জেনে নিন, প্রাণীদের শ্রবণ শক্তির নানা অজানা তথ্য

মানুষ ও অন্য কোনো প্রাণীর শ্রবণেন্দ্রিয় যে কম্পাংকসীমার শব্দ শুনতে সক্ষম, তাকে শ্রবণসীমা বলে। মানুষের শ্রবণসীমা ২০ হার্জ থেকে ২০,০০০ হার্জ কম্পাংক পর্যন্ত বিস্তৃত, তবে ব্যক্তিভেদে এর ব্যাপক বৈচিত্র্য দেখা যায়।

বিজ্ঞানীরা বলেন, বিবর্তনের ফলে কমেছে মানুষের শ্রবণশক্তি। আমরা হাতির মত খুব অল্প বা বাদুড়ের মত অতি উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পাই না। কিন্তু অনেক প্রাণীর কানের নড়াচড়াই তাদের শ্রবণক্ষমতা বাড়ানোর কৌশল। এভাবে তারা বিপদ থেকে বাঁচে।

খরগোশ কান ঘোরাতে পারে ২৭০ ডিগ্রি
খরগোশ শব্দের দিকে তাদের কান ঘুরিয়ে নেয়। এতে করে তারা আক্রমণকারী প্রাণীর গতিবিধি বুঝতে পারে। আবার কানের নড়াচড়ার সঙ্গে তাদের মনোজগতও টের পাওয়া যায়। যেমন, তাদের দু’কান খাঁড়া মানে একেবারে মনোযোগ দিয়ে কিছু শুনছে। এক কান খাঁড়া ও এক কান শোয়ানো মানে শুনছে কিন্তু মনোযোগ নেই। পিঠের ওপর দু’কান পরস্পর স্পর্শ করে পড়ে থাকা মানে নিরুদ্বেগ সময় কাটানো, কিন্তু কান যদি পরস্পর স্পর্শ না করে, তার মানে ভয় পেয়েছে।

বিড়াল ও কুকুর খুব মনোযোগী
মানুষের ক্ষমতার চেয়ে উচ্চ কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায় কুকুর। তারা মনিবের পায়ের শব্দ আলাদা করতে পারে। বিড়াল আরও বেশি সংবেদনশীল। কুকুরের যেখানে ১৮টি কানের পেশি আছে, বিড়ালের আছে ৩০টি। এমনকি তারা কান ১৮০ ডিগ্রি ঘোরাতে পারে। তাই চুপ করে বিড়ালের পিছু নেবেন? তা সম্ভব নয়।

আলট্রাসনিক তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে বাদুড়
বাদুড় রাতে উড়ে বেড়ানোর সময় শব্দের প্রতিধ্বনি ব্যবহার করে। তাদের মুখ থেকে আলট্রাসনিক তরঙ্গদৈর্ঘ্য বের হয় এবং তা সামনে কোনো বস্তুর ওপর লেগে তা তাদের কানে ফেরত আসে। এতে বস্তুর অবস্থান ও আকার টের পায় তারা। বাদুড়ের কানে ২০টি পেশি আছে। এগুলো ব্যবহার করে তারা শব্দের প্রতিধ্বনির সূক্ষ্মতা যাচাই করে।

যার কান নেই, সেই শোনে সবচেয়ে ভালো
তুলনামূলক বড় আকারের মথগুলোর কান খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। কিন্তু এর শুনতে পাবার ক্ষমতা প্রাণীকুলে সেরা। তারা মানুষের চেয়ে দেড়শ’ গুণ ভালো শোনে। আর বাদুড়ের চেয়ে ১০০ হার্জ বেশি শুনতে পায়।

অন্য কীটগুলো তাদের শিকারিদের শুনতে পায়
গুবরে, ঝিঁঝিঁ বা মথ পোকাগুলোর আলট্রাসাউন্ড সংবেদনশীল শ্রবণক্ষমতা রয়েছে। এরা তাদের শিকারিদের শুনতে পায়। তখন শত্রুর হাত থেকে বাঁচতে এরা আঁকাবাঁকা দৌড়ে পালায় বা গোলগোল করে উড়ে। কোনো কোনোটি ভয় দেখাতে নানান শব্দও তৈরি করে।

চোয়াল দিয়ে শোনে ডলফিন
শুনতে হলে সবসময় কানের প্রয়োজন নেই। এর প্রমাণ ডলফিন। তারা বাদুড় ও তিমি মাছের মত পানির নীচে শব্দ তৈরি করে অপর বস্তু বা প্রাণীর অবস্থান ও আকার নির্ধারণ করে। কিন্তু সেই তথ্য সংগ্রহ করে চোয়াল ও দাঁত দিয়ে।

হাতি বজ্রধ্বনি টের পায়!
বিরাট কান দিয়ে হাতি বৃষ্টির আগেই মেঘের হালকা গর্জন টের পায়, যা মানুষের কান শুনতে পায় না। এগুলো নিম্ন কম্পাঙ্কের বা ইনফ্রাসাউন্ড তরঙ্গদৈর্ঘ্যের শব্দ। তাদের পায়ের স্নায়ুকোষ দিয়ে তারা মাটির নীচের কম্পন ও শব্দ টের পায়।

প্যাঁচা: প্রকৃতির ‘সার্ভেইলেন্স’ ক্যামেরা
প্যাঁচা শুধু রাতে দেখতেই পায়না, মাথাও ৩৬০ ডিগ্রি ঘোরাতে পারে। তাদের অসাধারণ শ্রবণক্ষমতাও আছে। তাদের দুই কান একরকম নয়। প্যাঁচা যখন উড়ে, তখন এক কান দিয়ে ওপরের শব্দ ও এক কান দিয়ে নীচেরটা শুনতে পায়। এতে তাদের শিকার করতে সুবিধা হয়।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মিথিলা হাতে উঠলো ভারতের ‘দাদাসাহেব ফালকে’ পুরস্কার May 04, 2024
img
আট দফা কমার পর বাড়লো স্বর্ণের দাম May 04, 2024
img
মুসলিম উম্মাহর একাত্মতা ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী May 04, 2024
img
সুন্দরবনের গহীনে ভয়াবহ আগুন May 04, 2024
img
সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার May 04, 2024
img
আইপিএলে প্লে অফে ওঠার দৌড়ে এগিয়ে যারা May 04, 2024
img
শিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে যাত্রীরা, ৬ ট্রেনের যাত্রা বাতিল May 04, 2024
img
সরকার গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিতে কাজ করছে: প্রতিমন্ত্রী May 04, 2024
img
শিক্ষকদের মর্যাদা ও বেতন বাড়াতে কাজ করছে সরকার : শিক্ষামন্ত্রী May 04, 2024
img
ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হামাস May 04, 2024