শিশুর ডেঙ্গু জ্বরে করণীয়

আমাদের দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া একটি রোগের নাম ডেঙ্গু জ্বর। প্রতিবছর জুন-জুলাই থেকে অক্টোবর-নভেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। আলোচিত এই রোগে বেশিরভাগই আক্রান্ত হয় শিশুরা। ডেঙ্গু জ্বর এডিস মশাবাহিত রোগ। এই মশা ঘরের আশেপাশে জমানো পানিতে জন্মায় এবং সাধারণত দিনের বেলা কামড়ায়। তবে শিশুদের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু জ্বর খুব বেশি মারাত্মক হয় না। মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজন সব সময় শিশুর জ্বর হলেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন, ডাক্তারের কাছে ছুটে যান। আবার অনেক সময় কোনো শিশু দু’তিন দিনের জ্বর নিয়ে এলে ডাক্তার ডেঙ্গু এন্টিবডি পরীক্ষা করাতে দেন, যা বেশ খরচ সাপেক্ষ এবং শিশুকে ক্লিনিক বা হাসপাতালে ভর্তি করান স্যালাইন বা রক্ত দেওয়ার জন্য। আসলে সময় মতো সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিলে ডেঙ্গু জ্বরে শিশুর ক্ষতি হয় না বা মৃত্যুও ঘটে না।

কীভাবে বুঝবেন শিশুর ডেঙ্গু জ্বর হয়েছে:

জ্বরের লক্ষণ অনুসারে এ জ্বরকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়।

প্রথম পর্যায়

তিন থেকে পাঁচ দিন পর্যন্ত জ্বর স্থায়ী হতে পারে।

লক্ষণগুলো হলো-

  • তীব্র জ্বর (১০৩ ডিগ্রী থেকে ১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট)।
  • তীব্র মাথাব্যথা, বিশেষ করে কপালের দিকে।
  • চোখের পেছনে ব্যথা, যা চোখের মণি ঘুরালে বাড়ে।
  • পুরো শরীর ব্যথা এবং গিঁটে ব্যথা।
  • বমিভাব বা বমি করা।

দ্বিতীয় পর্যায়

এ সময়ে জ্বর কমে যায়, কিন্তু রক্তক্ষরণ বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যা দু’তিন দিন পর্যন্ত থাকতে পারে। কখনো কখনো শুধু হাতের তালু, পায়ের তালু বা শরীরের ত্বকের নিচে লাল হয়ে যায় এবং চুলকায়।

শরীরের ভেতর রক্তক্ষরণ হওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার লক্ষণগুলো হলো-

  • তীব্র এবং একটানা পেট ব্যথা।
  • নাক-মুখ, দাঁতের মাড়ি বা ত্বকের নিচে রক্তক্ষরণ।
  • বারবার বমি এবং সঙ্গে রক্ত যাওয়া।
  • আলকাতরার মতো পায়খানা।
  • খুব বেশি পিপাসা পাওয়া বা জিহ্বা শুকিয়ে যাওয়া।
  • প্রস্রাব কমে যাওয়া।
  • জ্বরের সঙ্গে শরীরে লাল লাল দাগ দেখা যাওয়া।
  • চোখের সাদা অংশে রক্ত জমাট বেধে যাওয়া।
  • শরীর ঠাণ্ডা বা ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া।
  • অতিরিক্ত ঘাম হওয়া।

বিশেষ লক্ষণগুলো হলো-

  • ঘুম ঘুম ভাব।
  • একটানা কান্না।
  • শ্বাসকষ্ট।

এসব লক্ষণের যে কোনো একটি দেখা গেলেই শিশুকে দ্রুত ডাক্তার দেখান বা হাসপাতালে নিয়ে যান।

তৃতীয় পর্যায়

অল্প ক’দিনের মধ্যে শিশু ভালো হয়ে যায়। যদিও শরীরে দুর্বল ভাবটা থেকেই যায় তারপরেও রোগী খেতে পারে, চলাফেরা করতে পারে। সব মিলিয়ে পুরো অসুস্থতার সময়টা ৭ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।

আপনার করণীয়

  • শরীরের তাপমাত্রা ১০১ ডিগ্রী ফারেনহাইটের নিচে রাখতে চেষ্টা করুন এবং জ্বর কমানোর জন্য শুধু প্যারাসিটামল ব্যবহার করুন (দিনে চার বারের বেশি নয়)। বারবার কাপড় ভিজিয়ে শরীর মুছে দিন। আইবুপ্রুফেন, এসপিরিন, ডাইক্লোফেন জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করবেন না। এগুলো রক্তক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়।
  • সব জ্বরে বিশেষ করে ডেঙ্গু জ্বর সন্দেহ হলে শিশুকে বেশি করে পানি বা পানি জাতীয় খাবার দিন, যেমন- খাবার স্যালাইন, ডাব, স্যুপ, দুধ, ফলের রস এবং এসবের সঙ্গে অন্যান্য খাবার দিন।
  • বারবার বমি হলে হাসপাতালে নিয়ে যান।
  • রক্তক্ষরণজনিত কোনো সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিন।
  • রক্ত পরীক্ষা, যার মাধ্যমে ডেঙ্গু এন্টিবডি দেখা যায় সেগুলো ব্যয় সাপেক্ষ এবং শিশুর চিকিৎসার জন্য দরকার নেই, তা না করে সাধারণ প্লেটলেট কাউন্ট এবং পিসিভি পরীক্ষা করাই যথেষ্ট।
  • মা-বাবা বা অভিভাবক হিসেবে নিজে ঘাবড়ে যাবেন না বা শিশুর সামনে তা প্রকাশ করবেন না।
  • মশা কামড়ালেই ডেঙ্গু রোগ হয় না।
  • সব জ্বর বিশেষ করে তীব্র জ্বরই ডেঙ্গু নয়, যে কোনো ভাইরাস জ্বরে তীব্র জ্বর হতে পারে। 
  • সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরে সর্দি-কাশি থাকে না।
  • সব ডেঙ্গু জ্বরে স্যালাইন বা রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

 

টাইমস/এসই/এইচইউ

Share this news on: