস থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়, জুনের মাঝামাঝি থেকে সারাদেশে (কাজাখস্তানে) অজ্ঞাতশ্রেণীর নিউমোনিয়া ভাইরাসের দ্বারা সংক্রামণের ঘটনা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এমনকি কোনো কোনো এলাকায় প্রতিদিন শত শত নতুন সংক্রমণ ঘটছে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে কাজাখস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনির্দিষ্ট ইটিওলজির ভাইরাল নিউমোনিয়ার উপস্থিতির কথা স্বীকার করেছে। তবে, তাদের মতে এই প্রাদুর্ভাব নতুন নয় কিংবা কর্তৃপক্ষ তা লুকানোর চেষ্টা করেনি।
চীনা দূতাবাসের বিবৃতির প্রতিক্রিয়ায় মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, “এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কাজাখস্তান প্রজাতন্ত্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করছে যে, এর তথ্যের সাথে বাস্তবতার মিল নেই।”
মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “অনির্দিষ্ট” বা অজ্ঞাত এই নিউমোনিয়ার শ্রেণিবিন্যাস নিবদ্ধকরণের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা অনুসরণ করা হয়েছে। আবার অনেক কোভিড-১৯ এর ঘটনা ল্যাবরেটরিতে সঠিকভাবে শনাক্ত না হওয়ায় তা নিউমোনিয়া হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে।
দূতাবাসের তথ্যানুযায়ী কাজাখাস্তানের আটাইরাও, আক্টবে ও শিমকেন্ট অঞ্চলে সংক্রমণ বেশি ঘটেছে, এসব অঞ্চলে একসাথে প্রায় ৫০০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন এবং ৩০ জনেরও বেশি গুরুতর অসুস্থ রোগী রয়েছে।
দূতাবাসের দেয়া তথ্য মতে, এই বছর রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ১,৭৭২ জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে কয়েকজন চীনা নাগরিকও ছিলেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র জুনেই মারা গেছেন ৬২৮ জন। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, “এই রোগটি কোভিড-১৯ এর চেয়েও মারাত্মক।”
কাজাখস্তানের বিশিষ্ট সংবাদ সংস্থা কাজিনফর্মের মতে, সরকারী তথ্যের বরাত দিয়ে রাজধানী নূরসুলতানে নিউমোনিয়া আক্রান্তের সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের জুনে দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
কাজিনফর্ম জানিয়েছে, “প্রতিদিন গড়ে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত প্রায় ২০০ জন লোককে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে। তবে গত কয়েকদিন ধরে এর সংখ্যা ৩০০ জন ছাড়িয়েছে। এছাড়াও কিছু লোক বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা গ্রহণ করছেন।”
চীনা দূতাবাস এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের বাইরে যাওয়া সীমাবদ্ধ রাখতে এবং জনসমাগম হয় এমন স্থান এড়িয়ে চলতে পরামর্শ দিয়েছে। এছাড়াও মাস্ক ব্যবহার, স্থান-আবাস স্থল জীবাণুমুক্ত করা, ঘন ঘন হাত ধোয়া এবং ঘরের অভ্যন্তরীণ জায়গাগুলিতে বায়ু সঞ্চালন নিরাপদ করার মতো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়েছে।
শুক্রবার এই প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে চীনের বিদেশ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র গণমাধ্যমকে বলেন, “আমরা আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছি। চীন এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং দু’দেশের জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য কাজাখস্তানের সাথে একসাথে কাজ করবে।”
অন্যদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা এক বিবৃতিতে কাজাখস্তানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “বৃহস্পতিবার এক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রী অ্যালেক্সই তসোয় দেশব্যাপী নিউমোনিয়া সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি ঘটনার কথা বলেছিলেন। তবে এই ঘটনাগুলির সাথে বিভিন্ন ধরণের ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং ভাইরাল নিউমোনিয়া অন্তর্ভুক্ত ছিল- যার মধ্যে কিছু ‘অনির্দিষ্ট ইটিওলজি’ রয়েছে।”
তসোয় তার ব্রিফিংয়ে বলেন , নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত সমস্ত ঘটনা ২০১৯ সালের একই জুনের তুলনায় এ বছর জুনে ৩০০ শতাংশেরও এরও বেশি বেড়েছে। গত বছর এ সংক্রান্ত ৭,৯৬৪টি সংক্রমণ নিশ্চিত হলেও ২০২০ সালে বেড়ে ৩২,৭২৪এ দাঁড়িয়েছে। এ সম্পর্কিত মৃত্যুর পরিমাণ বেড়েছে ১২৯ শতাংশ। ২০১৯ সালের জুনে এ রোগে মৃতের সংখ্যা ছিল ২৭৪ জন, যা এ বছরের জুন মাসে বৃদ্ধি পেয়ে ৬২৮ এ দাঁড়িয়েছে।
চীনা দূতাবাসের এই হুঁশিয়ারি এমন সময় এলো যখন কাজাখস্তান কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে ক্রমাগত লড়াই করে চলেছে। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশটিতে ৫৩,০১২ জন সংক্রামিত হয়েছেন এবং ২৬৪ জন মারা গেছেন।
এছাড়াও কাজাখস্তানের হাই-প্রোফাইল ফাস্ট প্রেসিডেন্ট এবং দেশটির সিকিউরিটি কাউন্সিলের বর্তমান চেয়ারম্যান নুরসুলান নাজারবায়েভ এর দেহে গত মাসে কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়েছে। তথ্যসূত্র: সিএনএন
টাইমস/এনজে/জিএস