নতুন সমীক্ষায় দেখা গেছে কোভিড-১৯ মহামারী চলাকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রতি ৪ জনের ১ জন আত্মহত্যা করার কথা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করেছেন। ১৪ থেকে ৩০ মধ্যে পরিচালিত এই সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের শেষ ৩০ দিনের অভিজ্ঞতা লিপিবদ্ধ করা হয়।
ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশন কর্তৃপক্ষের জরিপ থেকে নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিপর্যয় সংক্রান্ত এসব তথ্য উঠে এসেছে। ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৫,৪১২ জন প্রাপ্তবয়স্ক মার্কিন নাগরিক এই জরিপে অংশগ্রহণ করেছেন।
কোভিড-১৯ মহামারীর প্রথম দিনগুলোতে মানুষ একে অপরকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসছিল। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেও পরস্পরের যোগাযোগ বজায় রেখেছে।
এমনকি কয়েক মাসেও যেসব বন্ধু বা আত্মীয়-স্বজনদের সাথে একবার কথা হতো না তাদের সাথে ভিডিও কল করে অনেকে কথা বলেছে। কিন্তু এই আন্তর্জাতিক সঙ্কট অব্যাহত রয়েছে এবং সাধারণ মানুষ নতুন এই বাস্তবতার সাথে খাপ খাইয়ে উঠতে বিভিন্ন ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
সিডিসি জানিয়েছে, গড় হিসেবে সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী মার্কিন জনসংখ্যার ১১ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি জরিপে অংশ নেয়ার ৩০ দিনের মধ্যে আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন। তবে কৃষ্ণাঙ্গ ও হিস্পানিক হিসাবে চিহ্নিতদের মধ্যে এই সংখ্যাটি আরো বেশি। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ১৯ শতাংশ হিস্পানিক এবং ১৫ শতাংশ কৃষ্ণাঙ্গ আত্মঘাতী হবার কথা চিন্তা করেছেন।
সিডিসি আরো জানায়, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় উদ্বেগের মাত্রা প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ফলাফল থেকে বোঝা যাচ্ছে আমেরিকানরা ইতিমধ্যে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।
কোভিড-১৯ মহামারী একটি নতুন ধরণের চ্যালেঞ্জ
আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের হেলথ কেয়ার ইনোভেশনের সিনিয়র ডিরেক্টর ভাইল রাইট বলেন, “আগের ঘটনাগুলোর একটি শুরু, মধ্য এবং শেষ ছিল। কিন্তু জনগণ বর্তমান পরিস্থিতি থেকে বেড়িয়ে আসতে পারছে না।”
রাইটের মতে, কোভিড-১৯ মহামারীটি ৯/১১ বা হারিকেনের মতো কোনো ঘটনায় নয়। এটি কোনো নির্দিষ্ট সময় এবং নির্দিষ্ট জায়গাতেও সীমাবদ্ধ নয়। এটি সর্বত্রই রয়েছে এবং কবে শেষ হবে সে বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট অনুমানও করা যাচ্ছে না।
মহামারীর কারণে অর্থনীতি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, চাকুরী, শিক্ষা সবকিছুই ব্যাহত হচ্ছে। মানুষ নিজের ও পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক নিরাপত্তা ও ভবিষ্যত নিয়ে মারাত্মক উদ্বেগের সাথে দিন কাটাচ্ছে।
সিডিসির রিপোর্টে বলা হয়েছে, যারা সম্প্রতি মানসিক সমস্যার জন্য চিকিত্সা করিয়েছিলেন এই পরিস্থিতিতে তাদের অবস্থা বেশি শোচনীয়। বিশেষ করে তরুণদের উপর অস্বাভাবিকরকম মানসিক চাপ পড়ছে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
তবে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয় মানসিক স্বাস্থ্যের এমন বিপর্যয় বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই দেখা যেতে পারে। কারণ কোভিড-১৯ মহামারীর ফলে প্রায় সর্বত্রই, সকল সমাজেই অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে এবং উদ্বেগ বাড়ছে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন।
টাইমস/এনজে